somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বকুলতলা

১১ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বকুলতলা!কেউ আছেন ভাই,বকুলতলা!

হেল্পারের চিৎকারে আচমকাই জেগে উঠল তুতুন!সামান্য বিশ মিনিটের জার্নিতে ও কেন যে ঘুম পায় তুতুনের।

ছায়া সুনিবিড় প্রকান্ড বটগাছ।চারিদিকে তার বিস্তৃর্ণ শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে কত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে।অথচ জায়গাটার নাম কিনা বকুলতলা।কি আজিব! জায়গাটার নাম বকুলতলা না হয়ে বটতলা হওয়াটায় তো অধিকতর শ্রেয় ছিলো।আশপাশের চৌহদ্দিতে যতদূর দৃষ্টি যায় কোন বকুলের চারাগাছটি পর্যন্ত চোখে পড়ে না।

গ্রীষ্মের দুপুরের প্রচন্ড দাবদাহে শ্রান্ত নানান প্রজাতির পাখিরা পরম তৃপ্তিতে বটবৃক্ষের শাখায় আশ্রয় নিয়েছে।ডালে বসে বসে পাকা ফল খেয়ে নিচে বিশ্রামরত পথিকের গায়ে ফেলছে।অন্যদিন এখানে যাকে বাইক নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় আজ সে নেই।

বটবৃক্ষের একটু অদূরেই একটা মুদি দোকান ।দোকান আর বটগাছের মধ্যিখান বরাবর বড়রাস্তা থেকে নেমে দক্ষিণ দিকে একটি লাল ইট বসানো রাস্তা চলে গেছে।রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজ ফসলের মাঠ।এখান থেকে দুই ক্রোশ দূরে রিয়াদের বাড়ি।তুতুনের ক্লাস শেষ হওয়ার পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর রিয়ার ক্লাস শেষ হয় তাই একসাথে ফেরা হয়না।

চাচা আমাকে একটা আইসক্রিম দেনতো।

একটু বসো মা।গরমে আসছো,একটু জিরাই নিয়ে তার পর আইসক্রিম খাও।

গরমে সবাই বটের নিচে বিশ্রাম নেওয়াতে দোকানের সামনে পাতানো বেদিটা ফাঁকাই ছিলো।তুতুন বাস থেকে নেমে বাড়ি ফেরার সময় এখানে পাঁচ-দশ মিনিট বসে তারপর বটগাছটার অপজিটে উত্তর দিকে গ্রামের যে মাটির রাস্তাটি কিছুটা একেঁবেঁকে বয়ে চলেছে,সেই রাস্তা ধরে পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা হয়।

সরু মাটির রাস্তা আর পিঁচঢালা রাস্তার সাথে একটি বিশাল দিঘী।কিছুদিন পর গ্রীষ্মের শেষে বর্ষার জলে দিঘীটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ফুটে থাকবে অজস্র শাপলা শালুকের রং বেরঙ্গের ফুলে।দিঘীর ওপারে একটি দোচালা টিনের ঘর।ঐ যে লোকটা রাস্তার পাশে ছোট্ট ছাউনি দেওয়া চালার উপরে বসে সবজি বিক্রি করছে তার ঘর ওটা।ঘরের সদস্য সংখ্যা তিনজন।তুতুন আসা-যাওয়ার পথে মাঝেমধ্যেই এদের ঝগড়াঝাঁটি শুনতে পাই।

লোকটার হাতে একটা স্মার্টফোন,গভীর মনোযোগের সাথে তাকিয়ে আছে।সারাদিনের কাঠ ফাটা রোদে সবজি গুলো শুকিয়ে গেছে।নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে কেউ কিনে না।বিকেলে এই বটের নিচে ছোট্ট করে বাজার বসে।নানা রকমের মিষ্টি-মিঠায়,ভাজাভুজি,পাশের গ্রাম থেকে অনেকেই টাটকা সবজি,ফলমুল নিয়ে বসে এখানে। গ্রামের মানুষজন তখন তাদের প্রয়োজনীয় বাজার সদয় এখান থেকেই সেরে নিতে পারে।

একটি শ্যামা দীঘল চুলের মেয়ে একটা দুই বছরের বাচ্চা কোলে নিয়ে দিঘীর ওপারে দাঁড়িয়ে আছে।ঘন কাজল চোখে এক আকাশ বিষন্নতা।এই মেয়েটি ওই সবজি বিক্রেতার বউ।আজও হয়তো মেয়েটিকে বিদম প্রহর সয্য করতে হয়েছে।ঝগড়ার সময়ে প্রায় লোকটাকে বলতে শোনা যায়-হারামজাদি তোর জন্য আমার বাবা-ভাইদের থেইকা আলাদা হওন লাগছে।পনেরো-বিশ জনার ভাতের পাতিল তুলতে উনার কোমর ভেঙে যায়, নবাবজাদি আমার।আর সেই সময়ে যদি মেয়েটির মুখ থেকে ক্ষীনস্বরে ও কোন কথা বের হয় তাহলে সেই মুহূর্তেই তার উপরে শুরু হয়.....

তুতুন অনেকক্ষন ধরে বসে আছে।অন্যদিন এই সময়ে ও বাড়ি পৌঁছে যায়।

মা!তুমি তো অনেকক্ষণ হলো বসে আছো।কারো জন্য অপেক্ষা করছো?

হ্যাঁ চাচা! আমার বান্ধবীর জন্য।

তুতুন নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সচরাচর মিথ্যা বলে না।কিন্তু এখন বললো।গত তিন মাস ধরে তুতুনের ফেরার পথে যে ছেলেটিকে রোজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তুতুনের চোখ বারবার তাকেই খুঁজছে।কিন্তু কেন? আর ছেলেটিই বা কেন রোজ এখানে দাঁড়িয়ে থাকে?

কিরে তুতুন! তুই এখনো এখানে?তোর তো কত আগেই ছুটি হয়ে গেছে,বাড়ি যাসনি কেন?

এমনিতেই বসে আছি।

দাদা এখনো আসেনি কেন? অন্যদিন তো আগে থেকেই এসে বসে থাকে।এরমধ্যেই লাল ইটের রাস্তাটি দিয়ে সুমন্ত বাইক নিয়ে রিয়া,তুতুনের সামনে এসে দাঁড়াল।স্যরি দেরি হয়ে গেল,তুই কি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছিস?

না।মাত্র এসে দাঁড়ালাম।দাদা ও আমার বান্ধবী তুতুন!

আমি উনাকে চিনি।আপনার তো বেশ আগেই ছুটি হয়।আজ এই সময়ে?

আজও আগেই ছুটি হয়েছে।আমি এমনিতেই এখানে বসে ছিলাম।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×