হ্যালো বন্ধুরা, কি অবস্তা সবার? সবাইকে শুভেচ্ছা আর স্বাগত জানিয়ে আমি লাবিব ইত্তিহাদুল শুরু করতে যাচ্ছি আমার ২০১৮ সালের সেন্টমার্টিন দ্বিপে ঘুরে আসার ভ্রমণ গল্প।
আজকে আমি চেষ্টা করব সেন্টমার্টিন এর আগের ট্যুর এর পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে কিঞ্চিত কম্পেয়ার করার জন্য আর অপেক্ষাকৃত কম খরচে কিভাবে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়, থাকার ব্যাবস্থা, সেন্টমার্টিন কবে খুলে বা বন্ধ হয়, রিসোর্ট এ রুমপ্রতি কেমন খরচ পরে, খাবার ব্যাবস্থা কোথায়, পুরা দ্বিপ টা ঘুরতে চাইলে কতদিন সময় লাগবে, কি স্পট আছে আর আমার কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা।
সাথে কিছু রিসোর্ট এর ফোন নাম্বার, ট্রলার ঘাটের নাম্বার, যারা শীপে যাবেন তাদের জন্য শীপ এর টিকিট কেনার কিছু ফোন নাম্বার ইত্যাদি দেয়া থাকবে, দরকার হলে সেগুলা টুকে নিতে পারবেন। জানিনা দরকার পরে কিনা এসব তথ্য, তবুও যদি কারো কোন উপকারে আসলে তাহলেই আমার পরিশ্রম টা স্বার্থক।
তো কথা কম, আসুন যার্নিটা শুরু করি।
আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সৌদিয়ার নন এসি বাসে। টিকিট প্রাইস ৯০০ টাকা। বাস ছেড়েছে রাত ৮ টায়, সাধারণত সেন্টমার্টিন এর বাস গুলো সন্ধ্যার পর পর ই ছাড়ে। রাত ৮ টায় ছিল সৌদিয়া পরিবহন এর লাষ্ট বাস আর টেকনাফ গিয়ে পৌছাই সকাল সারে ৬ টার দিকে।
বাস আপনাকে নামিয়ে দিবে টেকনাফ বাজারে, সেখান থেকে ট্রলার ঘাট ৩/৪ মিনিটের হাটার রাস্তা, যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিবে।
ট্রলার ও সীপ এর আপডেটেড ভাড়া লেখার শেষের দিকে পাবেন
এবারের ট্রলারে সেন্টমার্টিন যাত্রায় সাগর ছিল একেবারেই শান্ত যা পূর্ব অভিজ্ঞতার পুরোপুরি উল্টো। আমি মনে ট্রলারে বসে যেই এডভেঞ্চার তথা স্পার্ক খুজচ্ছিলাম, সেটা আসলে এবার পাইনি কারণ সমুদ্র ছিল আমার মতই নিথর নিশ্চুপ। ট্রলারের আসল মজা উপভোগ করতে হলে মার্চ এপ্রিল মে মাসের দিকে চরতে হবে এই ট্রলারে। উত্তাল সাগরের রুপ কেমন ভয়ঙ্কর সুন্দর হতে পারে, সেটার আইডিয়া পাওয়া যাবে সে সময়। আমার বেশ পুরানো একটা ভিডিও ব্লগ আছে সেই সময়কার। চাইলে দেখে নিতে পারবেন।
সেন্টমার্টিনে পৌছে ট্রলার থেকে নেমে প্রথমেই যে প্রশ্ন টা মাথায় আসে, সেটা হচ্ছে কোথায় থাকব। অফ সিজনে আগে থেকে রিসোর্ট বুকিং দেয়ার তেমন কোন প্রয়োজন পরে না। অনেকেই একটা প্রশ্ন করেন, সেন্টমার্টিন খুলেছে কিনা? বা চালু হয়েছে কিনা? বা কবে খুলবে? অদ্ভুত প্রশ্ন, আসলে একটা দ্বীপ আবার খোলা বা বন্ধের কি আছে? আসলে তারা যেটা মিন করেন, সেটা হচ্ছে শীপ চলাচল করচ্ছে কিনা? বছরের যে সময় টায় শীপ চলাচল করে, সেই সময়টাই হচ্ছে ট্যুরিস্ট সিজন, আর যখন শীপ বন্ধ থাকে, সেই সময়টাকে অফ সিজন হিসেবে ধরা হয়।
তবে শীপ চলুক বা না চলুক, সারা বছর, প্রতিদিন কিন্তু টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন এবং সেন্টমার্টিন টু টেকনাফ ট্রলার চলাচল করচ্ছেই! তো যদি কারো যাওয়ার ইচ্ছা থাকেই, তবে সারা বছর ই যেতে পারবেন। যেমন শীপ চালু না হওয়াতে আমরা ট্রলারে করেই গিয়েছিলাম সেন্টমার্টিন।
সেন্টমার্টিন এর কিছু রিসোর্ট ও নাম্বার
সীমানা পেরিয়ে +8801819018027
নীল দিগন্তে রিসোর্ট +8801730051004 (আমার নাম বললে ডিস্কাউন্ট পেতে পারেন)
টেকনাফ ট্রলার ঘাটের নাম্বার +8801817019341, 01730668862 (শুধুমাত্র ট্রলারের টিকিট, দালালের খপ্পরে পড়বেন না)
ট্রলার ভাড়া ২২০ টাকা আর টোল ৩০ টাকা, মোট ২৫০ টাকা
জাহাজের টিকিট স্পটে যেয়েই কিনতে পারবেন, এছাড়া কিছু নাম্বার পরে এড করে দিবঃ
টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন সীপ ভাড়া
কেয়ারী সিন্দাবার মেইন ডেক ৫৫০ টাকা
কেয়ারী সিন্দাবার ওপেন ডেক ৭০০ টাকা
কেয়ারী সিন্দাবার ব্রিজ ডেক ১৪০০ টাকা
বে ক্রুজ ওপেন ডেক ১০০০ টাকা
বে ক্রুজ ব্রিজ ডেক ১৫০০ টাকা
সিজন চলাকালিন সময়ে প্রতিদিন সকাল ৯ টায় শীপ ছাড়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন এর উদ্দেশ্যে। আর সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতি শিপ ছাড়ে বিকাল ৩ টায়। আর সবগুলো ঢাকাগামী বাস শীপ ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, সো বাসের টাইম নিয়ে টেনশনের কিছু নাই। আপনি যদি ঐদিন ই ফিরতে না আ চান বা তবে ফিরতি টিকিট এডভান্স না কাটার পরামর্শ থাকলো।
নোটঃ দূর্যোগকালীন সময়ে সেন্টমার্টিনে রিসোর্টে থাকা ফ্রি। এটা দূর্যোগকালীন নিয়ম।
যে পরিবারের বাসায় আমরা ৩ বেলা নাস্তা খাবার খেয়েছি, নাম সেলিম। তাদের কাছে বিচে বার্বিকিউ করার যন্ত্রপাতি ও আছে। +8801862803718
আবার ফিরে আসি রিসোর্ট এর আলোচনায়, আমরা এবার উঠেছিলাম নীল দিগন্তে নামক রিসোর্টে। একটা লেক এর চারপাশে ছোট ঘড়, সাজানো গোছানো বাগান, ফুড প্লেস, বড় বড় গাছ, বেশ বড় এরিয়া জুড়ে গড়া হয়েছে এই রিসোর্ট। একেবারে সমুদ্র ঘেষা এবং বেশ সুন্দর সন্ধ্যা থেকে ১২ টা পর্যন্ত জেনারেটর সার্ভিস, যেহেতু সেন্টমার্টিনে বর্তমানে কোন সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রিসিটি সিস্টেম নেই। বলে রাখলে দুপুরের দিকেও একবার জেনারেটর সার্ভিস দেয় তারা। সেন্টমার্টিন এর ভালো রিসোর্ট গুলো প্রায় সবই এরকম।
শীপ চালু হওয়ার যাষ্ট ৬/৭ দিন আগে নীল দিগন্তের ভাড়া ছিল ৪ জনের রুম ১৫০০ টাকা পার ডে, ট্যুরিস্ট এর প্রেসারের উপর ডিপেন্ড করে এই ভাড়া বেড়ে ৫০০০ টাকা পার ডে পর্যন্ত উঠতে পারে। ব্যাপারটা সব রিসোর্ট এর ক্ষেত্রেই প্রজোজ্য। তাই অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী এর মধ্যে যারা নিজেরা যাবেন, তাদের প্রতি যাওয়ার আগেই কোন একটা রিসোর্ট এডভান্স বুকিং দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ থাকলো।
ট্যুরিস্ট পুলিশ +8801769690740
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার +8801769690732
ন্যাশনাল ইমার্জেন্সী পোর্টাল 999
রিসোর্টে চেক ইন করেই আমরা ছুটলাম সাগর পানে। আর সেন্টমার্টিন এ ট্যুরিস্ট রা যায় ই ডুবিডুবি করতে। তো সারাদিনে কে যে কবার সাগরে নেমেছে, তার কোন হিসাব নেই। সবচাইতে কম নামা হয়েছে আমার ই।
এবার বলতে হয় খাবার দাবারের কথা। যেহেতু ট্যুরিস্ট এরিয়া, খাবারের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি থাকা স্বাভাবিক। আর সিজনের টাইমে ট্যুরিস্ট বারলে দাম আরো বেড়ে যায়, তাই ফিক্সড কোন প্রাইস বলা যাচ্ছে না। তবে আপনি ৩ ভাবে খাবার ম্যানেজ করতে পারেন, প্রথমত রিসোর্ট এ বলে রাখতে পারেন, তারাই মেনু দিবে, রিসোর্টে খেলে অবশ্যই ১ বেলা আগে জানিয়ে রাখতে হবে,
২য়ত সেন্টমাটিনে কিছু ফ্যামিলি আছে যারা ট্যুরিস্টদের খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করে রিসোর্ট এর থেকে অপেক্ষাকৃত কম খরচে। এবং আমার অভিজ্ঞতা বলচ্ছে, তাদের রান্না ও খাবারের মান রিসোর্ট এর খাবার থেকে ভালো। তাদের ই ঘরোয়া পরিবেশে।
আর ৩য়ত সেন্টমার্টিন বাজারে। আপনি যদি কি খাবেন এই ব্যাপারে শিওর না থাকেন, তাহলে চলে যেতে পারেন বাজারে। সিজনের সময় খাবারের দোকান গুলো বেশ জমে বসে কক্সবাজারের মতই।
এবার বলি কোথায় ঘুরবেন আর পুরো সেন্টমার্টিন দেখতে কত সময় লাগবে। দুইবারের অভিজ্ঞতা হিসাবে, মোটামোটি ভাবে ঘুরতে চাইলে দুই রাত স্টে করতে হবে আপনাকে। আর চারপাশে সমুদ্র হওয়ায় পুরো দ্বীপ টাই ঘুরে দেখার মত। আর সবচাইতে বেশি ট্যুরিস্ট ছেড়াদ্বিপে যায়। ছেড়াদ্বিপ টা দেখার মতই সুন্দর। নৌকা ভাড়া করে বা সাইকেল ভাড়া নিয়ে অথবা পায়ে হেটে যেতে পারেন ছেড়াদ্বিপ।
আমার এবারের ট্যুরে আমি ছেড়াদ্বিপে যাইনি। যাওয়ার প্ল্যান থাকলেও শেষ মুহূর্তে কেন যেন যেতে ইচ্ছা করেনি, ছেড়াদ্বিপ নিয়েও আমার চ্যানেলে আগেরভিডিও আছে। ছেড়াদ্বিপ এর বদলে আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি উদ্দেশ্যহীন ভাবে, বাজারে আড্ডা দিয়েছি, ছেলেপুলের সাথে গল্প আড্ডা গান করেছি মানে সেন্টমার্টিন এর এখানে সেখানে, যেখানে কেউ যায় না বললেই চলে।
এছারা এবার এক্সক্লুসিভ একটা প্লেস চোখে পড়েছে, থেক্স টু রাহাত ভাই। সেন্টমার্টিন এর ঝেটির নিচে। ঝেটির নিচে বসে থাকা বা শুয়ে থাকার সময়টা ভালো ছিল। কোন একদিন বিয়ে করলে বউ কে নিয়ে সেখানে বসে থাকবো হয়ত।
তো এই ছিল এবারের ৩ দিন ২ রাতের সেন্টমার্টিন ট্রিপ। ঢাকা সেন্টমার্টিন ঢাকা এই ট্রলার এডভেঞ্জার ট্যুরের জনপ্রতি খরচ ছিল ৪৭০০ টাকা করে। আমরা ২ রাত স্টে করেছি সেন্তমার্টিন দ্বিপে। ফিরেছি মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্স বাজারে।
লেখাটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন। আর লেখাটি পূর্বে মানে গতকাল আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ ডায়েরী তে প্রকাশিত। আর কোন প্রশ্ন বা ইনকোয়ারি থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন কমেন্টে আর আমার লাইভ জার্নির সাথে এক হতে বা রানিং ট্যুর এর ছবি, ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ গুলো দেখতে যুক্ত হতে পারেন ইনস্টাগ্রামে।
আল্লাহ্ হাফেজ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫২