সিলেটে একটি খাবার প্রায়ই সব খাবারের দোকানে খেতে পাওয়া যায়, নাম "আখণি"। প্রথমে নাম শুনে একটু আশ্চর্য হয়ে ছিলাম। তবে পরে, আমি বুঝতে পারলাম, যে এটি একটি সাধারন খাবার বটে। সবাই খায়, তেলে রান্না করা ভাত, তার সাথে ছোলা বুড রান্না করা, বিভিন্ন দোকানের আখনির মান এক এক রকম।
এই আখনির প্লেট বিভিন্ন মূল্যে আপনী পাবেন, কোনখানে এর দাম হয় ১৫ টাকা আবার কোথাও বা ১৫০ টাকা, তবে দেখা যাক কোথাকার আখনী কেমন দাম ও কেমন মজাদার।
যখন রেললাইনের পাশ্বে বা এর আশে পাশ্বে খাবেন তার দাম মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় পাবেন। তার সাথে পাবেন তেল ভাত ও চনা ডাল রান্না, একটু জোল জোল, তবে তার সাধের দিক থেকে ভাল না হলেও তার চাহিদা কিন্তু মোটেই কম না। সাধারন মানুষ রিক্সাওয়ালা তারা সবাই কিন্ত তাকে পেট পুড়ে খাচ্ছে্। যদি ও খাবারটা একটু নিম্নমানের মনে হয তবে মানবিকতার সাধটা কিন্তু একটু বেশীই আমার কাছে মনে হয়। এখানে আসা মানুষগুলো কিন্তু পরিতৃপ্তি সহকারে আহার করছে। আমি তাদের সাথে একটু শেয়ার হলাম এবং মানবিকতার সাধটুকু আশ্বাদন করলাম। সে এক অপরিসিম অনুভূতি, এটা যদি কোন মানুষ একটু খাটি ভালবাসা না নিয়া সেখানে যায় তারা কিন্তু সেই সাধ পাবে না। এই সাধারন খাবার খেয়ে যে কত খুশি না দেখলে অনুভব করা মোটেই সম্ভব নয়। আমি তাদের সাথে একার হয়ে দেখতে লাগলাম আর আল্লাহুর সৃষ্টির প্রশংসা করতে লাগলাম। একজন রিক্সাওয়ালা একটু বেশ বেশী বয়স, ৬০ এর কোঠায়, যাত্রী নামাইয়া, গামছা দিয়া নিজের ঘাম মুছতে মুছতে দোকানে প্রবেশ করে দোকানীকে বলতে লাগলেন, এক প্লেট দায়, দোকানী কি বললো, বুঝলাম না, ড্রাইভার বললো অয় অয়, দোকানী তখন কি বললো তা না বুঝতে পারলেও পরে ঠিকই বুঝতে পারলাম। আমি এই বয়স্ক রিক্সা ড্রাইভারকে একটু প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, সে এই আহারে খুবই তৃপ্তি পেয়েছেন। তিনি সাথে পিয়াজু খেয়েছে।
এবার আমরা একটু সামনে যাবো কিন ব্রিজ পার হয়ে তার আশে পাশ্বে, যাকে বলা হয় পুলের মুখ, আবার উত্তর পারকে বলা হয় সুরমা পয়েন্ট, এখানে অনেক গুলো খাবারের দোকান পাবেন যদি এখানে খাবেন তো তার দাম ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, তবে এখাবে খায় পিডব্লিউ ও অফিস পাড়ার লোকজন, আইনজীবি, কর্মচারী তারা দুপুরের খাবারটা কিন্তু এখানেই শেরে ফেলেন, যারা একটু কম আয়ের বা যারা একটু সঞ্চয় করতে চান তারাই একমাত্র এখাবে একটু দুপুরের খাবারটা এই আখনীর মাধ্যমে সেরে ফেলেন, তেল ভাত, ডিম, ছোলার ডাল, সাথে একটি সুকনা মরিচ ভাজা পাবেন। যাইহোক, খাবারটা কিন্তু মন্দ না তবে এর সাথে কেমন যেন একটা মায়া বা ভালবাসার অভাব আছে। আর বেশীর ভাগই আপনাকে ঠকাতে চেষ্টা করবে যেন তাতে সন্ধেহ নাই বলে কিন্তু আমার মনে হয় না। কেমন যেন একটা বেসাধ রয়েই গেল আবার যদি একটু ব্রিজের নিচে বা সুরমা নদীর পারের দিকে তাকান তবে আপনী দেখতে পাবে ঝাকে ঝাকে জোড়া জোড়া ছেলেও মেয়ে বসে বসে ফুসকা খাচ্ছে আর ্আড্ডা মারছেন। তবে সেটা কিন্তু জমে উঠে বিকাল থেকে রাত ১০ ঘটিকা নাগাদ। এই আড্ডাটা আপনার আমার কাছে যতই ভাল মনে হউক না কেন কিন্তু সিলেটের স্থায়ী সাসিন্দাদের কাছে কিন্তু মোটেই ভাল লাগে না। আমার যতদুর চোখ যায় সিলেটের স্বায়ী বাসিন্দারা ও তাদের স্ত্রী, কন্যা সবাই পর্দানশীল বটে। এটা একটি শিক্ষনীয় বিষয়ও বটে। আমরা ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারি।
আপনী যদি আরও ভাল "আখনি" খেতে চান তবে যেতে হবে "হোটেল পাচঁভাই" এই রকম মানের ভাল হোটেলে তবে সেখানে খেতে হলে একটু পয়সাওয়ালা, বা কাচাঁ পয়সার মালিক হতে হবে্। তবে আমি একটা কথা আপনাকে বলতে পারবো, আপনার পকেট কাটার সম্ভাবনা একটু কম আছে। এখানের আখনির সাথে পাবেন ডিম ও মাংস। খাবার টা একটু সুসাধু কিন্তু দামে একটু চড়া ৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মত, কিন্তু হোটেলের ব্যবধানে এর দামটা কিন্তু একটু কমবেশী হয়ে যাবে তা কিন্তু বলে রাখলাম তখন যেন আমার প্রতি আপনারা রাগ না করেন। আপনী "হোটল পানসি" এই মানের হোটেলে খেতে গেলে যদি আপনী স্ব-পরিবারে যানে তবে খাবার পাবেন এক ধরনের আবার যদি একা একা যান তবে খাবার পাবেন অন্য ধরনের। আবার দাম সেই ব্যবধানে, একটা ব্যাপার আমি লক্ষ করেছি, সেখাবে সিলেটের স্ব-পরিবারের খাবারের সদস্য সংখ্যাই ্একটু বেশী, আলাদা আলাদা কেবিন আছে, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, বা আত্মিয-স্বজন সহই তারা আসে এবং দুপুরের খাবারটা সেরে ফেলেন। অথবা বিদেশগামী বা বিদেশ ফেরৎ পরিবার গুলোই বেশীভাগ খাবারটা এই রকম হোটেলগুলোতে খেতে পছন্দ করছেন।
আমি সিলেটের যেখানেই গিয়াছি "সিলেটের আখনি" খাবার সবার কাছে পরিচিত একটি উপাদান তাতে কোন সন্দের অবকাশ আর নাই।
সেদিন আমার অফিসের কুক আসেনি খাবারের ব্যাপার টা একান্তু নীজ ব্যবস্থাপনা সরতে হবে। কি আর করা। আমার বাসার পাশ্বের একটি হোটেল দেখে ইচ্ছা হলো আখনি খাবার খেতে। আমার এক সহকর্মীকে নিয়ে বসে গেলাম। আসলে সেটা ছিল নিতান্তই খুধা নিবার, সামনে খাবার আসলো, মুখে খাবার তুলতেই আস্ত একটুকরা আদা আমার দাতে এসে পড়রো উপায় নাই নিবৃতে চিবুতে লাগলাম ভাবলাম এটাই শেষ আর নাই, গ্লাসে পানি নিয়া একপ্রকার গিলে ফেললাম, পেটে প্রচন্ড খুধা খেতে তো হবেই আবার একচামচ মুখে তুলতেই দুই টুকরা আদা আমার মুখে স্থান পেল। ভাবলাম এটাই শেষ, না শেষ হয়ে হয় না প্রত্যেক চামচেই দুই একটুকরা আদা আমার দাতের সাথে এসে যুদ্ধে সামিল হয়। কিন্তু কিছুই করার নাই। আমি যখন তাদের কাছে বলতে চাইলাম, তারা আমাকে আদার গুনাগুন শুনাতে লাগলেন। তবে আমি যে আদার গুনাগুন জানিনা তা কিন্তু নয়। তবে তাদের গুনাগুনটা একটু আলাদা। আদা খাইতে আমার আপত্তি নাই কিন্তু সেই আদা হতে হবে বাটা, এই ভাবে যুদ্ধরত কোন সৈনিকের মত আচরন করা তার কাজ নয়। আমি এই কথাটা দোকানীকে বুঝাতে সক্ষম হলাম না। যাই হোক একে তো রাক্ষুসে খুধা তার উপর টাকার খাবার, একটু কষ্ট হলেও অযাচিত তৃপ্তি সহকার গলগ্রহ করিয়া, চার গ্লাস পানি পেটের মধ্যে চালন করিয়া দিলাম। খুধা নামে শব্ধটা আমার থেকে একটু দুরে সরে গেল। তবে এই আদার উপকারীতা পরক্ষনে আমি অনুভব করিতে পারিয়াছিলাম, তাহা পরের দিন আমার পেটের যা অখাদ্য দ্রব্য জমা ছিল তাহা টযলেটে অপসারনের পর।
এই সিলেটে কিছু দেখার আছে, আছে কিছু শিক্ষার যদি আপনী শিক্ষতে চান। তাদের কাছে এসে একবার ঘুরে যান এবং হযরত শাহ জালাল (রাঃ) ও হযরত শাহ পরান (রাঃ) এবং ৩৬০ আওলিয়াদের রওজা জিয়ারত করতে পারেন। একটা কথা আমি আপনাদের বলতে পারবো আল্লাহুর রহমত পেতে চাইলে একবার আসুন না সিলেট ঘুড়ে যান। আশা করি বিফল হবেন না। তৃপ্তি পাবেন।
এখানে পাহাড় আছে, আছে জাফলং, আছে চা বাগান, আছে বিচিত্র সুন্দরের সমারহ।
চলবে।............................................
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭