গতকল্য পত্রিকায় দেখিলাম যে অন্যান্য দ্রব্যাদির সহিত আলুর দামও বাড়িতে পারে। দেশে এইবার আলুর ফলন কৃষি ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচ্য হইতেছে । কিছুকাল আগেও আলু সংরক্ষণের অভাবে পচিয়া যাইতেছিল । হায় ! ভেতো বাঙালীকে এই সরকার কোনভাবেই ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে পুরোদস্তর আলু নির্ভরশীল করিতে সমর্থ হন নাই।
ইদানীং ব্লগে রন্ধন পদ্ধতি জনিত রসনামূলক পোস্টগুলি বেশ জনপ্রিয় হইয়া উঠিতেছে। তথাপি কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমার পক্ষে, এই জাতীয় পোস্ট পরিবেশন করা সম্ভবপর হইয়া উঠে নাই। এই ব্যাপারখানা মস্তিস্কে কিছুকাল ব্যাপি ঘুরপাক খাইতেছিল । গুণবতী কন্যা প্রমাণের এই মোক্ষম সুযোগখানি কোনভাবেই হাতছাড়া হইতে দেয়া যায়না এই ব্রতই লইলাম পরিশেষে । অনেক ভাবিয়া তবেই একখানা চটজলদি রেসিপিই বাছিয়া লইলাম । আহামরি কিছু নয় গো, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া , সেই চিরচেনা আলু-চপ । তবে ইহা একটিবার নিজ পাকশালাতে আপন হস্তে পাক করিয়া খাইলে রসনা যে শতভাগ তৃপ্ত হইবে তাহা বাজি ধারিয়া বলিতে পারি।
এইবার আমরা রন্ধনশালায় প্রবেশ করিয়া ফেলি । পাকশালায় প্রবেশের সময় পরিধেয় বস্ত্রটি সুতি হইলে তাহা যেমন আরামদায়ক আবার নিরাপদও । আগেই জানাইয়া রাখিতেছি, এইবার চুলাটি জ্বালাইয়া ফেলুন ।
উপকরণ :
১. আলু - বড় বড়, ৭-৮ টি , সিদ্ধ করিয় খোসা ছাড়াইয়া ভাল করিয়া চটকাইয়া লইতে হইবে
(মাতৃদেবী এই আলুগুলিকে সর্বদাই হল্যান্ডের আলু বলিয়া সম্বোধন করিয়া থাকেন। এইগুলির ফলন যদিও দেশেই ব্যাপক হারে হইতেছে , তথাপি জননী আমার এই আলুর কপিরাইট হল্যান্ডকেই হস্তগত করিতে বদ্ধপরিকর )
২. শাকপাতা (পালং/পুঁই শাক) – - ১ কাপ , হালকা ভাপাইয়া লইতে হইবে
৩. মাশরুম – এক প্যাকেট , হালকা ভাপাইয়া লইয়া, সামান্য তৈল সহকারে হালকা লাল করিয়া ভাজিয়া লইতে হইবে
(আজকাল সুপার স্টোরগুলোতে দেশী মাশরুম প্যাকেট সহজলভ্য এবং মূল্য হাতের নাগালে রহিয়াছে, ২০-২৫ টাকা)
৪. কাঁচা মরিচ – ৪/৫ টা, কুচি কুচি করিয়া কাটা
৫. পেঁয়াজ (মাঝারি) – ৪/৫ টা, কুচি কুচি করিয়া কাটা
৬. আদা, রসুন – ১ চা চামচ করিয়া, কুচি কুচি করিয়া কাটা
সামান্য তৈল সহকারে মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন একটু নরম করিয়া, হালকা রং ধারণ করা পর্যন্ত ভাজিয়া লইতে হইবে
৭. টোস্ট বিস্কিট গুড়া, অথবা পাউরুটি গুড়া
এইগুলি কিনিতেই পাওয়া যায় অথবা নিজেই গুড়া করিয়া লইতে পারেন । আজকাল অবশ্য অরেন্জ কালারের ব্রেড ক্রাম্বও বাজারে পাওয়া যাইতেছে । যাহার ব্যবহারে খাদ্য দ্রব্যটির বহিরাবরণ দর্শনীয় হইয়া ওঠে সহজেই ।
৮. ডিম – ১টা, ভাল করিয়া ফেটাইয়া লইতে হইব
৯. জিরা - জিরা টেলে লইয়া গুড়া করিতে হইবে । এক-দেড় চা চামচ পরিমাণ জিরা গুড়া প্রয়োজন হইবে ।
উপরের উপকরণগুলি নির্দেশনা মোতাবেক প্রস্তুত হইয়া গেলে, একখানা বড় পাত্রে বিস্কিট, ডিম বাদে সকল উপকরণগুলি ভালভাবে মিশাইয়া লইতে হইবে। মিশ্রণের সহিত স্বাদমত লবণ মিশাইয়া নিন ।
এইবার আলু গোল বা চ্যাপ্টা করিয়া আপনার পছন্দসই চপের আকার প্রদান করুন । তারপর চপগুলিকে ফেটানো ডিমে চুবাইয়া ততক্ষনাৎ বিস্কিটের গুড়াতে মাখাইয়া ফেলুন । সবশেষে চপগুলিকে গরম, ডুবো তৈলে, মচমচে, হালকা লাল রং করিয়া ভাজিয়া ফেলুন ।
বাড়তি তেল ঝরাইয়া ফেলিতে চপগুলি টিস্যুর উপরে রাখিতে পারেন । তবে কখনই পত্রিকা ব্যবহার করিবেন না । কারণ, ছাপার কালি স্বাস্থের পক্ষে বড়ই হানিকর ।
এইবার সুপাত্রে কন্যা দান করিবার মত, একখানা সুন্দর থালাতে চপগুলি সাজাইয়া ফেলুন । চাইলে শশা, গাজর, টমেটো দিয়াও সৌন্দর্য বর্ধন করিতে পারেন ।
এই চপ আসলেই উপাদেয়, এবং মাশরুম যুক্ত করিবার কারণেই উহা রসনাতে ভিন্ন মাত্রা আনিয়াছে । সেই সাথে স্বাস্থ্য সম্মত তো বটেই ।
আমরা বাঙালীরা চিরাচরিত খাদ্যাভ্যাসের বাহিরে যাইতে চাহিনা কোনভাবেই । তাই যাহারা মাশরুমের উপকারিতা জানিয়া-বুঝিয়াও মাশরুমকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করিতে নাক সিঁটকাইয়া থাকেন, তাহাদিগকে কিছুটি না বলিয়া এই চপ খাওয়াইয়া দেখুন । গদগদ হইয়া আরেক খানি যে চাহিবে তাহা আর নাইবা বলিলাম ।
উপসংহারে দু’টি কথা না কহিলেই নহে । ইসকুল জীবনে পাঠ্য বইয়ে রসনা বিলাস নামক একখানা গল্পেই বোধহয়, লেখক প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন, খাদ্যের জন্যে জীবন নাকি জীবনের জন্যে খাদ্য ! অদ্যাবধি দূরভিষণে শতেক, রকমারী রন্ধন বিষয়ক অনুষ্ঠানাদি দেখিয়াও সেই প্রশ্নের উত্তরখানা ঘোর অমানিশাতেই রহিয়া গেল !
পুনশ্চ : গরম গরম আলু চপের ছবি দু'খানা ঘন্টা খানেক আগেই তুলিয়াছিলাম ।