somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপ্লব কি?

২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘বিপ্লবের ব্যাকরণশাস্ত্র’ বলছি যাকে, সেই দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মতে : পরস্পরবিরোধী শক্তির অবিরাম দ্বন্দ্বে সকল বস্তু ও ঘটনাধারার ভেতরেই ঘটতে থাকে ‘পরিমাণগত পরিবর্তন’। সেই পরিবর্তনের ধারাপ্রবাহে একপর্যায়ে ঘটে যায় ‘গুণগত পরিবর্তন’ অর্থাৎ সৃষ্টি হয় নতুনের। কবিগুরুর ভাষায়- ‘পুরাতনের হৃদয় টুটে আপনি নূতন ফুটে’।

বিপ্লব— একটি প্রসব যন্ত্রণার মতো। একে ধারণ করতে অনেক বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগ-দুর্ঘটনা ঘটে। এটি এমন এক দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যা পুরোনো অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনে তার আমূল পরিবর্তন ঘটায় । একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিবর্তন সংঘটিত হয় । বাংলাদেশের এ গণবিপ্লবও এর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তাঁর চীন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাইকে প্রশ্ন করেছিলেন, ফরাসি বিপ্লবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী? উত্তরে চৌ বলেছিলেন, এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। একই কথা অন্য সব বিপ্লব সম্পর্কে। প্রতিটি দেশের আলাদা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা, সে কারণে তাদের বিপ্লবের চরিত্রও স্বতন্ত্র। তবে মোটাদাগে কয়েকটি অনুষঙ্গের কথা বলা যায়। ক্ষমতাসীন মহলের বিরুদ্ধে লড়াই দেশের অধিকাংশ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে।

সমস্যা হলো, অনেক ক্ষেত্রে এই বিজয়ী বিপ্লবীরা নিজেরাই নতুন ক্ষমতাধর শ্রেণি হয়ে ওঠেন। মানুষের ভাগ্য নয়, নিজেদের কায়েমি স্বার্থবাদ রক্ষাই তাঁদের মুখ্য কাজ হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখে তাঁদের অনেককে মত ও পথ বদলাতে হয়। রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব তাঁদের দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলে। ব্যর্থ হয় বিপ্লব।

নতুন শতাব্দীতে লাতিন আমেরিকার যে দেশগুলো আমাদের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুখবর দিয়েছিল, তারা প্রায় সবাই পিছু হটছে। প্রধান চ্যালেঞ্জ বেহাল অর্থনীতি। কোভিড-উত্তর বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ সে সংকটকে আরও তীব্র করেছে। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, জীবনযাত্রার অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব দেশে নতুন বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছিল, সেসবের অধিকাংশই অপূর্ণ রয়ে যাচ্ছে।

অদক্ষতার কারণেও এসব দেশে অসন্তোষ বাড়ছে। পেরুর কথা ধরুন। গত বছর জুলাইয়ে সাবেক স্কুলশিক্ষক ও শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা হোসে কাস্তিয়োর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন গভীর উৎসাহের সঞ্চার করেছিল। তিনি দরিদ্র জনতার প্রতিনিধি, দেশটির সাধারণ মানুষ আশা করেছিল তাঁর নেতৃত্বে সবার অবস্থা বদলাবে। এখন এক বছর পর, পেরুর সাধারণ মানুষ ফের রাস্তায় নেমেছে। তাদের উসকাচ্ছে পুরোনো কায়েমি স্বার্থবাদ।

শুধু অদক্ষতা নয়, কাস্তিয়োর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি দুবার অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছেন। দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০-পাতার অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট কাস্তিয়ো ক্ষমতার আড়ালে একটি অপরাধ চক্র পরিচালনা করছেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কয়েক লাখ মানুষ রাজধানী লিমায় তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

যেহেতু বিপ্লবী সরকার ঘোষণা হয়নি, সেহেতু রয়ে গেছে পূর্বের কূট কৌশল যদদরুন এ সরকারের সামনে রয়েছে হিমালয়সম দায়দায়িত্ব। গত সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক পর্যায়ের যে সর্বনাশ করেছে তা তিন মাসে কেন, তিন বছরেও মেরামত সম্ভব নয়। রাজনৈতিক মহলে পরবর্তী সরকারের যে দায়িত্ব ও কর্তব্যের বয়ান প্রকাশ হচ্ছে, তা বিশ্লেষণে মহাকাব্য রচিত হবে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের জন্য থাকবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের এক বিস্তীর্ণ ময়দান। তবে কিছু নীতিগত বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ভবিষ্যৎ সংস্কারের একটি সারমর্ম তৈরি করতে পারে। যেহেতু এরই মধ্যে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে, অতি শিগগিরই দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তাদের পথটি খুব জটিল। আমাদের দেশে রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতা ও সত্য-মিথ্যার বালাই নেই। রাজনীতিকরা প্রায়ই ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। বার বার ক্যু এর চেষ্টা করা হয়। সাম্প্রতিক কয়েকবার অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে অশান্ত ও অস্থির এক সময়ের ভেতর দিয়ে আমরা চলেছি।

পরিশেষে, বিপ্লবের দিন শেষ নয়। যত দিন মানুষ শোষিত, সে বিদ্রোহ করবেই, তাকে আমরা বিপ্লব বলি আর না–ই বলি। বিপ্লবী অভ্যুত্থান সর্বদা সাফল্য পাক না পাক, সেই অভ্যুত্থানের আগুন থেকেই রূপ নেয় ভবিষ্যৎ, এ কথায় কোনো ভুল নেই।

(তথ্য সংগৃহীত/সংশোধিত/পরিমার্জিত)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের ২/৩ দিন আগে ট্রাম্পকে আবারো গুলি করার সম্ভাবনা।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:২২



ট্রাম্পকে ২য় বার গুলি করার জন্য পজিশন নিয়েছিলো একজন পরিচিত অপরাধী লোক; সে ধরা পড়েছে। তার পুরো প্রচেষ্টা, তাকে ধরার ধরণ ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ লোকদের আচরণ দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার চাঁদগাজী/সোনাগাজীকে একটু মানিয়ে নেয়ার অনুরোধ।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০১


ব্লগার চাঁদগাজীর একটাই সমস্যা তিনি অহেতুক মানুষকে খোঁচান। গার্বেজ বা নতুন প্রজন্ম যেগুলোকে গু পোস্ট বলে সেগুলোকে সরাসরি গু পোস্ট বলা ব্লগে বেমানান। ফেসবুক ইনস্টাতে বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। যেমন আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড ইউনুসের রিসেট বাটন নিয়ে ফ্যাসিবাদীদের প্রপাগান্ডা

লিখেছেন জিয়া চৌধুরী, ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৩

ড. ইউনূসের "রিসেট বাটন" পুশ করার বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা।

আসুন দেখি রিসেট বাটন পুশ করা বলতে কী বুঝিয়েছেন ড. ইউনূস।

সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। রাষ্ট্রপুঞ্জে ইউনূসের সফল দৌত্যে চিন্তায় নয়াদিল্লি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৬



বাংলাদেশের মাটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন রুখতে নতুন অন্তর্বর্তিকালীন সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ক্ষোভ বাড়ছে সাউথ ব্লকে। সে কারণে মুহাম্মদ ইউনূস চাইলেও রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার কী বলবে আম্লিগ? "জয়'র তথ্য বিক্রির ফরমুলা"

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:০৮


সজীব ওয়াজেদ জয় গণভবনে মিটিং ডেকে দাম্ভীকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাতীয় তথ্য ভান্ডার অর্থাৎ NID তথ্য ভান্ডারের মিরর কপি চেয়েছিলেন। কেন তিনি জাতীয় তথ্য ভান্ডারের মিরর কপি চেয়েছিলেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×