বর্ষ সমাপ্তির সালতামামিতে বর্তমান সরকাররের আলোচিত-সমালোচিত কর্মকাণ্ডগুলোকে চুলচেরা বিশ্লেষণকালে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া জনগণের নিরাপত্তাহীন জীবন-যাপন, দূর্নীতির বেড়াজালে দেশের উন্নয়নচিত্রের তেলরঙ-জলরঙের মলিনতা ছাপিয়ে যে ইস্যুটি আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে তা হলো ৭১’এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
২০০৮ এর ২৯শে ডিসেম্বরের আড়ম্বরপূর্ণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ আসন জয়ে সরকার গঠন আর সংসদে কোনঠাসা অবস্থানে বিপর্যস্ত বি.এন.পি’র বিরোধীদলের ভূমিকা পালনের পেছনে একদলের প্রতি জনগণের বহুলাংশে আস্থা আর অপরদলের প্রতি তীব্র অনাস্থা প্রকাশিত হয়েছিল। আস্থার মাপকাঠিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের শাসনকালের উন্নয়নমূলক কাজগুলো খুব যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল তা কিন্তু নয়। অপর দিকে বি.এন.পি সরকারের সর্বশেষ শাসনকালে ব্যাপক দূর্নীতিগুলোর তরতাজা স্মৃতিগুলোই যে কেবল অনাস্থার বীজ বপন করেছিল তাও নয়। নিজেদের প্রাত্যহিক জীবন-জীবিকার চাহিদাকে ছাপিয়ে, স্বপ্রনোদিত হয়ে জনগণ যে ইস্যুটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল, গণমাধ্যম , রাস্তাঘাট, অলিগলি সরগরম হয়েছিল যে দাবিতে, তা ছিল ’যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’। ফলাফলস্বরূপ নির্বাচনে চরমভাবে প্রত্যাখাত হলো জামাত-ই-ইসলামীর প্রার্থীরা এবং অভ্যন্তরীণ কিছু উল্লেখযোগ্য দূর্নীতিমূলক সংবাদ শিরোনামসহ মূলত জামাতের সাথে বন্ধুত্ব সূলভ জোট বজায় রাখার চূড়ান্ত খেসারত দিতে হলো বি.এন.পি. -কে।
নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতির ধারা বজায় রেখে ক্ষমতা গ্রহণকালেও বর্তমান সরকারের কন্ঠে যখন বারবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দ্রুততর পদক্ষেপের আশ্বাস শোনা যাচ্ছিল সেই সময়ই বিচার কার্যের উদ্যোগ নিয়ে সদ্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রীর প্রাথমিক অজ্ঞতামূলক বক্তব্য জনগণের উচ্ছ্বাসের জোয়ারে বিঘ্ন ঘটায়। আওয়ামীলীগ সরকার অবশ্য এই পরিস্থিতি দ্রুতই সামলে ওঠে। এরপর বিচার কার্যের গতি-প্রকৃতি-পদ্ধতি নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে ইতিবাচক শলাপরামর্শে জনগণ সরকারের সদিচ্ছাকে পুনরায় উপলব্ধি করতে শুরু করে।
একাত্তরের পর জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বিগত কয়েক বছরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সচেতন, সোচ্চার ও গোষ্ঠিবদ্ধ হতে শুরু করেছে। আর তাই নগরীতে সচেতন নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিচারের দাবিতে পদযাত্রা, আলোচনা সভা হয়েছে একের পর এক। কিন্তু শুরুতে ’বিচার চাই’, ’বিচার হবে’ মূলক দাবিতে যে বলিষ্ঠতা ছিল, সরকারের প্রতি নির্ভরতা ছিল তা ক্রমান্বয়ে ম্লান হয়ে কারো কারো কাছে প্রশ্ন বাচক হয়ে উঠলো- ’বিচার হবে তো?’ স্বভাবতই মনের মাঝে আশংকা উঁকি দিলো রাজনীতির ময়দানে ’যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ কেবল মাত্র নির্বাচন জয়লাভের চিরাচরিত কৌশল না হয়ে রয়।
সময় গড়িয়ে বছরের শেষ প্রান্তে এসেছে ডিসেম্বর মাস- বিজয়ের মাস। এ মাসে আমাদের আবেগ, উদ্দীপনায় নতুন জোয়ার লাগে প্রতি বছরই। সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এ বছরের ডিসেম্বর মাসের চালচিত্র ছিল আরো বেশী তেজোদ্দীপ্ত। গত ১৬ই ডিসেম্বর ওসমানী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকা মহানগরীর ২ নং সেক্টর ও ঢাকায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের ষষ্ঠ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মিলিত অঙ্গীকার করা হয়। চট্টগ্রামে আয়োজিত ’১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীঃ বাংলাদেশের জন্য নতুন চিন্তা’ শীর্ষক সেমিনারে বিভিন্ন দেশে সম্পন্ন বিচার প্রক্রিয়ার উদাহরণ টেনে সরকারকে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়। ফি বছর কেবল সংবর্ধনা পেয়ে পেয়েই আর সাত্বনা পেতে চান না জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ক্ষোভ মিশ্রিত দাবি প্রকাশ পেয়েছে নেত্রকোনায় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। সেক্টর কমাণ্ডারস ফোরাম শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। জনগণ যখন এমন একটি উল্লেখযোগ্য চাহিদাকে বারবার সম্মুখে তুলে আনছে তখন এর বাস্তবায়নে সরকারের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত কতটুকু?
জেলায় জেলায় একত্রিশটি তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে বিজয় দিবসের সূচনার মাধ্যমে স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন দলীয় সংগঠন, পেশাজীবি সংস্থা, সাস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থার উদ্যোগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে- বগুড়া, রংপুর, পাবনা, যশোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, লালমনিরহাট, বরগুনা, কুড়িগ্রাম, নাটোর, মাগুড়া, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, পিরোজপুর, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, ভোলা, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, মৌলভীবাজার, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর সহ অন্যান্য জেলাগুলোতে আলোচনা সভা, স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এধরনের অনেক কর্মসূচীতে সরকারী উপমন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদেরও উপস্থিতি ছিল।
শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দৃঢ়চিত্তে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যুদ্ধাপরাধীদের শীঘ্রই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত বিজয় র্যালীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা বিরোধীমুক্ত দেশ উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এম পি জানান যে, কেবল যুদ্ধাপরাধী নয়, বরং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও বিচার হবে। আগামী এক বছরের মধ্যেই অনেক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া জরুরী, বিচারকার্যের প্রস্তুতির দ্বায়িত্বভার কি কেবল সরকারের একার? প্রধান বিরোধীদলকে ছায়া সরকার হিসেবে গন্য করা উচিৎ সব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেই। আত্মপক্ষ সমর্থেন বিরোধীদল হয়ত বলে বসবেন সরকার সেই পরিবেশ তৈরীতে ব্যর্থ, নয়তো তারা সরকারকে সহযোগীতার জন্য সদা প্রস্তুতই। কিন্তু সদ্য ঘোষিত স্থায়ী কমিটিতে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে জায়েজ করে নিতে প্রধান বিরোধী দল বি.এন.পি’র সব বাঘা বাঘা নেতাদের চাতুর্যময় বক্তব্যের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আপাতদৃষ্টিতে তাদের ইতিবাচক অবস্থানকে কতটা আন্তরিক বলা যায়?
আবারো ফিরে আসার যাক, সরকারের উদ্যোগ ও পদক্ষেপে। ৩৮তম বিজয় দিবস পালন করার পরও ৭১ নিয়ে তথ্যগত যে বিশাল অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা হলো –
১. যুদ্ধাপরাধীদের (নাম, বয়স, জীবিত/মৃত, বর্তমান অবস্থান ইত্যাদি উল্লখপূর্বক) সুনির্দিষ্ট সরকারী তালিকা প্রণয়ন
২. মুক্তিযোদ্ধাদের সুনির্দিষ্ট সরকারী তালিকা প্রণয়ন
এখন পর্যন্ত এই তালিকার অপূর্ণাঙ্গতার দায়ভার স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সব সরকারের উপরই বর্তায়। তবে বর্তমান সরকারের ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ পদক্ষেপের পর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক দস্তাবেজ (database) প্রণয়ন একটি ফরজ কাজ। তালিকা প্রণয়নের জন্য কেবল সভা-সমিতিতে উন্মুক্ত আহ্বান না করে সরকারের উচিৎ-
১. একটি তালিকা প্রণয়ন টিম গঠন করা; টিমটি তিন ভাগে বিভক্ত হতে পারেঃ
- তথ্য সংগ্রহকারী দল
- যাচাই-বাছাইকারী দল; এ যাবৎকাল সংগ্রহীত বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রাপ্ত তালিকাগুলোকেও যাচাই-বাছাই এর আওতায় আনতে হবে
- তথ্য লিপিবদ্ধকারী দল (এটি টেকি-টিম)
২. বাজেট ধার্য করা
৩. প্রজেক্ট হালনাগাদ ও হস্তান্তরের সময়কাল নির্ধারণ
আইন প্রতিমন্ত্রী ও আইন মন্ত্রীর বর্তমান বক্তব্যসমূহ থেকে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের স্বদিচ্ছা ও উদ্যোগের বর্তমান অবস্থার যে চিত্র পাওয়া যায় তা হলো-
১. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করার জন্য সরকার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে
২. ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আদালত অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধের জন্য আদালত স্থাপনের বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনায় নিয়েছে
৩. এই প্রেক্ষিতে আব্দুল গণি রোডের বদলে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে এই আদালত স্থাপনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করেছে সরকার
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যের শুরু নিয়ে জনগণ যখন ইতিমধ্যেই উদ্বিগ্নই, ঠিক সেই সময়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের ভিন্নমুখী তদবির সরকারের পুরো প্রস্তুতিকে চাপের মুখে ফেলতে পারে বলেও ধারণা করা যেতে পারে। আরো কিছু বিষয় যা বিচার প্রক্রিয়ার শুরুকে প্রলম্বিত করছে তা হলো -
১. ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত কর্তৃপক্ষ ও আইনজীবি প্যানেল বিচার প্রক্রিয়া পরিচালন অনুপযোগী
২. বিচারকার্যে স্বচ্ছতার প্রয়োজনে বর্তমানে তথ্যগত অসম্পূর্ণতা প্রস্তুতিকে ব্যহত করছে
৩. যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় কয়েকটি দেশের মনোভাব নিয়ে সরকারের দ্বিধা-দ্বন্দ
৪. অভ্যন্তরীণ স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত অধিক স্পর্শকাতর বিষয়ে জড়িত হতে সরকারের সময়ক্ষেপন
৫. বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার পূর্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে জড়িত না হওয়ার চিন্তাভাবনা
৬. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার অভাব ও প্রশিক্ষণহীনতা
উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রেক্ষিতে বিচার কার্যে সরকারের বর্তমান অগ্রগতি পরিস্কার হয়। এবং আইনমন্ত্রীর ভাষ্যমতে সরকার যে বিচারের প্রশ্নে আসলেও আপোষহীন তা নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু -
১. পাকিস্তান যেভাবে তদবির করছে, তার কূটনৈতিক জবাবে বাংলাদেশের তৎপরাতায় যে ঘাটতি তা নিয়ে সরকারকে সচেতন হতে হবে
২. বিচার কার্য শুরু হলে পরিস্থিতি যথেষ্ট অস্থিতিশীল হতে পারে বলে আমলাদের যে আশংকা রয়েছে, সে ব্যাপারে সরকারের সকল শৃংখলা বাহিনীকে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা নিতে হবে
৩. বিচারক, তদন্ত কমিটি, আইনজীবিদের প্রশিক্ষণ দিতে মাস দু’য়েক সময় লাগতে পারে কিন্তু নিরাপত্তা জনিত কারণে সেই প্রশিক্ষণ যে অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে তা সরকারকে দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে হবে
অস্থিতিশীলতার যে আশংকা থেকে যায় তার সাথে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টাও পরিলক্ষিত হচ্ছে জোরেসোরেই। স্বাধীনতা বিরোধীদের এবার বেশ উল্টো সুরেই কথা বলতে শোনা যায়। এবারের বিজয় দিবসে বিভিন্ন সভায় ৭১ -এ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় তাদের ইতিবাচক ভুমিকা নিয়ে বক্তব্যগুলো ইতিহাস বিকৃতির পুনঃপ্রচেষ্টা বলা যায়। স্বাধীনতা বিরোধীদের কর্তৃক বিভিন্ন জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ধৃষ্টতা জাতিকে হতবিহ্বল করে দেয়।
বিজয়ের ৩৮তম উদযাপনে আনন্দ, আশা , ক্ষোভ আর হতাশার মিশেলে জাতি যখন চিন্তিত তখন সুদূর ডেনমার্ক হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাস- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে, আবারো জনগণের রক্তে উন্মাদনা ফিরিয়ে আনে।
সরকার যদিও চাইছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনগণ তাদের আলোচনা, মিটিং-মিছিল, প্রচারণা চালিয়ে আন্দোলনটিকে আরো জোরালো, আরো বেগবান করুক কিন্তু বিগত ৩৮ বছর ধরেই তো ক্রমান্বয়ে জনমত গড়ে উঠছে, দাবি জোরালো হচ্ছে, আর সরকারের পালা বদলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেবল একটি প্রতিশ্রুতি মাত্র যেন। লক্ষ্যনীয় যে, সরকারী প্রতিটি বক্তব্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যের শুরু নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোন সময়কালের উল্লেখ নেই। এখনো সেই ’হবে’ বা ই-প্রত্যয় যোগে ’হবেই’ জাতীয় প্রতিশ্রুতিতেই আবদ্ধ হয়ে ’বিচার চাই’ চিৎকারে গলা শুকিয়ে কাঠ হওয়ার উপক্রম জনগণের।
যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া হুট করেই যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য শুরু করা সম্ভব নয় তা সহজেই বোধগম্য হয়। এবং তদন্ত ও তথ্যের স্বচ্ছতার স্বার্থেই এই বিচার কার্য সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটি অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী হবে। তবে বিচার কার্য শুরুর সময়কাল নিয়ে এই ধোঁয়টে অবস্থা আরো কিছু দিন বজায় থাকলে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার দিন দিন বাড়বে বৈ কমবে না। তাই আর কত? এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি সকল বীর ও বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগ, বলিদানের প্রতি প্রকৃত সন্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের। এবার আর কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সকল প্রতিশ্রুতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন শুরু হোক।
************************************
১. মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি (ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
২. যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয়দানকারীদেরও বিচার করা হবে : সাজেদা চৌধুরী (ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৮, ২০০৯)
৩. সরকার যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত আদালতের বিষয় পুনর্বিবেচেনা করছে : আইনমন্ত্রী (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৯, ২০০৯)
৪. যুদ্ধাপরাধমুক্ত দেশ উপহার দেওয়াই আমাদের কাজ (সমকাল, ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে বিএনপি (ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
৬. সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৮, ২০০৯)
৭. স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার দাবি (সমকাল, ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
৮. আমরা সংবর্ধনা চাই না, চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার (সমকাল, ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
৯. যুদ্ধাপরাধমুক্ত দেশ উপহার দেওয়াই আমাদের কাজ (সমকাল, ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
১০. যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে: ডেনমার্কে শেখ হাসিনা (প্রথম আলো,ডিসেম্বর ১৭, ২০০৯)
১১. বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পরোক্ষভাবে কৃতিত্ব দাবি জামায়াতের (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৬, ২০০৯)
১২. এ দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই: আইন প্রতিমন্ত্রী (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৬, ২০০৯)
১৩. বরগুনায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন (সমকাল, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৯)
১৪. যুদ্ধাপরাধের বিচার এখনই হচ্ছে না (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৯)
১৫. শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঘাতকদের বিচার দাবি (সমকাল, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৯)
১৬. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই : প্রধানমন্ত্রী (ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৮)
১৭. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শিগগিরই শুরু: সৈয়দ আশরাফ (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৪, ২০০৯)
১৮. যুদ্ধাপরাধ বিচারে ট্রাইব্যুনাল হবে পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে (প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২১, ২০০৯)