নতুন ঝরনা,নতুন ট্রেইল ! ভ্রমণ পাগল মানুষের কাছে এসব নিয়ে বেশ কৌতুহল । বেশ কিছু দিন হয় নতুন ঝরনার খোঁজ করছি । কিন্তু নানা প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি,বৈরীপূ্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি পরিস্থিতির কারণে সম্ভব হয়নি । অবশেষে দীর্ঘ ট্রেকিংয়ের পর নতুন ঝরনার সন্ধান পেলাম । রাঙামাটির সবচেয়ে উচু ঝরনা, উচ্চতায় প্রায় ১৫০ ফুট । ঝরনার নাম হরিণ মারা ।
সকাল থেকেই বৃষ্টি! ঝমঝম বৃষ্টি পুরো পাহাড় তখন প্রায় সাদা । এমনই এক ঘোরলাগা পরিবেশ প্রকৃতিতে । দীর্ঘদিন ধরে নতুন ঝরনার ট্রেইল ধরে হাঁটার ইচ্ছে ,তাই প্রকৃতির বৈরি হাওয়া সত্ত্বে দিঘীনালা থেকে রওনা হলাম । মোটর বাইকে ক্ষনস্থায়ী ভ্রমণ শেষে পৌছাই মূল ট্রেইল । এখান থেকে পুরোটা হাঁটার পথ । বৃষ্টিতে উঁচু –নিচু পাহাড়ী পথ বেশ পিচ্ছিল । আকাশ রূপ তখনও বেশ মেঘকালো । সময় আর দুরত্বের কথা বিবেচনা নিয়েই দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম ট্রেইলের পথ ধরে । কিন্তু ঘন জঙ্গল আর ধারালো শন পাতা হাঁটার গতিকে ধীর করে দিল । মন জুড়ানো সব ল্যান্ডস্কেপ-সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেষা আদিবাসী বসতি,আদিবাসীরা ফসল বুনন করছে জুমের ক্ষেতে ,ছোট ছোট ক্যাসকেট । সুবজ পাহাড়জুড়ে জুমে চাষ । বড় বড় বৃক্ষরাজি ! পথ চলতে চলতে কানে আসে বজ্রপাতের গুড়ম গুড়ম শব্দ । এমন বর্ষণমুখর দিনে –ঝরনার পথটাই সত্যিই বেশ রোমাঞ্চকর । ট্রেইলের পথ চলতে চলতে স্থানীয় এক আদিবাসী বন্ধুর সাথে দেখা হলে,তার অপ্যায়ন গ্রহণ করতে হল, তাকেও ট্রেকিংয়ের সাথী করে নিলাম । দূর পাহাড় থেকে কানে আসছে বৃষ্টির আগমনী শব্দ । বোঝা যাচ্ছিল বৃষ্টির বড় বড় ফোটে ক্রমশ আমাদের দিকেই আসছে । নিরুপায় হয়ে সবাই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একাকার,এই বৃষ্টির মধ্যে আমাদের বিরতিহীন পথ চলা । তবে বৃষ্টিতে পায়ে হাঁটার পথটা ধীরে ধীরে আরো বেশী সুর হয়ে আসছিল এবং ঘন ঢাকা পথে পা কোথায় ফেলছি তাও বুঝাচ্ছিল না । ঘন সুবজের জঙ্গল ,জোক এবং কালো মেঘের আকাশে পেরিয়ে ঝরনা কাছেই আসতে ঝরনার শব্দ পেলাম । ঝরনার কাছের পৌছাতে মনে হল, দীর্ঘ খাড়া পথ বেঁয়ে নামতে হবে । কিন্তু নামার পথেই যত বিপত্তি,ট্রেইলটা প্রায় ৮০ ডিগ্রি খাড়া । পাথর আর ঘন জঙ্গলের পথটা মাড়িয়ে নামা খুব কষ্টকর ,তাই সাথে থাকা দেশী দা দিয়ে জঙ্গল কেটে কেটে নিচে নামতে হচ্ছে । বৃষ্টির কারনে পথের ঝুকিটা আরো বেড়ে গেল । পাথরে খাঁজ ধরে এমন পাহাড়ী ট্রেইলে নিচে নামা রোমাঞ্চের বিপরীতে ভয় ছিল বেশী । ট্রেইলের ঘন জঙ্গলের ভিতরে নামতে নামতে চোখে পড়ে বিশাল ঝরনার ধারা । অতিবৃষ্টির কারণে ঝরনায় পানির গতি ছিল খুব বেশী । কলকল ঝরনার তীব্র ধ্বনি ! প্রায় ১৫০ ফুট উপর থেকে বেয়ে পাথরের পথ বেয়ে নেমে আসছে ঝরনার স্রোত । ঝরনার ঢাল বেয়ে নেমে আসা জলের স্রোত মিশেছে ঝিরিতে । পাহাড়ের প্রাচীন পাথর বেয়ে সাদা রেখার নিচে নেমে আসছে ঝরনার স্রোত । সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে ঝরনা থেকে ফেরা পালা,প্রায় অন্ধকারের ট্রেইল ধরে আবার হাঁটার পথ শুরু ।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনালা পৌছানো যায় । দিঘীনালা বাসটার্মিনাল থেকে মোটরবাইক বা চাঁদের গাড়ি করে ১০ নাম্বারে নামক জায়গায় নেমে ,পাহাড়ী ট্রেইল ধরে পাঁয়ে হেঁটে ঝরনায় পৌছানো যাবে ।
প্রয়োজনীয় তথ্য : ঝরনা প্রকৃতির এক অসাধারণ সৌর্ন্দয্য । ঝরণা দেখতে গিয়ে এর আশে পাশে কোন প্ল্যাস্টিক,বোতল,প্যাকেট ফেলে ঝরনাকে নোংরা করবেন না । প্রৃকতিকে তার মত করে থাকতে দিন । উপভোগ করুন তার সৌর্ন্দয্য । হরিণ মারা ঝরনা ভ্রমণের জন্য যোগাযোগ করুন—০১৮১৫ ৮৫৬৪৯৭,০১৫৫৬-৭১০০৪৩( Travel in CHT) ।