এদেশ থেকে ভারতে টাকা পাঠায় শুধু হিন্দুরা। তাই এটা হিন্দুদের দেশ না। ওই হিন্দু ভারত যা। হিন্দুরা ভারতীয় ওরা বাংলাদেশি না। বাংলাদেশের সমাজে এই কথা গুলো আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এমনকি চ্যাম্পিয়ন সেকুলার পার্টির নেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও হিন্দুদের এক পা ভারতে আরেক পা বাংলাদেশে। হিন্দুদেরকে দেশ প্রেমিক হওয়ার নসিহত দেন শেখ হাসিনা। লন্ডনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সাক্ষাতের সময় এসব বলেন শেখ হাসিনা। এদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেন, হিন্দুরা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে মুসলমানদের সব জায়গা জমি দখল করে নিবে। যদি আওয়ামীলীগকে মুসলমানরা ভোট দেন।
সাম্প্রদায়িক এসব কথা বলেও এদেশের নেতা নেত্রীরা পার পেয়ে যান। বাস্তবতা বির্বজিত এসব কথার কোনো প্রতিবাদ বা সমালোচনা হয় না এদেশে। পত্রিকার কলাম লেখকরা এসব বক্তব্যর উদাহরণ টেনে কোনো যোগ্য জবাব দেয় না। জবাব তারা দিতে পারতেন যদি ভাড়াটে কলাম লেখক না হতেন।
এবার আসুন ওপরের কথা গুলো বিশ্লেষণ করি। হিন্দুরা ভারতে টাকা পাঠায়। সত্যি কি শুধু হিন্দুরা ভারতে টাকা পাঠায়। মুসলমানরা কি টাকা পাঠায় না ? ভারতের ব্যাংকে বহু মুসলমানের টাকা আছে হিন্দু নামে।
ভারত সরকারের কাছে নিশ্চয় হিন্দুদের টাকা পাঠানোর একটি তালিকা থাকবার কথা। কিন্তু সে তালিকা ভারত সরকার প্রকাশ করে না কেনো? হিন্দুরা যদি এদেশ থেকে টাকা পাঠায় তবে কার টাকা পাঠায়। নিজেদের কামাই করা টাকা না মুসলমানদের মেরে দেওয়া টাকা পাঠায়।
নিজেদের কামাই করা টাকা ব্যক্তি যেকোনো জায়গায় পাঠাতে পারে সেটা তার অধিকার। কিন্তু মুসলমানদের মেরে দেওয়া টাকা, যে টাকায় সবার হক আছে সেটা কি হিন্দুরা ওই পারে পাঠায়? যদি পাঠায় তবে তাদের কে এদেশে দুধভাত খাইয়ে পালা হচ্ছে কেনো?
এবার আসি হিন্দুরা ভারতে চলে যায়।ভারতে কি শুধু হিন্দুরা যায়। যদি মুসলমানরা না যায় তবে নূর হোসেনরা কেনো বাপি সাহা হয়ে ধরা খায়। কেনো ভারত থেকে যত পুশব্যাক হয় শুধু মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোক দেখা যায়। কেনো মুসলমান ফেলানির লাশ কাটাতারে ঝুলতে থাকে? কেনো আসাম বিহার, দিল্লি ও বোম্বাইতে বাংলাদেশি বলতে মুসলমানদের বোঝানো হয়। এবং ধরপাকরের সময় তাদের ওপরই অভিযান চালানো হয়। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে মুসলমানরাই ভারতে বেশি যায়। তাদের অনেকে নাম পাল্টিয়ে হিন্দু নামে সেখানে বসবাস করে। যে কারণে তাদের কে সহজে ধরতে পারে না।
আরেক দিকে বাংলাদেশের নিম্ম শ্রেণীর গরীব যেসব মুসলিম যায় তারা নাম পাল্টাতে পারে না। কারণ নাম পাল্টিয়ে থাকার মত পয়সা পাতি তাদের নাই। যে কারণে তারা ধরা পড়ে। ভারত থেকে বহিষ্কৃত হয়। আজ ভারতে যদি বাংলাদেশি ধরার অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে দেখা যাবে বহু পয়সা ওয়ালা মুসলমানের বাড়ি গাড়ি বউ ভারতে রয়েছে। এরা হিন্দু নামে সেখানে রয়েছে ওই নূর হোসেনের মত। তাদের এপারে মুসলিম বউ ওপারে হিন্দু বউ। এরাই দুই দেশে থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় হিন্দুদের কে ভারত যাবার জন্য একমাত্র ভাবে দায়ী করা হয়। যেটা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোন। এমন দৃষ্টিকোন নিয়ে আমি এ বিষয়টিকে দেখি না।
আরেক টা কথা এক দেশে খেয়ে আরেক দেশে টাকা পাঠানো যদি অপরাধ হয়, বেঈমানি হয় তবে বাংলাদেশি যেসব ভাইরা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠাচ্ছেন তারা কি সব বেঈমান ? হিন্দুরা যদি ভারতে টাকা পাঠিয়ে অপরাধী হোন তবে যারা লন্ডন, আমেরিকা, মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশের টাকা পাঠিয়ে সে দেশে প্রাসাদ তৈরি করছেন, মার্কেট তৈরি করছেন, তারা কেনো অপরাধী না? তাদের দেশ প্রেম নিয়ে কেনও কথা উঠে না। আজ মানিলন্ডারিং মামলা কাদের বিরুদ্ধে যারা হিন্দুদেরকে ভারত যা বলে রাত দিন বকতে থাকেন তারাই এসব অভিযোগে অভিযুক্ত। যে নেত্রী বলেন, হিন্দুদের দেশ প্রেমিক হতে তার ছেলে বউ থেকে শুরু করে নাতি নাতনি ভিন্ন দেশে বিয়ে করে সেসব দেশে সেটেলড। এদেশে সফর করতে আসেন মাঝে মধ্যে। তেনাদের এক ঠ্যাং ইউরোপ--আমেরিকা আরেক ঠ্যাং বাংলাদেশে থাকলে দোষের কিছু না। দোষ শুধু হিন্দুদের এক ঠ্যাং ভারত থাকলে। তখন মোমিন মুসলিমদের পশ্চাৎ জ্বলিয়া ছারখার হয়ে যায়। এদেশের কোনো কোনো মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এইরূপ।