[ফোব্স ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে সালমান খান ]
আমরা চারজন (একজন সিরিয়ান , একজন ইন্ডিয়ান আর একজন পাকিস্তানি) বসে আড্ডা দিচ্ছি। আড্ডার নিদ্দিষ্ট কোনো বিষয় বস্তু নাই। সিরিয়ার যুদ্ধ ,পাকিস্তানের বোম ব্লাস্ট , ভারতের নিম্ন গোত্র সমস্যা এবং বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সহ বিভিন্ন সেলিব্রেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। হটাৎ করে সিরিয়ান বলছে আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে সালমান খান একজন। অনলাইন শিক্ষায় এক বিপ্লবাত্মক ধারণা এনেছেন সালমান খান। লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী তাঁর, গোটা পৃথিবী জুড়ে। "সকলের জন্য, সব জায়গায় বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষাদান" স্লোগানে এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে। প্রতিমাসে ৬ মিলিয়ন (ইউনিক) ছাত্র তার ওয়েবসাইট থেকে সাহায্য নিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল সালমান খান। খান একাডেমি প্রতি মাসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ৩০ কোটিরও বেশি পাঠ প্রায় ১ কোটি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।অসাধারণ সব পরিকল্পনা জনসমক্ষে আনার জন্য গুগল তাদের প্রজেক্ট 'টেন টু দ্য হান্ড্রেড'-এ খান একাডেমীকে বিজয়ী হিসেবে ২ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার প্রদান করে।
সিরিয়ান এর কাছ থেকে এত এত ভূয়সী প্রশংসা শুনে গর্বে প্রাণটা ভরে গেলো। আমি বললাম সালমান খান "বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান"।
অমনি পাকিস্তানি চিল্লানি দিয়ে বলে সালমান খান "পাকিস্তানী আমেরিকান"
আর ইন্ডিয়ান বলে উঠলো আমি উইকিপিডিয়াতে দেখছি সে ভারতীয় ইথ্নিক।
সিরিয়ান আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলে তোমরা কি মজা করছ আমার সাথে। একজন মানুষ কিভাবে তিন দেশের হতে পারে? আমরা আমাদের দাবীতে অটল। আমি ভাবছি বাকি দুজন আমার সাথে ফান করছে কিন্তু ওরা বলছে ওরা প্রমান দিতে না পারলে লাঞ্চ করাবে । সিরিয়ান বলল তোমরা কেউ গুগলের সাহায্য নিতে পারবে না। আগে তোমরা তোমাদের প্রমাণ গুলো বলো আর যে দুজন প্রমান দিতে পারবে না তারা সবাইকে লাঞ্চ করাবে। আমরা তিন জনই রাজি হয়ে গেলাম এবং তিনজনই ১০০% নিশ্চিত আমাদের স্ব স্ব দাবীর পক্ষে। পাকিস্তানি একটু বেশিই উচ্ছসিত কারণ সালমান খানকে দেখতে নাকি পাকিস্তানিদের মতো লাগে।
আমি, পাকিস্তানিকে বললাম তুমি তো হারবা, তোমার টাকা আগেই বের করে রাখো। ক্রেডিট কার্ড বের করে বলে বাকি দুজন ও টাকা বের করো। আমি বললাম তোমার ক্রেডিট কার্ডে তো টাকা নাই। সেতো পারলে খাইয়া ফেলায় এমন ভাব।সে তো দেখি গরগর করে ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত বলে দিচ্ছে। [রাগী মানুষকে রাগানোর মধ্যে আলাদা একটা মজা আছে আর আমি সযতনে সেটাই করে যাচ্ছি। ] সিরিয়ান বলল তোমরা তোমাদের পক্ষের যুক্তি গুলো বলো।
ইন্ডিয়ান: আমি উইকিপিডিয়াতে দেখছি সে ভারতীয়। তার মা ভারতীয় এবং ওর বয়স যখন তিন বছর তখন ওর বাবা মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। সে মামাদের কাছে আমেরিকাতে মানুষ হয়েছে তবে ওর বাবার বিষয়ে কিছু জানি না।
পাকিস্তানি: আমি তাকে পরিবারসহ পাকিস্তানে যেতে দেখেছি (মিডিয়ায়)। সালমান খান যখন পাকিস্তানে আসে আমাদের মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করে। আমি যতদুর জানি সালমান খানের পরিবারের আদি নিবাস পাকিস্তানের করাচিতে। তার বাবা মা সম্পর্কে জানি না।
আমি : আমি তো ওদের যুক্তি শুনে পুরাই থ ! আমি এসব কোনদিনই শুনি নি।আমাদের প্রত্রিকায় দেখেছি "প্রবাসে বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী গুণীজনদের মধ্যে সালমান খান একজন"। তার সাক্ষাত্কার দেখিছিলাম, তিনি সব টিউটোরিয়াল বাংলায় করতে চান।তিনি বলছিলেন অনুবাদের কাছে বাংলা ভাষা আমার কাছে অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। [তিনি একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত, সত্যি বলতে তার পরিবার সম্পর্কে আমিও তেমন কিছু জানতাম না আর এই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে চিন্তা ও করিনি ]
ওদের শক্তিশালী যুক্তির কাছে আমার যুক্তি খুবই নগন্য। এমন একজন বিশ্ব-মানবতাবাদী মানুষ সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না ভেবে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছিলো। সিরিয়ান এবার সবাইকে ইন্টারনেট থেকে প্রমান দেখাতে বলল। যে যার মোবাইল থেকে নেট সার্চ করছি। নেট থেকে যে তথ্য পেলাম তা দেখে আমার সবাই অবাক আর সপ্রশংস দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।
সালমান খানের বাবা ডা. ফখরুল আমিন খানের বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে, মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাবাকে হারান। তাঁর মা মাসুদা খানের বাড়ি কোলকাতা ইন্ডিয়া এবং বিয়ে করেছেন 'পাকিস্তানী আমেরিকান' ডা. উমাইমা মার্ভিকে। সালমান খানের পরিবারের আদি নিবাস পাকিস্তানের করাচিতে এমন দাবির পক্ষে সত্যতা খুঁজে পাইনি। সালমান খান MIT থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক-স্নাতকোত্তর এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ সম্পূর্ণ করেন। হার্ভার্ডে থাকার সময় উমাইমার সাথে পরিচয় থেকে প্রনয়। উমাইমা ও সে সময় হার্ভার্ডে মেডিকেলে পড়তেন। ইমরান এবং দিয়া নামে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
[ উমাইমা -সালমান খান ]
সিরিয়ান : বিস্মিত সিরিয়ান বলে এটা কি করে সম্ভব ? একদেশ তার দাদাবাড়ি আরেকদেশ তার নানাবাড়ি আর পাশের দেশ পাকিস্তান তার শশুরবাড়ি। কি কাকতালীয় ব্যাপার আমরা আগে কেউই জানতাম না। প্রতিবেশী তিন দেশের সঙ্গে সুন্দর সংযোগ স্থাপন করেছেন। তোমরা কেউই বাজিতে হারোনি। তিনি একজন আন্তর্জাতিক নাগরিক।
মানবতাবাদীরা জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকেন। বিশ্বজুড়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি এখন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।গোটা বিশ্বের জন্য এক ভার্চুয়াল স্কুল । বিশ্ব মানবতাবাদী সালমান খানের এমন কীর্তি সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। বিশ্ব মানবতাবাদের জয় হউক !!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯