ভোরের সিগ্ধ আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। রাতের আঁধারে ধূসর হয়ে যাওয়া প্রকৃতি ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে তার আপন রূপ, রঙ। পশ্চিমের পাহাড়ের সবুজেরাও যেন জেগে উঠছে আস্তে আস্তে। শান্ত সমুদ্রের শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে শুনতে জলকন্যা হেঁটে চলে তীর ঘেঁষে । সূর্যের আলোয় চিক চিক করতে থাকা বালির উপরে হাঁটতে হাঁটতে নির্জন দ্বীপের অন্য এক প্রান্তে এসে পড়ে জলকন্যা। এ পাশটায় সমুদ্রটা যেন অন্য এক সৌন্দর্যকে ধারণ করছে। এখানে সমুদ্র যেন আরও নীল, শান্ত স্বভাবটাও নেই তার। ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে পাথরের গায়ে। তীরে জেগে থাকা পাথরগুলোর মাঝ থেকে বেছে নিয়ে একটা পাথরে বসে পড়ে সে, লোনা পানিতে পা দুটো ভিজিয়ে। সূর্য এরই মাঝে আকাশের আরো কিছু পথ অতিক্রম করেছে। তার আলোয় ঝলমল করে উঠেছে চারিদিক । সূর্যরশ্মির সাদা রঙ শুষে নিয়ে সমুদ্রের ফেনাগুলো যেন আরো সাদা হয়ে উঠেছে।
দিন গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। জলকন্যার ফিরতে হবে এবার। আবারো সে হাঁটতে শুরু করে ফেলে আসা পথটা ধরে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। পথটাও যেন ক্রমে অপরিচিত হয়ে উঠছে। জলকন্যা ভাবে, এ বুঝি আঁধারের মায়া। কিন্তু এক সময় বুঝতে পারে সে আসলেই পথ হারিয়ে ফেলেছে। আশেপাশের কোন কিছুই তার চেনা নয়। ক্রমশ ভীত হয়ে পড়ে সে। অন্ধকারে কালো জমাট বাঁধা পাহাড়ের বুকে এক এক করে জেগে উঠছে হিংস্র নিশাচর প্রানীগুলো। দূরে কোথাও পেঁচার ডাকে চমকে ওঠে সে। বুকের সবটুকু সাহস জড়ো করে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ চোখে পড়লো দূরে একটা আলোর বিন্দু । মনে হলো কে যেন এগিয়ে আসছে। হ্যাঁ! ঐ তো , মশাল হাতে কেউ একজন আসছে। হঠাৎ করেই অনেক সাহস পেয়ে যায় জলকন্যা।
মশাল হাতে এগিয়ে আসছে এক তরুন। অনেকটা এগিয়ে এসে ছেলেটি খুব আপন করে বললো , "ভয় পেয়ো না জলকন্যা । আমি এসে গেছি।" খুব অবাক হয়ে মেয়েটি ভাবতে লাগলো তার নাম কিভাবে জানলো সে। আর এটাই বা জানলো কিভাবে যে সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। ছেলেটা তার মনের কথা বুঝতে পারে, "ভাবছো ,আমি কে ? তোমার কথা জানলাম কিভাবে? আমি যে সমুদ্রপুত্র । জলকন্যার কথা সমুদ্রপুত্র না জানলে আর কে জানবে ?"
অবাক হয়ে জলকন্যা দেখতে লাগলো সমুদ্রপুত্রকে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে তাকে; চোখ বুঁজে তার উপর আস্থা রাখতে ইচ্ছা করছে।
সমুদ্রপুত্র হাতটা বাড়িয়ে বললো , "এসো।"
বাড়ানো হাতটা ধরে মন্ত্রমুগ্ধের মত জলকন্যা এগিয়ে চললো তার সাথে ...
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩৪