জুম চাষ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি।পাহাড়ের কোনো এক খন্ড টিলার জঙ্গল কেটে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পর আগাছা পরিষ্কার করে তাতে বিভিন্ন রকম ধান, মরিছ, হলুদ, বিভিন্ন রকম ফল, শাক-সবজি চাষাবাদ করা হয় তাকে জুম চাষ বলে।
এই পোষ্ট লেখার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম জুম পরিবেশের ক্ষতি করে।কোনো উপকারই করে না।বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ‘পাহাড়কে বাঁচতে দিন’, ‘ঐতিহ্য সংস্কৃতির আর জীবন বোধের নিবিড়তায় যুক্ত যে চাষাবাদ প্রণালী তার ফলে পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে’, ‘পাহাড়ে পাহাড়ে জুম, বিরান কান্তার, ইত্যাদি শিরোনামের লেখা পড়ে যে কারো তাই ধারনা হওয়াই স্বাভাবিক। একদমই যে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই তা কিন্তু নয়।যেমন কাটা জঙ্গল এ আগুন দিলে সেই আগুন আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে সবুজ বন উজাড় করে। জুমের ফসল পুরাই বৃষ্টির পানি নির্ভর, দেখা গেল জংগল পুড়িয়ে জুমিয়ারা(যারা জুম চাষ করে) ফসল বুনে এল আর বৃষ্টি হল না।ফলাফল ফসলও হল না সাথে পাহাড়ও ন্যাড়া। আপরিকল্পিত পাহাড় কাটলে পাহাড়ের মাটিও ক্ষয় হয়।
জুমীয়দের কথা বিবেচনা করে পাহাড়ের জন্য বিকল্প চাষ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তার নাম ম্যাথ (Modern Agricultural Technology in the Hill) পদ্ধতি।
ম্যাথ পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে ফসলের চাষ করতে হয়। প্রথম বৃষ্টির পরপরই দ্রুত বর্ধনশীল ফসল-পেঁপে, কলা, পেয়ারা, লেবু, আম, সফেদা, জাম্বুরা, কমলার পাশাপাশি কিছু বনজ চারা লাগিয়ে দিতে হয়। সময় উপযোগী-আড়াআড়িভাবে আনারস এবং অড়হর লাগাতে হয়। তা ছাড়া, মৌসুমভিত্তিক ধান, কাউন, ভুট্টা, তিল, কচু, ঢ্যাঁড়স, বরবটি, টমেটো, বেগুন ও মরিচের চাষাবাদ করা যেতে পারে। ম্যাথ পদ্ধতিতে চাষ করলে কৃষকরা সবজির দাম তুলনামূলক বেশি পাবে। কেননা, এ সবজি অমৌসুমে পাওয়া যায়। এতে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে, ভূমির ক্ষয়রোধ হবে। স্থায়ীভাবে বনায়ন সৃষ্টির ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও রোধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট মহল যদি পাহাড়ে চাষাবাদে বরাদ্দ অর্থ নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থার পরির্বতনের কাজে ব্যবহার না করে জুমিয়াদের অবস্থার পরিবর্তনে ব্যবহার করতেন আমার দেশের পাহাড় হত অপার সম্ভাবনার ভান্ডার।
আসুন এখন দেখি পাহাড় কাটায়ও কত শিল্প থাকতে পারে আর সেই শিল্পের সাথে ফসলের রং মিলে মিশে কতটা নৈসর্গিক হতে পারে।
খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা উপজেলা।
কাপ্তাইয়ের ব্যাঙছড়ি।
বান্দরবনের এক জুম ঘর।
জাপানের একটি পাহাড়।এখানে ধানই বেশি উৎপন্ন হয়।
ডংচুয়ান,ইউন্নান, চীন।
সৃষ্টিকর্তার কি অপার মহীমা! এখানকার মাটিই লাল।
তেগালালাং,ইন্দোনেশিয়া।
দুলাখা,নেপাল
লংসেং,চীন।
ইয়নিয়ং,চীন।
লংসেং,চীন।
ইয়নইয়ং,চীন।
ভিয়েতনাম।
আচ্ছা... আমার দেশ জুম চাষে পিছিয়ে কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৮