জুম্মার নাামাজের পূর্বে ইমাম সাহেবগন যে বয়ান বা ওয়াজ করেন, তা অনেক সময় শুনতে ভালো লাগে, আবার অনেক সময় খুব বিরক্তের সৃষ্টি করে। আজ আমার শেষেরটা হয়েছে। এমনিতেই হুজুরদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা সবাই বেহেশ্তের টিকেট হাতে নিয়ে বসে আছে, আর আম মুসল্লিরা সবাই দোযখে এক পা দিয়ে আছে, তিনি টেনে হিচড়ে তাদেরকে বেহেশ্তে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
আজকে হুজুর সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন পাঠের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে এমন কিছু উদাহরণ দিলেন, তাতে ৯৯ শতাংশ মুসল্লিই বুঝে গেছেন যে, তাদের নামাজ কালাম কোরআন তেলাওয়াৎ সবই বৃথা। কারণ আরবী উচ্চারন এক্কেবারে আরবীদের মতো ছহিহ শুদ্ধ না হলেই সুরা কেরাতের বাংলা অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, আর সেই তেলাওয়াৎ দিয়ে কোন পূণ্যই হয় না ....বরং পাপ হয়।আল্লাহর প্রশংসার বদলে আল্লাহকে গালাগালি করা হয়।
এই বিষয়ে আমার দুটি কথা আছে। আমি যেটা নামাজে দাড়িয়ে আল্লাহর সামনে পড়ছি, সেটা তো নামাজ আদায়ের নিয়েতেই করছি। আল্লাহকে গালাগলি করতে চাইলে আমি নামাজে দাড়াবো কেনো? আল্লাহ কি তার বান্দার অন্তর জানেন না? তিনি কি অন্তরযামী নন? তিনি কি বাংলায় কি অর্থ দাড়ালো সেটা শুনে বান্দাকে মূল্যায়ন করবেন? হ্যা , সহিহ শুদ্ধ ভাবে পড়ার ব্যপারে তাগিদ অবশ্যই দিতে হবে, তার মানে এই না যে, সাধারণ মুসল্লিরা একেবারে কোন পর্যায়েই পড়ে না, তা তো নয়!
একবার এক মরু বেদূঈনকে একজন সাহাবি গলায় গামছা বেধে রাসুল (সাঃ) এঁর সামনে উপস্থিত করে বল্লেন, হুজুর এই লোক বিকৃতভাবে কোরআন তেলাওয়াৎ করছে। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ঐ বেদুইনকে কোরআন তেলাওয়াৎ করতে বল্লেন। উক্ত বেদুঈণ রাসুলের সামনে কোরআন তেলাওয়াৎ করলে রাসুল তার তেলাওয়াৎকে শুদ্ধ হিসাবে মত দিলেন এবং তাকে ছেড়ে দিতে বল্লেন।
একবার এক পাখি গাছে বসে ইয়া কাড়িমু! ইয়া কাড়িমু!! বলে জিকির করছিলো। একজন নবী (আঃ) সেটি শুনতে পেরে পাখিকে খুব করে ধমক দিয়ে বল্লেন, ইয়া কারিমু হবে, তুমি কাড়িমু বলছ কেন? নবী(আঃ) এর ধমক শুনে পাখির জিকির বন্ধ হয়ে গলো। তখনই আল্লাহ ওহির মারফত তার নবী(আঃ)কে জানালেন, হে নবী! সে আমাকে কি নামে ডাকছে, সেটা তো আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। তুমি ধমক দিয়ে কেন তার জিকির থামালে?
আল্লাহ দেখেন পরিশুদ্ধ অন্তর। মুখের উচ্চারণের গুরুত্ব আছে লোক সমাজে, কিন্তু অন্তর্যামরি কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো বান্দার অন্তর কি বলে? হযরত বেলাল (রাঃ) এতোই অত্যাচার সয়েছিলেন যে, তিনি সহিহ ভাবে কিছু কিছু আরবী শব্দ উচ্চারণ করতে পারতেন না। তাই লোকজন তাকে বাদ দিয়ে অন্য একজন সাহাবকে দিয়ে আজান দেয়াতে রাসুলকে অনুরোধ করলেন। রাসুল তাদের সথায় সম্মত হয়ে অন্য একজন সাহাবিকে দিয়ে আজান দেয়ালেন যার গলার আওয়াজ সুস্পষ্ট, উচ্চারণ সহিহ।। পরবর্তিতে আল্লাহ নবীজি (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করলেন হে নবী ! আজ আপনার মসজিদে নববীতে কি আজান হয়নি? আল্লাহর হাবিব (সাঃ) বলেন হয়েছে তো। আল্লাহ বলেন ঐ আজান আমার আরশে পৌছয়নি ..... ! নবীজি (সাঃ) যা বোঝার বুঝে নিলেন। পরবর্তিতে নবীর জীবদ্দশায় হযরত বেলাল (রাঃ ছাড়া আর কেউই আজান দেয়নি মদিনা শরীফের মসজিদে নববীতে।
মসজিদের মিম্বরে বসা মানেই বেহেশতের টিকেট হাতে পাওয়া নয়.... এর গুরু দায়িত্ব বহন করা এতো সম্তা নয় ..........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৩২