৫৪ জন মানুষসহ ৫২ সিটের বাসটি নিয়ে টার্মিনাল থেকে বেরোতেই সামনে পড়লো একটা প্লাস্টিক। “ধুস শালা !” - গালি আওড়ে এগিয়ে যাই প্লাস্টিকটিকে গুড়িয়ে দিতে। বাগড়া দিলো যান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সল্প বেতনের সরকারের চাকরটি। আর এক প্রস্থ গালি দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাই। মোড় ঘুরতেই একটা লাল রঙের তেলাপোকার মুখোমুখি হলাম। প্রথম শিকারটাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এটাকে তো আর ছাড়া যায় না। তেলাপোকাটাও সেয়ানা বটে। শুঁড় বাঁকিয়ে তেড়ে আসে। পালটা আক্রমনের প্রস্তুতি নিতেই হঠাৎ ভেংচি দেখিয়ে ব্যাটা কেটে পড়ে সামনে থেকে।
সাত সকালে ২টা শিকার নাগালে পেয়েও ছেড়ে দিতে হলো। মেজাজটা সপ্তমে চড়েছে। সুযোগ-সন্ধানী চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে পরবর্তী শিকারকে। নাহ্! আজকাল সবাই বড্ড বেশি সাবধানী হয়ে উঠেছে।
বিমানবন্দরের সামনে পৌঁছুতেই চোখ চক চক করে উঠলো। ঐ তো ! পিঁপড়ার মত সারিবেঁধে রাস্তা পেরোনোর অপেক্ষায় মানুষগুলো। আবারো শুরু করি খিস্তি-খেউড় – “হারামজাদা ! ওভারব্রীজ কি তর বাপে সাজায়ে রাখনের লাইগ্যা বানায়ে থুইসে ?” ভাবি, দেই পিষে ক’টাকে। অনেকই আছে তো। এগুলোর মাঝ থেকে ২/৪টা কমলে কি এমন ক্ষতি হবে। নাহ্! এবারও ব্যর্থ হতে হলো।
টঙ্গী পৌঁছুতেই বাস আর ট্রাকের ভিড়ে প্রায় গতিহীন হয়ে পড়ি। সামনে আবারো একটু ফাঁকা পেয়ে যেই না গতি বাড়িয়েছি হঠাৎ দেখি উঁচু আইল্যান্ডের ফাঁক গলে এক মধ্যবয়সী রিক্সাটা নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার অপেক্ষায়। আমার রুদ্র মূর্তি দেখে পিছিয়ে গেল কয়েক ধাপ। ছুটে চলেছি আবারো।
এক সময় ব্যস্ত শহর পিছনে ফেলে হাইওয়েতে গিয়ে উঠি। উল্টো দিক থেকে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে এক একটি বাস। মাঝে মধ্যে একটা দু’টা ট্রাক। এরই ফাঁকে ফাঁকে ছুটছে অল্প কিছু রিক্সা আর ভ্যান।
আহ্! ঐ তো; সামনে আরেকটা শিকারের সম্ভাবনা দেখা যায়। দুইটা বাস একে অপরকে ওভারটেক করার চেষ্টায় ব্যস্ত। আমারও করা চাই। গতি বাড়িয়ে এগিয়ে যাই। বেশ কিছুক্ষণ আমরা একে অপরকে পিছনে ফেলার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি। ঐ দূরে উলটো দিকে ওটা কি দেখছি? দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে একটি সাদা মাইক্রোবাস। দূরত্ব কমে আসছে আস্তে আস্তে। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে চালকের আসনে বসা তরুণটি। নিজের ক্ষুদ্রতায় কি অসহায় বোধ করছে? নিশ্চয়ই আশায় আছে শেষ মূহুর্তে সরে যাব। হা হা হা ! ভুল ভাবছো ছেলে। ভেবো না। আমাদের সারিতে জায়গা করে নিতে না পারলেও তুমি জায়গা পেয়ে যাবে পাশের ঐ নিচু খাদটিতে। যাহ্! শেষ পর্যন্ত বেঁচেই গেলে। বামপাশের বাসদুটো শেষ মূহুর্তে গতি কমিয়ে আমাকে এগিয়ে না দিলে এতক্ষণে পৌঁছেই যেতে যথাস্থানে।
আবারো একটা মোড়। ঘুরতে না ঘুরতেই দানবীয় একটা ট্রাক। মুখোমুখি আসতেই অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নিলো চালক। ঠোকা-ঠুকির শেষ চেষ্টাটিও ব্যর্থ হলো। কারন, পৌঁছে গেছি গন্তব্যে। চালকের আসনটি এবার ছেড়ে দিতে হবে। স্টিয়ারিং ধরবে অন্য কেউ।
নতুন কোনও শিকারের নেশায় ? হয়ত হ্যাঁ অথবা না।
*প্লাস্টিক - প্রাইভেট কার (লোকাল বাসের হেল্পার , ড্রাইভারের ভাষায়)
তেলাপোকা - ছোটবেলায় ভক্সওয়াগন গাড়িগুলোকে তেলাপোকা বলতাম
ভেবেছিলাম আর লিখবো না। আজকে হঠাৎ আবার লিখতে ইচ্ছা হলো। হয়ত হাবি-জাবি হবে। সাহিত্যের ছিটেফোঁটাও থাকবে না । নাই বা থাকলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৩৫