ভাঙ্গা ভাঙ্গা ম্যানুয়্যাল টাইপ রাইটার না। আমার অনেক মূল্যবান লেখা। তখনও কম্পিউটার সহজলভ্য ছিলোনা। তাই শেষ পছন্দ ইলেক্ট্রিক টাইপ রাইটার। ঝকঝকে হরফে লেখা হলো সেই লেখা। কত যে মিনতি টাইপিস্টকে। “ভাই, এটা কেমন যেন লাগছে। একটু মুছে আবার লিখবেন?” অথবা, “ডাবল এস্ নাতো!!!” “একটা এস্ হবে শুধু”, আর সে কি বকা! আসলে লেখাটা একটা চিঠি। তাই শেষতক সাদা একটা খামে ভরে দিলাম পোস্ট করে। তখন সরকারী পোস্ট অফিসই ভরসা।
শুরু হলো আমার অপেক্ষার পালা। দিন যায়, সপ্তাহ যায়। মাস যায়। আমার চিঠির কোনো উত্তর আসে না। একদিন স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগ রাখতে না রাখতেই আপু আসলো সামনে। হাতে একটা সাদা খাম। বলে কিনা আমার নামে চিঠি! দেখলাম, সেই মানুষটির নাম। যাকে আমি চিঠি লিখেছিলাম! একটা সাদা কাগজে প্রিন্ট করা অনেক আবেগ মেশানো লেখা চিঠি। সাথে একটা রঙ্গীন ছবি। অনেক বয়স তখন ওনার। গলায় ঝোলানো বীর প্রতীক পদক। বাংলায় লেখা পদকটিতে ‘বাংলাদেশ’।
সেই ব্যাক্তিটি হলেন, ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র বিদেশী খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। উইলহেলমাস এ এস্ ওডারল্যান্ড, বীর প্রতীক। এখন চিন্তাভাবনায় অনেক পরিনত হয়েছি ওই বয়সের তুলনায়। অনেক কিছু বুঝি। শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনা। একজন মানুষ কিসের তাড়নায় সম্পূর্ন ভিন্ন একটি দেশের মুক্তির জন্য লড়তে পারে? আর আমি এই দেশে জন্মে কতটা কি করতে পারছি বা করতে চাচ্ছি বা করছি?
* সেই সময়ও যে লেখালেখি করতাম, মনেও ছিলনা। ১৯৯৭-তে ইত্তেফাক-এ কঁচিকাঁচার আসরে প্রকাশিত হয়েছিল আমার একটা লেখা। ওনাকে নিয়েই। সেটাও দিলাম ছবি তুলে।
সেই চিঠি
এই ছবিটা কয়জনের কাছে আছে, জানিনা। ওয়েবে কোথাও দেখিনি এখনও।
আমার ঠিকানাটা আমার এনভেলপ থেকেই কেটে নি্যেছিলেন। আবার নিজের হাতে লিখেছেন, বাংলাদেশ।
কঁচিকাঁচার আসরের সেই লেখা।