somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা সিলেট (লালাখাল) ৬ষ্ঠ পর্ব

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যালো, ক্যামন আছেন।
আলহামদুল্লিলাহ স্যার ভাল আছি।

আগামীকাল, আমাদের একজন মেহমান আসবে সিলেটে, তাকে আপ্যায়ন করতে হবে এবং তাহার সফরসঙ্গী হতে হবে। তিনি যে সব জায়গা ভ্রমন করতে চান, তাহাকে সে সকল জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।

তিনি হলেন দেশ রত্ন বা আমার দেশের একজন সম্পদ বলা চলে। তিনি ডঃ আতিক সাহেব, তিনি এক নাগারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডঃ পাশ তার সাথে সাথে প্রত্নতাথিক বিভাগের টিম লিডার ও বটে। তাহার চিন্তার উপর নির্ভর করবে আমাদের প্রত্নতাথিক বিভাগের উন্নয়ন। খুবই ভাল মনের মানুষ। দুই সন্তানের পিতা, একজন পুত্র ও এক জন কন্যা সন্তান তাহারা বড়ই সান্ত সভাবের, তবে কন্যা সন্তানটিকে তিনি বেজায় আদর করেন, যেন নয়নের মনি, দেখে ভাল লাগলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই, নামাজ আদায় করে, আর বিছানায় থাকলাম না।নেমে পড়লাম, আজ একমাত্র কাজ হলো ইঞ্জিনিয়ার রাজিব সাহেবরে সাথে যেতে হবে এবং ডিন সাহেবের সফরসঙ্গী হতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। ড্রাইভার সাহেবকে কিছুটা উৎসাহ যোগালাম, এমনেতে সে ভাল স্বভাবের মানুষ এবং হাস্য উজ্জল গোছের, যে কেহর ভাল লাগবে। গোসল সেরে কাপড় পড়ে সবাইকে ডাকতে লাগলাম। একে তো শীতের দিন তার সাথে আবার সকালের ঘুম থেকে উঠতে একটু কষ্টই হবে এটা আমি ভালভাবেই জানি, তাই এতো চেষ্টা।

যতই তারাহুড়ো করলাম কিন্ত বাহির হতে একটু দেরি হলোই, কিছুই করার নাই আমার মতো সবাই তো আর সকালে উঠা্র অভাস নাই।যাই হোক, একটি ছেলে তার বাড়ী যাফলং তাকে আমাদের সফর সঙ্গী করতে ভূল করি নাই। তিনি আমাদেরই একজন কর্মচারী (ইলেট্রিক বিভাগের)। আমরা চার জন রওয়ানা হলাম, লালাখাল ভ্রমনের উদ্যেসে কিন্তু যিনি প্রধান ব্যক্তি তিনি সবে মাত্র ঢাকা থেকে রওয়ানা হলেন। আমরা সিলেট থেকে সারিঘাটের উদ্যেসে গাড়ীতে উঠলাম, দক্ষ ড্রাইভার ৮০/১০০ মাইল গতিতে গাড়ী চলছে। আমরা প্রথমে "গ্রীন রিসোটস" নামক একটি অফিসে ডুকলাম দেখে তো চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, সে এক এলাহী কারবার একাধারে পাহাড় তার মধ্যে আবার জঙ্গল, সেখানেই দেখতে পেলাম অনেকগুলো আবাসিক হোটেল, যেখানে সাধারন মানুষ থাকার কোন যোগ্যতাই নাই বলেই চলে। এখানে থাকতে হলে, অগনিত টাকার মালিক হতে হবে।যে টাকা গুনে শেষ করা সম্ভব নয়। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আমাকে বললেন, একদিন, একবেলা খেয়ে ১৪,০০০/- টাকা বিল দিয়ে ছিলাম, শুনে তো আক্কেল গুড়ুম। আসল কথা হলো সে দিন খাবার পর তাদের পকেটে কোন টাকাই ছিল না। পরিশেষে সেই বিল কার্ড এর মাধ্যমে পরিশোধ করিয়া তাহারা নিস্তার পাইয়া ছিল বটে। তাই এই জায়গা টা ইঞ্জিনিয়ার রাজিব সাহেবের কাছে একান্তই স্বরনীয় হয়ে রয়েছে। গল্পটা শুনতে আমার কাছে হাসির মনে হয়েছিল কিন্তু যখন ঐ রিসোর্টস অফিসে ডুকলাম তখন আমার ঠিকই বুঝতে আর বাকি থাকলো না যে, রাজিব সাহেব মোটেই ভুল বলে নাই।

প্রতিটি গেটে গেটে দারোয়ান দাড়িয়ে আছে, সালাম ডুকছেন। একবার পাহাড়ের উচুতে উঠতে হয় আবার নীচে নামতে হয়, দক্ষ ড্রাইভার ছাড়া যেন তেন ড্রাইভার এই সব জায়গায় ড্রাইভ করতে পারবে না, তা আমার বুঝতে একটুও দেরি হলো না।আপনার যদি অগনিত টাকা থাকে অবশ্যই জাবেন সেখানে। তবে স্থাপনা ও সাজ-সজ্জ্য গুলো কিন্তু দেখার মত, চোখ জুড়ায় মন কারে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তাদের কাছে জানতে চেষ্টা করলাম কিভাবে বোট নিয়া লালাখাল যাওয়া যায়, তাদের কোন বোট আছে কিনা, তাদের বোট গুলো ভাড়া অনেক বেশী, শুনে মাথা খারাপ হবার পালা, ৫ সিটের একটি বোট ভাড়া ৬০০০/- ছয় হাজার টাকা, অসম্ভব ব্যাপার, তাই আমরা তাদের অফিস থেকে এক প্রকার বেড়িয়ে আসলাম, এখন আমাদের গন্তব্য হলো কিভাবে লালাখাল ভ্রমন করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করা এবং নৌকা ভাড়া করা।ছুটলাম সারিঘা্টের দিকে, নৌকার দাম দর করলাম, কিছুই কুল কিনারা করতে পারলাম না। তার পর আবার নেগেটিভ চিন্তা তো আছেই। তবে মোটা মুটি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম নৌকার ভাড়া কত হতে পারে সে ব্যাপারে একজন স্থানীয় লোকের সাহায্য নিলাম তিনি আমাদের একজন সাপ্লাইয়ারস, নাম সোলায়মান তিনি গন্যমান্য ও বটে। ভাল একজন ব্যবসায়ি, তিনির সাহায্য নিলাম। যাই হোক মোটা মুটি ভাল ভাবেই নৌকার ভাড়ার কাজটা সাড়া হলো। মাঝিকে ১৩০০/- তেরশত টাকা দিতে হবে। তিনি আমাদের কে নিয়া যাবে এবং দেখার পর আবার ফিরে আসবেন।

আমরা আবার সিলেট ফিরে আসলাম, ডঃ আতিক স্যারের সাথে হোটেল "লা রোজ" এ দেখা করলাম, এবং তাহাকে তাহার ভ্রমনের গতি সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করলাম। তিনি আসলেই বেশ সুন্দর স্বভাবের মানুষ, একটি হাসি দিয়ে বললেন, আপনারা একটু বসেন আমরা ৫ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়ে আপনাদের সঙ্গী হবে। যেই কথা ঠিক সেই কাজ, তাহারা নেমে আসলেন হোটেল থেকে, এবার খাবার পালা, তিনিই বললেন, ৫ভাই হোটেলে খাবেন, কিন্তু এটা তো সম্ভব না, কারন এই হোটেলে খেতে হলে লাইন করে দাড়িয়ে থাকতে হবে। তবেই খাবার খাওয়া যাবে। বাধ্য হইয়া সেই আশা ত্যাগ করতে হলো এবং পানসি নামক একটি হোটেলে, সেই মানেরই তবে খাবারের মান বা স্বাদ এতো টা ভাল না, যেই মান আছে ৫ভাই হোটেলে।

নানা ধরনের ভর্তা, ভাজি, পরে পাবদা মাছ, কিন্তু আমি তা খাইনি আমি খেয়েছি ভর্তা এবং একটি কোয়েল পাখির মাংস, তবে খাবার গুলো প্রা্য়ই মিষ্টি লাগে, শুধু ভর্তাটাই একটু ঝাল হয়েছিল। উনার স্ত্রী, তিনিও সুটকি ভর্তা বেশ মজা করে খেয়েছিল তা আমার বুঝতে বাকি থাকলো না। সবার শেষে দধি, এটা আমার পারিবারিক একটি রেওয়াজ, লোভ সামলাতে পারলাম না। একদম চেটেপুটে খেয়ে ফেললাম। বরাবরই আমি ভোজন প্রিয় লোক। হোক বাড়ীতে বা অন্য কোথাও খাবার টা একটু ভাল চাই।

উদ্যেশ্য, লালাখাল, গাড়ীর গতির পরিমান একটু বেশীই, ভয় লাগতাছে আবার ভালও লাগতাছে কারন নতুনের সাথে পরিচিত হবো। একটা বিরাট ব্যাটারও বটে, অদেখাকে দেখা, অচেনাকে চেনা, এই অধম্য নেশা ছোট বেলা থেকেই পেয়ে বসেছে। গাড়ী তো বেশ গতিতে ছুটছে, কিন্তু খাবারের শেষে একটু ঘুম সে কিন্তু আমার চোখের কোনে এসে হালকা বাতাস দিতেছে, যাত্রাপথে ঘুমাবার অভ্যসটা অনেক আগেই পরিহার করেছি। পৌছলো সারিঘাট, উঠলাম একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকাতে, যাত্রি আমরা ৭ জন সাথে আছে, চানাচুড়, চিপস, বিস্কুট, পানিয় ইত্যাদি, কিছু সময় পর সেই খাবার মিসেস আতিক আমাদের হাতে তুলে দিলেন, এর মাঝে যে জিনিস টা আমি পেলাম সেটা হলো আমার মাতৃভুমির একটা ঘন্ধ বা স্বাদ, যেনে নিলাম তার বাড়ী কোথায় । কোথায় আবার সেয়ে আমার দেশের মেয়ে, আমার মাটির, তাই আতিয়তায় এতটা আন্তরিক। চোখের কোনায় জল আসতে বাকি থাকলো না, কারণ মাকে দেখি না অনেক দিন হোল, জানি না তিনি কেমন আছে। হাজারো কাজের ফাকে মায়ের সান্নিধ্য হারেয়ে যেতে বসেছে।

নৌকাটা বেশ বেগেই ছুটছে, তাতে প্রায় ৫০ মিনিট সময় লাগলো। যেতে যেতে ছবি তুললাম নদী ও পাহাড়ের মিলন সে এক অপূর্ব সমাহার তো বটে। তার উপর বিকেলের রোদের একটা সোনালী আভা, সত্যি মনটাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেল। আল্লাহু তায়ালার কি অপূর্ব সুন্দয্যের সমহার, না দেখলে বুঝাতে পারবো না, এত সুন্দর করে মানুষ কোন কিছুই তৈরি করতে পারে না। আর মহান সৃষ্টি কর্তার ইশারায় এই নৈশ্বর্গিয় সুন্দয্য লিলা ভুমি এই বাংলাদেশ যে তার প্রেমিক চোক দিয়া না দেখেছে, তাকে আর যাই বলি তবে বাংগালী বলা যাবে না। এই আমার বাংলা মা, মাতৃভুমি, কত যে দেখার মত জায়গা আছে একবার আসুন দেখে যান, এই সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকায় "লালাখাল" "চা বাগান" সত্যি সুন্দরের এক রানী বটে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×