প্রচন্ড তেষ্টা পেয়েছে। ব্যাগের চেইনটা খুলে পানির বোতলটা বের করলাম । বোতলে একটা ফোঁটা পানিও আর অবশিষ্ট নেই। ২/৩ মিনিট পরেই আবার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে ক্যাফেটেরিয়া গিয়ে আর এক বোতল পানি কিনে আনার মত অবস্থাও নেই। ক্লাসরুমের এক কোনায় দেখলাম তানিয়া , শেহরিন আর রিসাদ বসে গল্প করছে। ওদের কাছে গিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, "তোমাদের কাছে পানি হবে ?" রিসাদ ব্যাগের পকেট থেকে স্বচ্ছ তরলপূর্ণ একটা অদ্ভুত ধরনের বোতল বের করে দিয়ে বলল, "এই নাও।" বোতলটা দেখে কেমন যেন খটকা লাগছিল। তাই বোতলের মুখটা খুলে ভেতরের তরলটুকু গলায় ঢালবার আগেই মনের অজান্তে হাতে ধরা বোতলটি চলে এলো নাকের সামনে। উদ্দেশ্য- সন্দেহজনক তরলটির ঘ্রাণ নেওয়া। কেমন যেন মিষ্টি একটা গন্ধ। না না ; একটা ঝাঁজালো গন্ধ। নাহ্ , ঠিক বুঝতে পারছি না। কেমন যেন লাগছে। মাথার ভেতরটা কি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে? দুই চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। চারিদিক কেমন যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। আর পারছি না। কেমন যেন অবশ একটা অনুভূতি। দৃষ্টি আর চিন্তাগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, কি ছিল বোতলে? ভাবতে ভাবতেই চারিদিক নিস্তব্ধতা আর আঁধারে ঢেকে গেল।
হঠাৎ প্রবল একটা ঝাঁকুনি। অনুভূতিগুলো আবার যেন জেগে উঠতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা কি? ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি? অন্ধকারে ডুবে থাকা অবস্থাতেই কার যেন গলা শুনতে পেলাম, "এই আপু, উঠো। তোমার না কালকে পরীক্ষা, পড়তে বসবা না? এখনো ঘুমাচ্ছো ?" চোখের পাতা অনেক কষ্টে খুলে দেখি ছোট বোনটা ডাকছে। আরে! আমি না ক্লাসে ছিলাম ; আমার ঘরে, বিছানায় এলাম কখন? তাহলে কি স্বপ্ন দেখছিলাম? বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেল। পড়তে পড়তে কখন যে বইটি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি ।
একটু ধাতস্থ হয়ে উঠতেই প্রথম যে প্রশ্নটা মনে উঁকি দিল , - "আচ্ছা, বোতলটায় আসলে কি ছিল? ক্লোরোফর্ম ???"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৪৮