গত বছরের ১৯ এপ্রিল রেলওয়েতে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদে লিখিত পরীক্ষা হয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাওয়ায় নিয়োগ দীর্ঘায়িত হচ্ছিল এবং প্রথমদিকে প্রতিপদে তিন লাখ করে টাকা নেওয়া হলেও শেষদিকে তা চার থেকে পাঁচ লাখে গিয়ে পৌঁছে। গত সপ্তাহে এ পদে ৪০০ জনের নিয়োগ চূড়ান্ত করে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা। 'অনেক আগে থেকে এ পদে নিয়োগের বিপরীতে ঘুষ নেওয়া হচ্ছিল। সর্বশেষ গত সপ্তাহে শেষবারের মতো টাকা নেওয়া হয়েছে। ওই টাকার ভাগ দিতে রবিবার রাতে জিএম ঢাকায় গিয়েছিলো। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতা মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলে, 'ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদ ছাড়াও রেলওয়ের অর্ধশতাধিক পদে প্রায় পাঁচ হাজার লোক নিয়োগে ২০০ কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্য চলছে। ঘুষ ছাড়া কোনো পদে নিয়োগ হচ্ছে না। জানা যায়, রেলওয়েতে ওয়েম্যান, নাম্বার টিকার, খালাসি, জুনিয়র অডিটরসহ বিভিন্ন পদে সাড়ে ৭ হাজার লোক নিয়োগ চলছে। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ব্যাপক নিয়োগ-বাণিজ্য। চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে এক থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়। এ ঘুষের টাকা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বণ্টন চলছিল। ওই ঘুষের টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ইউসুফ আলী মৃধা ও পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার তোফাজ্জেল হোসেন। পূর্বাঞ্চলের ঘুষের টাকারই একটি অংশ নিয়ে তারা গত সোমবার রাতে মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলো। এদিকে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে একটি প্রাইভেটকারযোগে রেলমন্ত্রীর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা ও জিআরপি পুলিশের সদস্য এনামুল হক পিলখানা এলাকায় ৭০ লাখ টাকাসহ ধরা পড়ে। ওই সময় রেল ভবন থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে তারা ধানম-ির দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু পিলখানা এলাকায় যাওয়ার আগেই গাড়িচালক মো. আজম এপিএস ও অন্যদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু ওমর ফারুক গাড়িচালককে বলে, 'তোকে তো বেতন দেওয়া হয়। আবার টাকা চাস কেন?' ১৫-২০ মিনিটের বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে গাড়িচালক পিলখানার তিন নম্বর গেটের সামনে আচমকা গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে এবং চিৎকার দিতে থাকে। ওই সময় বিজিবির সদস্যরা এগিয়ে এলে গাড়িচালক তাদের জানান, গাড়ির ভেতরে টাকা আছে। এরপর বিজিবি সদস্যরা বস্তাভরা টাকাসহ তাদের সবাইকে আটক করেন। জানা গেছে, গাড়ির চালক আলী আজমকে ৫০ হাজার টাকা ভাগ দেয়ার কথা ছিল; কিন্তু তারা চালককে ১০ হাজার টাকা দেয়। এ নিয়ে পিএস ও চালকের মধ্যে বাগ-বিত-া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চালক গাড়িটি বিজিবির সামনে নিয়ে যায়। আটক হওয়া গাড়ি থেকে ৭০ লাখ নাকি ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওমর ফারুক ২৫-৩০ লাখ টাকার কথা জানিয়েছেন। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই গাড়ি থেকে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার মুচলেকা দেয়ার সময় ৭০ লাখ টাকার কথা প্রকাশ করা হয়। বাকি ৪ কোটি টাকা কোথায় গেছে, তার হদিস পাওয়া যায়নি। এ টাকা নিয়ে মন্ত্রী ও তার এপিএস দু’ধরনের তথ্য দিয়েছেন। এপিএস বলেছেন, তিনি এ টাকা নিয়ে মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। জিএম মৃধা ও তার দাবি- মন্ত্রী এই টাকার ব্যাপারে জানেন। তবে মন্ত্রী বলেছে, এ টাকা নিয়ে এপিএস তার (মন্ত্রীর) বাসায় যাচ্ছিলো না। তিনি টাকার ব্যাপারে কিছু জানেন না। দু’ধরনের বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের ধূম্রজাল। বলাবাহুল্য বাংলাদেশের মৌলবাদী হিন্দুদের হোতা, উগ্র হিন্দুদের নেতা, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যের কু-কণ্ঠ, সংবিধান থেকে ইসলামী আদর্শ ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রকারী সুরঞ্জিত যেন এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোই চেষ্টা করছে; মাছে ভাতে বাঙালী সবাই খুব ভালভাবে বুঝে গেছে যে, বিজিবি যে টাকা আটক করেছে এটা ঘুষের টাকা এবং এ টাকার ভাগীদার হলো সুরঞ্জিত সেন। বলার অপেক্ষা রাখে না এ সুরঞ্জিত একদিকে শুধু এদেশের হিন্দুইজম কায়েমের লক্ষ্যেই আগায়নি পাশাপাশি সে একজন সজ্জন ব্যক্তিত্বের মুখোশ ও আঁটসাট করে বেধে রেখেছিলো। কিন্তু হাক্বীক্বত বলে কথা। রেলমন্ত্রী হবার পর বড় দর্পভরে সে উচ্চারণ করেছিলো রেলের দুর্নীতির কালো বিড়ালটা কোথায় তা সে খুঁজে বের করবে। ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’র মত সে বিড়ালকে সুরঞ্জিতের বা কারোরই খুঁজে পেতে প্রচেষ্টা লাগেনি বরং সে বিড়াল পাওয়া গেল খোদ সুরঞ্জিতের গাড়িতে। অর্থাৎ সুরঞ্জিত নিজেই শুধু চোরই নয় বরং বাঙালীর খাঁটি ভাষায় জোচ্চোরও বটে। চোরের মার বড় গলার মতই এখন সে গলাবাজি করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই যে মূল দুর্নীতিবাজ ইহা বুঝতে আর কারো বাকী নাই। বলাবাহুল্য এরূপ একজন জোচ্চোর, মহা দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশের মন্ত্রী পদে থাকতে পারে না। কারণ মন্ত্রী হিসেবে সে তার কৃত শপথ ভঙ্গ করেছে। কাজেই সুরঞ্জিতের পদত্যাগ না হলে দেশ সংবিধান সঙ্কটে পড়বে। সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এর কোন অন্যথা বা এর কোন বিকল্প নেই। সঙ্গতকারণেই সরকার যত তাড়াতাড়ি এটা বুঝবে ততই তার মঙ্গল।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:০০