ঘড়ির কাটা রাত ১২টা পেরোলেই ১লা জানুয়ারী। পটকা তারায় হঠাত ঝলমলিয়ে উঠবে পৃথিবীর আকাশ। লাল, নীল, সবুজ, সোনালী, আরো কত রং…
পেছনের পায়ের অবাঞ্চিত রঙ্গিন ছাপগুলো মুছে ফেলার অবাস্তব চেষ্টায় পুরোটা পৃথিবীকে অভুতপূর্ব রংয়ে রঙ্গিন করে তোলা হবে এ রাতটিতে।
নতুন বছরের সূচনাগাঁথা গেয়ে গেয়ে ধর্ম বর্ণ পরিচয় ভুলে গিয়ে হাজার মুখ একটাই স্বপ্নের কলি গাইবে, হ্যাপি নিউ ইয়ার! হ্যাপি নিউ ইয়ার!!
আরো কত কি যে হবে হয়! পাপ-পঙ্কিলতার অযাচিত বরণে পবিত্র সূচনাতেই অপবিত্র বসন জড়াবে আরো একবার এ আবহ পৃথিবীর দেহখানা।
বিশ্বের বিধর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
এই থার্টি ফার্স্ট নাইট তথা নববর্ষ বরণ উনুষ্ঠানের উৎপত্বি কোথা থেকে?
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। ১লা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার (পোপ গ্রেগরীর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
এই অনুষ্ঠান কি ইসলাম সমর্থিত?
যেখানে যিনা ব্যাবিচার, মদ, শরাব, অশ্লীল, অশালীন, বেহায়াপনা কাজ চলে, তা কখনোই ইসলামে গৃহীত নয় বরং তা ইসলাম বহির্ভূত,নৈতিকতা বিরোধী, কাট্টা হারাম অনুষ্ঠান। জিনাতো দূরের কথা জিনার কাছেও যেতে নিষেধ করত আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
অনুবাদ: হে নবী আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
এবং ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।
(সুরা নূর ৩০, ৩১)
এবং ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে যে, সব নববর্ষের প্রবর্তকই বিধর্মীরা। তাই ইসলাম নববর্ষ পালনকে কখনোই স্বীকৃতি দেয় না। যেহেতু এতে করে অন্য ধর্মের ধর্মীয় রীতির সাথে সার্দশ্য হয় সেহেতু তা মুসলমানদের বৈধ হবে না।
তা ছাড়াও নব বর্ষের নামে যে সকল অপসংস্কৃতি ও কুসভ্যতার অবতারণা করা হয় এর সবই মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম।
এ প্রসঙ্গে রাসূল ﷺ বলেছেন,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ” ﻣﻦ ﺗﺸﺒﻪ ﺑﻘﻮﻡ ﻓﻬﻮ ﻣﻨﻬﻢ ”
অর্থ, যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে’ ( আবূ দাঊদ হা/৪০৩১) ।
অন্য হাদীসে নবী মুহাম্মাদ (ﷺ ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিজাতির তরীকা অনুযায়ী আমল করে, সে আমাদের কেউ নয়।
(ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ২১৯৪নং)
প্রত্যহ যখন দিন আর রাত অতিবাহিত হয় একটি বছর সমাপ্ত হয় তখন প্রতিটি মুসলামানদের অনুভূতি কি? আনন্দের না বেদনার, না চিন্তার?
একজন আরবি কবি বিষয়টি তার একটি পংক্তিতে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলছেন। তিনি বলেনঃ
يسرالناس ماذهب الليالى + ولكن ذهابهن له ذهابا
মানুষকে আনন্দ করে দিনের পর দিন রাতের পর রাতের আগমন। কিন্তু কবি বলেনঃ আমার অনুভূতি ব্যতিক্রম। রাত শেষ হওয়ার পর নতুন এক ভোর দেখার জন্য প্রফুল্লচিত্বে আমি অপেক্ষা করতে পারি না বছর শেষে নতুন আরেকটি বছর কে আমি স্বাগত জানানোর জন্য আমি আনন্দ করতে পারিনা। আমার অনুভুতি হল এটাই, যে দিনগুলো চলে গেল তা তো আমার জীবনের একটা অংশ। আমার জীবনের একটি ক্যালেন্ডার শেষ হয়ে গেল। আমার জীবন ছোট হয়ে এলো। আমার জন্য এটাতো অানন্দের ব্যাপার নয়, আমার জন্য এটা চিন্তার বিষয়। আমার জীবন থেকে একটি বছর অতিক্রম করছি। আগামী বছর পাদার্পন করতে যাবো, আমি গত বছর কিভাবে কাটালাম। আগামী বছর কিভাবে কাটাবো আমার এটা চিন্তার বিষয়। গত একটি বছরের হিসাব করার সময় আনন্দের সময় নয়।
আল্লাহ তা’য়ালা তো আমাদের কে অানন্দ করার জন্য সৃষ্টি করেন নি, সৃষ্টি করছেন তার ইবাদাত করার জন্য। আমরা কি তা করছি?
আমাদের অন্তরে একটি জিজ্ঞাসা! মানুষ আসে মানুষ যায়।
কোথা থেকে আসে?
কেন আসে?
কোথায় যায়?
দিন যত যায়, রাত যত যায়, বয়স যত বাড়ে একজন বিবেকবান মানুষ তার মনকে এই প্রশ্নগুলো বিদ্ধ করা চাই, কেন এলাম?
কি করছি? কোথায় যাবো?
এই প্রশ্নগুলো যার অন্তরে থাকবে প্রক্রিতপক্ষে সেই বুদ্ধিমান।
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের প্রতিটি কাজের হিসাব নিয়ে তার উপযুক্ত বদলা দিবেন।
যেমটি পবিত্র কোরআনের ঘোষনা। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
অনুবাদ: অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।
(সূরা যিলযাল:৭,৮)
এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী।
আল্লাহ!! আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১০