আমার ঘরের জানালার ভেন্টিলেটরে একটা চড়ুই বাসা করেছিল বেশ কয়েকদিন আগে । ভেন্টিলেটরের ফুটো দিয়ে খড়-কুটো পড়ে ঘর নোংরা হয়ে যায় বলে বাসাটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকদিন পরেই দেখা যায় পাখিটি আবার বাসা করে । বাসাটি ভাঙতে খারাপ লাগে বলে তা ভাঙতে মানা করে দেই । তারপর থেকেই দেখা যেত চড়ুই পাখিটি মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে আমার ঘরে ঢুকে পড়তো । ঘরের মাঝেই কিছুক্ষণ উড়াউড়ি করে আবার বেরিয়ে যেত।
একবার আমি খুব জ্বরে পরে যাই । সারাদিন বিছানায় ।সেদিন চড়ুই পাখিটি যেন অন্য দিনের চেয়ে আরো বেশি বার আমার ঘরে ঢোকে । বেশ কিছুক্ষণ ঘরের ভেতর আমার বিছানার চারপাশে উড়তে থাকে । উড়তে উড়তে আমার পড়ার টেবিলে বসে । জানালার গ্রীলে বসে থাকে । যেন আমার একাকীত্বে সে আমাকে সঙ্গ দিচ্ছিল।
রাতে কখনো পাখিটিকে ঘরে ঢুকতে দেখিনি । আজ হঠাৎ করেই রাতে ঘরে ঢুকে পড়ে । যথারীতি উড়ে বেড়াতে লাগলো সারা ঘরে। সিলিং ফ্যান চলছে । তাই ভয় পেয়ে গেলাম , ফ্যানের সাথে না বাড়ি খায় । মানুষের কথা বুঝতে পারবে না বলেই হয়ত ঘরের মাঝে উড়তে মানা করতে পারিনি । একটু পর আমার আশঙ্কা সত্যি করে দিয়ে পাখিটি বাড়ি খায় সিলিং ফ্যানের সাথে । ছিটকে পড়ে বুকশেলফের কোনায় । ভয় পেয়ে যাই , মরে যায়নি তো ?
বেশ কিছুক্ষণ কোনও নড়াচড়া নেই । বুকশেলফের কোনা থেকে পাখিটিকে বের করে আনি । নিথর দেহ । পাখিটি মারা গেছে ।
পশু-পাখির ভাষা বোঝার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেননি । তাই কখনও বুঝতে পারিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে চড়ুইটির কিচিরমিচিরের অর্থ । কাল থেকে আমার ঘরের ভেন্টিলেটর থেকে শোনা যাবে না আর কোন কিচিরমিচির । আর কোন জ্বরের ঘোরে আমার সঙ্গী হবে না পাখিটি ।
[নিজেকে যতটা আবেগহীন মনে করেছিলাম ততটা বোধ হয় এখনও হইনি। তা নাহলে পাখিটি মারা যাবার ৩৬ ঘন্টা পরেও সেই ভেন্টিলেটরের দিকে তাকালে ভেতরটা হু হু করে উঠছে কেন?]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৫২