গতবছরের কথা। আমি তখন সদ্য পাশ করা ঝকঝকা একজন বেকার এঞ্জিনিয়ার! বিছানায় শুয়ে শুয়ে বড়মামার দেয়া এন্ড্রডের সুফল ভোগ করি আর হা-হুতাস করি, কবে একখান চাকুরী হবে। কবে এই আগুন থেকে মুক্ত পাব (কর্মহীন থেকে থেকে নিজেকে বিশাল এক বোঝা মনে হতো সারাক্ষণ)! ইতোমধ্যে আমার ছোট ভাই ঢাকা থেকে বাড়ি আসলো। দিন পনেরো ছুটি। মা ভালো মন্দ রান্না করে আমাদের শরীরের বিশেষ যত্ন নেন। সেই সুবাদে তিনি পুকুর থেকে পুঁটি মাছ ধরার জন্যে বড়শী নিয়ে ঘাটে বসে মাছ ধরছেন। আমি যথারীতি গেম খেলছি, স্টিকম্যান লীগ না কি যেন একটা। ছোট ভাইও আমার পাশে বসে খেলা দেখছে। এমন সময় পাশের বাড়ির এক ছোট ভাই আমাদেরকে ডেকে বললো- ভাই তাড়াতাড়ি আসেন, আসামী ধরুম। ছোট ভাই চট করে বেড়িয়ে গেলো, আমি একটু ধীরে ধীরে বের হয়ে পুকুর পাড়ের দিকে গেলাম। দেখি তিনটা ছেলে তড়িঘড়ি করে সামনের দিকে এগুচ্ছে, তার পিছনে আমাদের বাড়ির দুই নায়ক দ্রুতপদে হাঁটছে। অবস্থা বুঝতে সময় নিলো না, দৌড়ে এগিয়ে গেলাম, আর জোরে জোরে বলতে লাগলাম- এই ঝগড়া লাগবি না কৈলাম! দৌড়ে স্পটে যাওয়া মাত্র হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। আমি গিয়ে মাঝখানে দাঁড়ালাম। দুই দলকে দুই দিকে ধাক্কা মেরে সড়ানোর চেষ্টা। ইতোমধ্যে পুকুর পাড়ে বিশাল জনসমাগম। সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। ঘটনা কি! এদিকে, দুই দল আমাকে মাঝে রেখে হাতাহাতিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারছিলো না। তাই অপোজিট (ভিলেন) দলের একটা ছেলে আমাকে দিলো গালি। আমাকে নাকি দেখে নেবে, আমি রাস্তায় উঠলে আমার ঠ্যাং কেটে রাখবে!!! এমন নানান কিছু। মেজাজ চড়ে গেলো চূড়ান্ত পর্যায়ে! আমি গিয়ে দিলাম এক থাপ্পর কানে গালে। থাপ্পর খেয়ে আমার দিকে আরো জোরে এগুতে লাগলো ঐ তিনজন। আমাদের দলের সবাই বয়সেও বড়, গায়ে গতরেও ভালো, তাই কাছে আসার আগেই দুইজনকে রাস্তার দুপাশে পানির মধ্যে চুবানো হলো! আর যে গালি দিলো তাকে ধরে আনা হলো বাড়িতে। আর ঐ দুই জনকে আরো মার খেতে হতো যদি দৌড়ে না পালাতো। যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে দিলাম- আমি রাস্তায় গেলে আমার পা কাটবি, কিন্তু তোদের কোন বাপ ওকে ছুটিয়ে নেয় আমি দেখতে চাই(হেভভি হুমকি, তবে হুমকিতে কাজ হৈছে)! বাড়িতে নিয়ে গাছের সাথে বাঁধা হলো। আর কিল থাপ্পর কিছু দেয়া হলো। গার্ডিয়ান আসলো। অপরাধ কি জানতে চাওয়া হলো। ঘটনা খুলে বলা হলো। আর বললাম- আমি গেলাম ঝগড়া থামাতে আমাকে কেনো গালি দিলো বা আমার কেনো ঠ্যাং ভাংবে এর জবাব সে আগে দিবে, তারপর আপনি দিয়ে এখান থেকে যাবেন! যাক এরপর পুরো এক ইতিহাস। প্রথা অনুযায়ী সালিশ ডাকা হলো। সালিশে আমাদের একজন তার এজহার মুখে না বলে লিখিত দিলো। প্রায় পুরো গায়ের সব সর্দাররা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনেক ভদ্রলোকগন ছিলেন। আমাদের শুভাকাংখীই বেশি। তো ঘটনাটা ঘটলো এই এজহার পড়া নিয়ে! কে পড়বে এই এজহার? আমাদের পক্ষে যারা তারা কেউ এটাতে হাত দেয় না। তারাই পড়ুক। কিন্তু তাদের কাছে এজহার শুধু হাতবদল হতেই লাগলো! প্রায় ছয়-সাতজনের হাত ঘুরে নশু নামের একজন সর্দারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন চৌকিদার। তখন তিনি হুঙ্কার দিয়েই বললেন- রে সিদ্দিক (চৌকিদারের নাম সিদ্দিক), সর্দাররা কি এমএ/বিএ পাস নাকি যে এজহার পড়বো! তুই পড়তে পারস না??? এরপর আর সেই সালিশ তারা করতে পারলো ন। কারণ আমাদের কথা হলো- যারা সালিশের এজহার পড়তে পারে না, তারা কি করে সালিশ করবে? এই হলো গ্রামের অবস্থা! শেষে অবশ্য তারাই দোষ স্বীকার করেছিলো যে ভুলটা তাদের ছেলেদের!!! এই আর কি......যাই হোক, এখানে এটাই আমার প্রথম লেখা। হঠাৎ কিছু লিখতে মনে হলো তাই লিখলাম। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কেউ কিছু মনে করবেন না। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩৭