গত ২ ফেব্রুয়ারী প্রথম আলোর ছুটির দিনে বাহাদুর হান্নান শিরনামে একটি লেখা দেখলাম । হান্নান একজন সাধারন হকার,তবে বর্তমান সময়ে অনেক আলোচিত একজন বাক্তি ।কিছু দিন আগে মানিকগঞে চলন্ত বাসে একটি মেয়ে ধর্ষিত হয় ।তখন হান্নান তাকে উদ্ধার করেন এবং অপরাধী দের ধরিয়ে দিতে সহয়তা করেন।এরপর থেকে তার নামের আগে বসে গেছে বাহাদুর খেতাব।
আসলে আমাদের সমাজে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না , অন্যায় দেখলে খরগোশের মত চোখ বন্ধ করে থাকাটাই এখন স্বাভাবিক । তাই যখন কেউ এই স্বাভাবিক নিয়ম টা ভেঙে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তখন সে আমাদের কাছে বাহাদুর বা দুরসাহসি একজন মানুশ হয়ে যায় ।অতচ অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যে আমাদের নৈতিক ও প্রধান কর্তব্য ,সেটি আমরা ভুলে গিয়েছি । হান্নানের নামের আগে বাহাদুর খেতাব না দিয়ে যদি বিবেকবান বা কর্তব্য পরায়ন লাগানো হত তাহলে মনে হয় বেশি ভাল হত। হয়তো মানুষ এটা পড়ে তার ভুলে যাওয়া কর্তব্যের কথা অন্তত ১ বার মনে করতো । অন্যায় হতে দেখে তার প্রতিবাদ করা টাই প্রতিটা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ।যেদিন মেয়ে টাকে বাসে ধর্ষণ করছিল তখন হান্নান এর মত আর অনেকে দেখেছিল কিন্তু সে ছাড়া কেউ এগিয়ে যায় নাই।সে অন্য দের মত দেখে না দেখার ভান করেনি ,আর বাকি মানুষ গুলো বিবেকহীন মানুষ রূপি খরগোশের পরিচয় দিয়েছে ।তাদের কি উচিত ছিল না সবই একসাথে এগিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ।আমাদের সমাজে অন্যায় বেড়ে যাওয়ার একটি প্রধান কারন অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা ।সমাজের মানুষ কতটা বিবেকহীন হয়ে গিয়েছে এবং কত জন মানুশ এখন বিবেকবান আছে তার একটা পরিসংখ্যান এখান থেকে অনুমান করা যায় ।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি , ধর্ষণ এর প্রবনতা বেড়ে যাওয়ার করন হিসাবে অনেক ছেলেরা মেয়ে দের পোশাক কে দায়ী করছেন ।মেনে নিলাম মেয়েদের পোশাক দায়ী । কিন্তু যদি বলি মেয়ে দের এই আধুনিক পোশাক পরিধানের জন্য ছেলেরা ও অনেকটাই দায়ী। বেশীর ভাগ ছেলে রা প্রেমিকা হিসাবে আধুনিক পোশাক পরিহিত ফ্যাশান আবল মেয়েদের কে পছন্দ করে ।এখানে ছোট্ট একটা উধাহারন দেয় , আমি অনেক মেয়েকে দেখেছি , যারা নিয়মিত বোরখা পরে ।যখন তাদের ১ টা প্রেম হয়ে যায় , তখন বোরখা ছেড়ে আধুনিক সব পোশাক পরতে সুরু করে । এর প্রধান কারন তার ছেলে বন্ধু টি বোরখা পছন্দ করে না ,তাকে আধুনিক পোশাকে দেখতে পছন্দ করে।এখন ও কি কেউ বলবেন মেয়ে দের পোশাক এর জন্য শুধু মেয়েরাই দায়ি?
ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার জন্য মেয়েদের পোশাক কে দায়ি না করে , বরং আমাদের আইন ও বিচার বাবস্থা কে দায়ি করা উচিত, সাথে আমাদের মানসিকতাকেও ।আমরা অন্যয়ের প্রতিবাদ করতে জানি না । একের পর এক ধর্ষণের খবর প্রতিদিন পত্র পত্রিকা তে প্রকাশিত হচ্ছে । কিন্তু কই জন ধর্ষকের শাস্তি হচ্ছে? দু এক দিন এটা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয় তারপর আবার থেমে যায় ।কখনও কোন ধর্ষকের বিচার বা শাস্তির কোন খবর সেই ভাবে প্রকাশ হতে দাখি না ।স্বনামধন্য স্কুল ভেকারুন্নেসা এর সেই ধর্ষক শিক্ষক এর কি কঠিন কোন শাস্তির খবর কি আমরা পেয়েছি ?এভাবে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা । এখানে আইনের কোঠর প্রয়োগ দরকার । এসিড নিক্ষেপের অপরাধের মত ৯০ দিনে বিচার ও ফাঁসি ,যদি ধর্ষণের ক্ষেত্রে ও এমন কোঠর আইন প্রয়োগের বাবস্থা করা হত, তাহলে ধর্ষণ অনেকটা হ্রাস পেত ।শাস্তি না হাওয়ার করনে ১ জন ধর্ষক একের পর এক ধর্ষণ করে যচ্ছে, সাথে অন্য অনেকে উৎসাহিত হচ্ছে ।
এবার আসি ধর্ষণের পরে ঐ মেয়েটি এবং তার পরিবারের কি অবস্থা হয় ।তার ধর্ষকের বিচার হোক বা না হোক ,তার জীবনের সব সুখ শান্তি নষ্ট হয়ে যায় । অবিবাহিত থাকলে তার আর ভাল বিয়ে হয় না , আর বিবাহিত থাকলে হয় স্বামী তাকে তালাক দেয় অথবা সারা জীবন তার পরিবারের কাছে মাথা নত করে থাকতে হয়। বাকি জীবনের প্রতিটা পদে পদে তাকে অনেক অকথ্য কথার লাঞ্ছনাই লাঞ্ছিত হতে হয় ।
তার উপর আমাদের সমাজে এক ধরনে মানুষ আছে যারা ১ জন মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা রঙ মাখিয়ে ছড়িয়ে বেরায় সব খানে ।আর এই ব্যাপারে ছেলেদের তুলনাই প্রতি এলাকাতে ১ দল ঘোষেটি বেগম টাইপ এর মহিলা থাকে যারা খুব অভিজ্ঞ ।কোন মেয়ের কোন রকম একটু কিছু খবর পাইলে, সেটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে প্রচার করে ।আই ধরনের মানুষ আমাদের সমাজের জন্য অনেক ক্ষতিকর । একজন ধর্ষিতার পরিবার এই মানুষ গুল দ্বারা বেশি নির্যাতিত হয় ।আই মানুষ গুলা যাযা করে তার কিছু পয়েন্ট নীচে দেওয়া হল ।
১)যদি মেয়েটি আবার নতুন করে লেখাপড়া সুরু করে । তাহলে তারা তাকে রাস্তাই দেখলে বলবে 'ধর্ষিতার আবার পড়াশুনা"
রেপ হাওয়ার পর ও লজ্জা হয় নাই আবার পড়াশুনা সুরু করেছে ।
২) যদি পাড়ার কোন মানুষ তার ব্যাপার না জানে , তাহলে তাকে বলবে "বল কি তুমি কন জগতে থাক এখনও এই খবর জান না"
এমন লাফাঙ্গা করে ঘুরে বেড়ালে তো ছেলে রা রেপ করবেই ।
৩) যদি মেয়েটির জন্য কোন বিয়ে আসে, তাহলে তাদের প্রধান কাজ হবে বিয়ে টা ভাঙ্গা ,তার নামে নানা বাজে কথা বলে ।
এমন অবস্থায় মেয়েটার মানসিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।অনেক সময় আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয় ।
আমাদের সমাজের মানুষের মানসিকতা আর একটু ভাল করা উচিত ।আমাদের নিজে দের মধ্যে নৈতিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে । সাথে আইনের অ যথাযত প্রয়োগ থাকতে হবে ।তাহলে সমাজ থেকে ধর্ষণের মত অনেক অপরাধ কমে যাবে ।