সেই থেকে আমি রক্তপাত দেখলে মুখ ফিরিয়ে নিই,
অরুণগর্ভ হতে অভ্যূদয়ী সূর্য আলোকিত হওয়ার আগে
আকস্মিক তোমাকে আবিস্কার করলাম অন্তরীক্ষে,
স্পন্দিত তুমি, অন্তরে প্রথম পুরুষ,
কররেখায় জল হলাম লজ্জিত অঙ্গদে।
আমার যে জায়গাটায় জ্যোৎস্না পড়েছিল নিষ্পাপ
রক্তকণিকায় পরম মরমে,
পুজারীবেশে আধ্যাতিকতার মন্ত্র দিয়েছিলে-
সমুদ্রযাত্রায় এখন আমরা দুজন কাঞ্চন আর কামিনী।
শতাব্দীর মূর্ত চিত্রকলা খসে গেল অদ্ভুত প্রক্রিয়ায়
মানুষ তাকাল মানুষের দিকে
ভালবাসা থাক বা না থাক।
রমণীর ভাষা বুঝতে তৃষ্ণা জেগে ওঠে বাসনার রক্তবীজে
দেহসিনীর অলি-গলিতে।
জন্ম-গন্ধ মাখা ঋতুরঙিলা নারীর নাভি খন্ডিত হল
গর্ভপথের অরণ্যময় জংঘা ধরে রক্তবীজ মৈথুনে।
তারপর --------
পুরনো ইতিহাস ফিরে এলো মর্ত্যলোকে,
আড়মোড়া ভাঙল মোহান্ধ অসুর, নারীর
রমণীয় ভাষা হলো দুরূহ।
লাবণ্য ছড়িয়ে যে তুমি হেঁটে এসেছিলে
সর্বাঙ্গে নীল ক্ষত-তপ্ত,
লাল লাভা নিযে কাটিয়েছিলে রঙিন গুহায়
ফুলেদের রক্তস্রাব মেখে, বুঝিনি সর্বনাশা,
আগুন জ্বেলেছিলে, জ্বালিয়েছিলে।
ততক্ষণে আত্মার বিধ্বস্ত হওয়ার কথা জেনে গিয়েছি,
কুন্ডলী ছেড়ে আমাকে দিব্যি চেটেপুটে
অধর-ওষ্ঠ দহন-দাহ্যে দংশিত করে
মহাজাগতিক নৈঃশব্দ অন্ধকারে ডুবিয়ে দিলে,
প্রাচীন দুটি দাঁত সেই অন্ধকার গহ্বরে জেগে থাকে,
সেই থেকে রক্তপাত দেখলে আমি আৎকে উঠি।
তারপর আরো কত রাত্রি নামে
সূচাগ্র মেদেনীর প্রাচীন সড়কে
আরতীর প্রদীপ, ধূপের ধোঁয়ায় মন্দিরের দেবদাসীরা
কামজলীলা শেষে আঁচলে জড়িয়ে নেয় প্রগাঢ় রাত্রি,
আর আমি, জীবনের অনিঃশেষ ক্লান্তিতে বিপর্যস্ত
আলো-আঁধারের ঘূর্ণিপাকে, অন্তরের নিভৃতে
পাপস্থ রক্তকণিকার অট্টহাসিতে কেঁপে উঠি, কেঁদে উঠি
বন্ধ্যা বৃত্তের গভীরে একা একা দগ্ধ হই নিজস্ব নির্জনে,
এখন তাই কোন রক্তপাত দেখলে আমি কেঁপে উঠি, কেঁদে উঠি।