somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ১০ উপায়

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এর জন্য তুমি কি প্রস্তুতি নিয়েছ? এ প্রশ্ন শুনে লোকটি যেন একটু দুর্বল হয়ে গেল।
অতঃপর সে বললঃ হে আল্লাহর রাসূল, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সে দিনের জন্য আমি বেশী নামায, রোযা ও সাদাকার প্রস্তুতি নিতে পারিনি। কিন্তু আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি যাকে ভালবাস (কিয়ামাতের দিন) তাঁর সাথে থাকবে। হযরত আনাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “তাহলে তুমি যাকে ভালবাস (কিয়ামাতের দিন) তাঁর সাথে থাকবে”- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কথাটিতে আমরা যেরুপ খুশী হয়েছিলাম ইসলাম গ্রহণের পর অন্য কিছুতে এরুপ খুশী হইনি। (বুখারি-মুসলিম)
ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যুম রাহিমাহুল্লাহ আল্লাহর ভালবাসা সম্পর্কে বলেনঃ ‘এটি এমন একটি মর্যাদা যা লাভের আশায় প্রতিযোগীরা প্রতিযোগীতা করে থাকে, আর নেক আমল যারা করতে চায় তারা সদা সচেষ্ট থাকে। পূর্ববর্তীগন এর জ্ঞান অর্জনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন; আর প্রেমিকরা এর জন্য সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছেন।
এটি অন্তরের খোরাক। এটি চক্ষুসমূহের শীতলকারী। এটি এমনই জীবন যে কেউ এ থেকে বঞ্চিত হয় সে মৃতদের অন্তর্ভূক্ত হয়। এটি এমন এক আলো যে একে হারিয়ে ফেলে-সে অন্ধকারের সমুদ্রে নিপতিত হয়। এটি এমনই এক আরোগ্য যে এ থেকে বঞ্চিত হয় তার অন্তর সকল প্রকার রোগ ব্যাধির আস্তানা হয়ে যায়। এ এমনই এক স্বাদ যে এটি লাভ করতে পারেনি তার পুরো জীবনই বিষাদময় ও ভাবনাময় হয়ে পড়ে।
যে আল্লাহকে মহব্বাতকারীর মর্যাদা থেকে আল্লাহর মাহবুব হওয়ার মর্যাদায় উন্নীত হতে চায় তাঁর জন্য আমি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সহকারে এমন দশটি উপায়ে পেশ করছি যে গুলো ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যুম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব “মাদারিজুস সালিকন”-এ উল্লেখ করেছেন,
১. আল-কুরআন অর্থ-তাফসীর সহ বুঝে-শুনে তিলাওয়াত করা। হাসান ইবন আলী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীগন আল কুরআনকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে পত্রাদি ভেবেছিলেন। ফলে তাঁরা রাতের বেলায় এগুলোকে গভীর ভাবে মনোনিবেশ সহকারে তিলাওয়াত করতেন আর দিনের বেলায় এর অন্তর্নিহিত অর্থ তালাশ করতেন।
২. ফারয ইবাদাত আদায়ের সাথে সাথে নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। হাদীসে কুদসীতে আছেঃ “যে আমার ওলীর (বন্ধুর) সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা দিয়ে থাকি। আমার বান্দা তাঁর উপর ফারযকৃত কার্যাবলী ভিন্ন অন্য কাজ দিয়ে আমার ভালবাসা অর্জন করতে পারেনা। (অর্থাৎ আল্লাহর মহব্বাত হাসিলের প্রধান উপায় হল ফারয কার্যাবলী।) আর আমার বান্দা নফল কার্যাবলীর মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভে সচেষ্ট থাকে, শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। অতঃপর আমি যখন তাকে ভালবাসি, তখন আমি তাঁর কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শুনে, আমি তার চক্ষু হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে কিছু ধরে, আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে (অর্থাৎ এসব অঙ্গগুলো আমার আদেশের অনুগত হয়ে কাজ সম্পাদন করেন।
আর সে আমার কাছে সওয়াল করলে আমি অবশ্যই তা দিয়ে দিই। আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।” (বুখারী)
৩. সবসময় জিহবা, অন্তর, কাজ এবং অবস্থার মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা। এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই ইসলামের বিধিবিধানগুলো আমাদের উপর আধিক্যতা লাভ করেছে। তাই আমাদের এমন এক ব্যাপক বিষয় শিক্ষা দিন যা আমরা আঁকড়ে ধরব’। উত্তরে তিনি বললেনঃ ‘তোমার জিহবা যেন সর্বদা আল্লাহর স্মরণে ভিজা থাকে।’ (আলবানীর সহীহ সুনানে ইবন মাজাহ)
৪. কুপ্রবৃত্তির অত্যাধিক তাড়নার সময় নিজের প্রবৃত্তির উপর আল্লাহর মহব্বতকে অগ্রাধিকার দেয়া। শাইখূল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহীমাহুল্লাহ বলেন, “কোন নফস, যখন কোন খারাপ ইচ্ছা করে আর ব্যক্তিটি নিজের নফসকে খারাপ থেকে নিষেধ করে, তখন এ নিষেধটি আল্লাহর ইবাদাত ও সওয়াবের কাজে পরিণত হয়।’(মাজমুআল ফাতাওয়া: ৬৩৫/১০)
৫. আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলীকে অন্তর দিয়ে অনুধাবন করা, এগুলোকে ভালভাবে অবলোকন করা এবং উত্তম ভাবে জানা। ইমাম ইবনুল ক্বইয়্যুম রাহীমাহুল্লাহ বলেনঃ “আসল জ্ঞানী সেই যে আল্লাহ তা’আলাকে তাঁর নামাবলী, গুনাবলী ও কার্যাবলী সহ জানে অতঃপর তার কাজকর্মে আল্লাহকে সত্য প্রমাণিত করে তার নিয়্যাত ও ইচ্ছাকে একমাত্র আল্লাহর জন্য একনিষ্ট করে।”
৬.আল্লাহর নিয়ামাতের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য দেয়া, তাঁর অগনিত বাহ্যিক ও গুপ্ত নিয়ামাত ও রহমাতকে অবলোকন করা। আর এ ধরনের গভীর মনোনিবেশ বান্দাহ কে আল্লাহর মহব্বাতের দিকে সাড়া প্রদান করে।
৭. এটি অন্য সব উপায় সমূহের মধ্যে অত্যাধিক গুরুত্বের দাবী রাখে। অন্তরকে পুরোপুরি আল্লাহর সামনে তুচ্ছ করা।
তুচ্ছ করা মানে নিজকে ছোট করে দেয়া, হেয় করে দেয়া ও অবনত করা।
সালাফ আস সালেহদের জীবন চরিত্রে আল্লাহর সামনে নিজেকে তুচ্ছ করার আশ্চর্য অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিআল্লাহু আনহু যখন নামাযে দাড়াতেন, তখন তাঁকে খুশুর কারন নির্জিব কাঠ মনে করা হত। তিনি যখন সাজদা দিতেন তখন চড়ুই পাখি তাঁর পিঠের উপর কাঠ মনে করে বসে যেত।
হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু যখন অযু করতেন, তখন তাঁর রঙ হলুদ বর্ণের হয়ে যেত। তাঁকে এর কারন জানতে চাইলে তিনি বলতেন, তোমরা কি জান আমি কার সামনে দাড়াতে তৈরি হচ্ছি।
৮. রাতের ইবাদাত করা। আল্লাহ তা’আলা যখন দুনিয়ায় আকাশে আগমন করেন তখন তার সাথে ইবাদাতের মাধ্যমে মহব্বাত বৃদ্ধি করা যায়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন: “তাদের পার্শ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তাদেরকে পালন কর্তা যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে তার ব্যয় করে।” (সূরা আস-সাজদাহ,৩২:১৬)
৯. ঈমানদারদের সাথে সময় কাটানো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ বলেন ‘আমার উদ্দেশ্যে পরস্পর মহব্বাতকারীর জন্য আমার মহব্বাত অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন ‘আমার উদ্দেশ্যে পরস্পর মহব্বাতকারীর জন্য আমার মহব্বাত অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন ‘আমার উদ্দেশ্যে পরস্পর মহব্বাতকারীর জন্য আমার মহব্বাত অবধারিত হয়ে যায়’”। (মিশকাতুল মাছাবীহ, সহীহ আল বানী)
১০. গুনাহ থেকে দূরে থাকা। ঐ সকল কারন থেকে দূরে থাকা যে গুলো আল্লাহ ও তাঁর বান্দার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যোগ্য কে???

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)




(সকল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতান্ত্রিকভাবে লীগকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা যাবে আজীবন।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩



লীগ সদ্য বিতাড়িত কিন্তু তাদের সাংগঠিক কাঠামো এখনো পূর্বের মতই শক্তিশালী শুধু ছোবল দিতে পারছে না, স্থানীয় নেতারা বিএনপির নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করছে তবে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেললেন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১


মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী লম্বা রেইসের ঘোড়া মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া হতে বেডরুমে যার নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে তিনি খুব দ্রুত শিখে গেলেন কিভাবে মানুষের মাথা ঠান্ডা করতে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×