গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলাম। সেই কাহিনী এখনো লিখে শেষ করতে পারিনি, তাই ব্লগে শেয়ার করতে দেরী হচ্ছে। কিন্তু তার আগেই একটি জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে আসায় বিষয়টি সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।
বিষয়টি হলো আমি ভারত ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত এন্ডোর্সড ডলার সহ এমেক্স কার্ড সাথে রেখেছিলাম। কিন্তু আমি দিল্লী, আগ্রা, আজমীর, জয়পুর কোলকাতায় যে সকল থ্রিষ্টার মানের হোটেলে থেকেছি, যেখানে যেখানে শপিং করেছি, খেয়েছি, সেখানে কোথাও এমেক্স কার্ড ব্যবহারের সুবিধা পাইনি। ফলে আমাকে বিভিন্ন লোকেশনে এইচ ডিএফসি ব্যাংক এর বুথ থেকে ভারতীয় কারেন্সি তুলে তুলে খরচ করতে হয়েছে, যা ছিলো সত্যি বিড়ম্বনার। তবে এই বিড়ম্বনার এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটেনি।
১ তারিখ, ২০১৬তে আমি দেশে ফিরে আসি। ৩ জানুয়ারী, ২০১৬তে আমার মোবাইলে মেসেজ আসে যে আমার টোটাল ডিউজ ৩৩৫ ইউএস ডলার এবং উক্ত মাসে আমি ৫০০০ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৬৪ ডলার পে করি। পরবর্তিতে এই ফেব্রুয়ারী মাসের ১ তারিখে আমার কাছে আবারো মেসেজ আসে যে আমার টোটাল ডিউজ ৪৪৩ ইউএস ডলার এবং এই মাসে ন্যুনতম ৫০ ডলার পেমেন্ট করতে হবে। আমি প্রথমে গুরুত্ব দেই নাই। পরে পূর্বের মাসের মেসেজটি নজরে আসতেই টনক নড়ে উঠলো। ঘটনা কি?? জানুয়ারী মাসে মেসেজ আসলো ৩৩৫ ইউএস ডলার, ৫০ ডলারের বেশী পরিশোধ করলাম, সেখানে ডিউজ না কমে ১০৭ ডলার বেড়ে গেলো কিভাবে? আমি তো ৩১ ডিসেম্বরের পরে কার্ড দিয়ে বুথ থেকে রুপিও তুলতে পারি নাই, যেহেতু আমার কার্ডটি ৩১শে জানুয়ারী,২০১৫ পর্যন্ত এন্ডোর্স করা ছিলো। সুতরাং ঘটনা কি?
টাকা নিয়ে গেলাম পান্থপথের সিটি ব্যাংকের এমেক্স কার্ড কাউন্টারে। কাউন্টারে বসা ভদ্রলোক কম্পিউটার টিপেটুপে বল্লো "আপনি কি ৩ জানুয়ারী,২০১৬তে এই কার্ড দিয়ে ১০০ ডলার খরচ করেছিলেন"? আমি বল্লাম "কিভাবে? আমি তো দেশেই ফিরে আসলাম ১ তারিখে, এবং ফিরেই আমি ফরেন পার্ট ক্লোজ করে দেয়ার জন্য রিকোয়েষ্ট করেছি, দ্বিতীয়ত আমি তো ১ তারিখেও ভারতে এই কার্ড ব্যবহার করতে গিয়েও পারিনি, কেননা আমার এই কার্ড ৩১শে জানুয়ারী,২০১৫ পর্যন্ত এন্ডোর্স করা ছিলো। বিগবাজারে এটি ব্যবহারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। পরে ডলার ভাঙিয়ে বিল মিটিয়েছি।" তখন সে বল্লো "দয়া করে কাষ্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়ার পরামর্শ দিলো"। তার কম্পিউটার থেকে নাকি কেন এমন হলো তার কোন যুক্তি সংগত তথ্য মিলছে না। আমার হাতে সময় কম ছিলো, তাই পুরো ৪৪৪ ডলার সম পরিমান টাকাই পরিশোধ করে ব্যাংক থেকে ফিরে এলাম। হাতে সময় নিয়ে ফোন দিলাম কাষ্টমার কেয়ারে।
সেখান থেকে একজন ভদ্র মহিলা সব শুনে বল্লেন, হিসাব তো ঠিকই আছে। আমি অবশ্য এইচ এফ ডি সি ব্যাং থেকে রুপি উত্তোলোনের বিষয়টি না বল্লেও উনি নিজেই বল্লেন " আপনি এইচ ডি এফ সি-র বুথ থেকে রুপি উত্তোলোন করেছিলেন না "? আমি বল্লাম "হ্যা ... তুলেছিলাম তো। বাধ্য হয়ে, কারণ এমেক্স কার্ডের কোন এক্সেসই নাই ভারতে, অর্থাৎ আমি যেখানে যেখানে গিয়েছি, তারা চায় ভিসা কার্ড না হয় মাষ্টার কার্ড! তো আমি কি করবো বলেন? বুথ থেকে টাকা না তুলে আমার উপায় ছিলো না ...."। উনি বল্লেন, আমার উত্তোলিত টাকা পুরোপুরি পরিশোধ না হওয়া অব্দি প্রতিদিন ওটার উপরে সুদ ক্যালকুলেট হচ্ছে, আর সব মিলিয়ে আমার ডিউজ বেড়ে দাড়িয়েছে ৪৪৪ ডলার। আমি ত থ ! বলে কি? আমি বল্লাম , "তাহলে আপনারা যে ন্যুনতম ৫০ ডলার পে করতে হবে বলে মেসেজ করেছেন, সেটা কি"? উনি বল্লেন "প্রতি মাসে ৫০ ডলার করে পরিোশধ করলে আপনার কার্ড সচল থাকবে বন্ধ হবে না, কিন্তু আপনার ডিউজ এর উপর ইন্টারেষ্ট বাড়তেই থাকবে"। আমি বল্লাম "তাহলে উপায় ? প্রতি মাসে এভাবে ইন্টারেষ্ট বাড়তে থাকলে আর আমি যদি ৫০ ডলার করে প্রতি মাসে শোধ করতে থাকি, তবে তো জীবনেও আমার ঋণ শোধ হবে না"....!! তখন তিনি বল্লেন, "এর জন্যই আপনার উচিৎ দ্রুত পুরো পেমেন্ট শোধ করে দেয়া .... "! আমি বল্লাম "জ্বি, আমি তাই আজকে করে এসেছি"। তখন সে বল্লো "তাহলে রাত ১১টার পরে আপডেট পাবেন ...."।
বিষয়টি হয়তো অনেকেই জানেন , কিন্তু আমার মতো হাদারামরা হয়তো জানেন না, মানুষকে ফতুর করার কত রকম ফন্দি ফিকির যে মানুরষের জানা আছে, সেটা গেড়াকলে না পড়লে বোঝা যায় না ......! সুতরাং যারা দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে চান, তারা বিষয়টি মাথায় রাখবেন .........!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৪