somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রাম্য রাজনীতি--প্রসহনঃ ১

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতবছরের কথা। আমি তখন সদ্য পাশ করা ঝকঝকা একজন বেকার এঞ্জিনিয়ার! বিছানায় শুয়ে শুয়ে বড়মামার দেয়া এন্ড্রডের সুফল ভোগ করি আর হা-হুতাস করি, কবে একখান চাকুরী হবে। কবে এই আগুন থেকে মুক্ত পাব (কর্মহীন থেকে থেকে নিজেকে বিশাল এক বোঝা মনে হতো সারাক্ষণ)! ইতোমধ্যে আমার ছোট ভাই ঢাকা থেকে বাড়ি আসলো। দিন পনেরো ছুটি। মা ভালো মন্দ রান্না করে আমাদের শরীরের বিশেষ যত্ন নেন। সেই সুবাদে তিনি পুকুর থেকে পুঁটি মাছ ধরার জন্যে বড়শী নিয়ে ঘাটে বসে মাছ ধরছেন। আমি যথারীতি গেম খেলছি, স্টিকম্যান লীগ না কি যেন একটা। ছোট ভাইও আমার পাশে বসে খেলা দেখছে। এমন সময় পাশের বাড়ির এক ছোট ভাই আমাদেরকে ডেকে বললো- ভাই তাড়াতাড়ি আসেন, আসামী ধরুম। ছোট ভাই চট করে বেড়িয়ে গেলো, আমি একটু ধীরে ধীরে বের হয়ে পুকুর পাড়ের দিকে গেলাম। দেখি তিনটা ছেলে তড়িঘড়ি করে সামনের দিকে এগুচ্ছে, তার পিছনে আমাদের বাড়ির দুই নায়ক দ্রুতপদে হাঁটছে। অবস্থা বুঝতে সময় নিলো না, দৌড়ে এগিয়ে গেলাম, আর জোরে জোরে বলতে লাগলাম- এই ঝগড়া লাগবি না কৈলাম! দৌড়ে স্পটে যাওয়া মাত্র হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। আমি গিয়ে মাঝখানে দাঁড়ালাম। দুই দলকে দুই দিকে ধাক্কা মেরে সড়ানোর চেষ্টা। ইতোমধ্যে পুকুর পাড়ে বিশাল জনসমাগম। সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। ঘটনা কি! এদিকে, দুই দল আমাকে মাঝে রেখে হাতাহাতিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারছিলো না। তাই অপোজিট (ভিলেন) দলের একটা ছেলে আমাকে দিলো গালি। আমাকে নাকি দেখে নেবে, আমি রাস্তায় উঠলে আমার ঠ্যাং কেটে রাখবে!!! এমন নানান কিছু। মেজাজ চড়ে গেলো চূড়ান্ত পর্যায়ে! আমি গিয়ে দিলাম এক থাপ্পর কানে গালে। থাপ্পর খেয়ে আমার দিকে আরো জোরে এগুতে লাগলো ঐ তিনজন। আমাদের দলের সবাই বয়সেও বড়, গায়ে গতরেও ভালো, তাই কাছে আসার আগেই দুইজনকে রাস্তার দুপাশে পানির মধ্যে চুবানো হলো! আর যে গালি দিলো তাকে ধরে আনা হলো বাড়িতে। আর ঐ দুই জনকে আরো মার খেতে হতো যদি দৌড়ে না পালাতো। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে দিলাম- আমি রাস্তায় গেলে আমার পা কাটবি, কিন্তু তোদের কোন বাপ ওকে ছুটিয়ে নেয় আমি দেখতে চাই(হেভভি হুমকি, তবে হুমকিতে কাজ হৈছে)! বাড়িতে নিয়ে গাছের সাথে বাঁধা হলো। আর কিল থাপ্পর কিছু দেয়া হলো। গার্ডিয়ান আসলো। অপরাধ কি জানতে চাওয়া হলো। ঘটনা খুলে বলা হলো। আর বললাম- আমি গেলাম ঝগড়া থামাতে আমাকে কেনো গালি দিলো বা আমার কেনো ঠ্যাং ভাংবে এর জবাব সে আগে দিবে, তারপর আপনি দিয়ে এখান থেকে যাবেন! যাক এরপর পুরো এক ইতিহাস। প্রথা অনুযায়ী সালিশ ডাকা হলো। সালিশে আমাদের একজন তার এজহার মুখে না বলে লিখিত দিলো। প্রায় পুরো গায়ের সব সর্দাররা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনেক ভদ্রলোকগন ছিলেন। আমাদের শুভাকাংখীই বেশি। তো ঘটনাটা ঘটলো এই এজহার পড়া নিয়ে! কে পড়বে এই এজহার? আমাদের পক্ষে যারা তারা কেউ এটাতে হাত দেয় না। তারাই পড়ুক। কিন্তু তাদের কাছে এজহার শুধু হাতবদল হতেই লাগলো! প্রায় ছয়-সাতজনের হাত ঘুরে নশু নামের একজন সর্দারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন চৌকিদার। তখন তিনি হুঙ্কার দিয়েই বললেন- রে সিদ্দিক (চৌকিদারের নাম সিদ্দিক), সর্দাররা কি এমএ/বিএ পাস নাকি যে এজহার পড়বো! তুই পড়তে পারস না??? এরপর আর সেই সালিশ তারা করতে পারলো ন। কারণ আমাদের কথা হলো- যারা সালিশের এজহার পড়তে পারে না, তারা কি করে সালিশ করবে? এই হলো গ্রামের অবস্থা! শেষে অবশ্য তারাই দোষ স্বীকার করেছিলো যে ভুলটা তাদের ছেলেদের!!! এই আর কি......যাই হোক, এখানে এটাই আমার প্রথম লেখা। হঠাৎ কিছু লিখতে মনে হলো তাই লিখলাম। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কেউ কিছু মনে করবেন না। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্ত্ব এবং দেশের রিজার্ব বারানোর এইটা একটা পথ হতে পারে…

লিখেছেন ফেনা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বাংলাদেশে শ্রমিকদের মধ্যে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮.৫ কোটি। এর মধ্যে প্রায় ৯৬% শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন, অর্থাৎ তারা অদক্ষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেকারত্বের দিনগুলি - চতুর্থ অংশ

লিখেছেন দর্পণের প্রতিবিম্ব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৩১





আমি বহুবার বিভিন্ন বইয়ে কিংবা দেয়ালে বা নাটক-সিনেমায় শুনেছি বা দেখেছি মানুষ একাকী চলতে পারে না। এ বিষয়ে আমার খুবই দ্বিমত ছিল কারণ আমি একাকী চলতে পারতাম। অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র ও নির্বাচিত শব্দের নয়া ব্যাখ্যা দিলেন ফরিদা-মজহার দম্পতি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৭


বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুটা ছিল জনতার কণ্ঠে, এখন সেটা রূপ নিচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট গলার একচেটিয়া লোকের তর্জন-গর্জনে । শুরুর দিকে বলা হয়েছিল, এটা অস্থায়ী সরকার—জনগণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকা আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনে সক্ষম হয় কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৩৮



আমাদের দেশের সরকার সমূহ যখন সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় তখন বিশ্ব মোড়ল হিসাবে আমেরিকা আমাদের দেশের সরকার পরিবর্তন তাদের দায়িত্ব মনে করে। তারা এটা করে আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×