somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথায় হারিয়ে যায় আমাদের বীজগুলো?

১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশী বীজ হারিয়ে যাচ্ছে। ধানের বীজ নাকি দশ হাজারের বেশী ছিলো এই দেশে। যা চাষ হতো অঞ্চলভেদে, মাটি ভেদে, ঋতুভেদে। এখন মাত্র ৪/৫ শ আছে। তবে যে চাল আমরা খাই তার বেশীরভাগই মাত্র ৪/৫ ধরণের, যার বেশীরভাগ হাইব্রিড বা আমদানিকৃত।
সমস্যা হলো এই দেশী বীজের তুলনায় এই হাইব্রিড ধানের বীজের উৎপাদন বেশী হলেও তার জন্য দরকার সার, সেচ, কীটনাশক।

এগুলোর ফলে আবার মাটি ও প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। মাটি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অণুজীব, মারা যাচ্ছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া।
পুষ্টিমানের কথা বললেও হাইব্রিডের চেয়ে দেশী চালের পুষ্টিমান বেশী। তারপরে মিনিকেটের নামে চালগুলো কাটাকাটি করে চালের উপরিভাগের সবচেয়ে আসল উপাদান, ফাইভার সমৃদ্ধ, সেটাই ফেলে দিয়ে আমাদের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়। মিনিকেট চালের মোহে শহরবাসী, আসলে খাচ্ছে চালের মধ্যে সবচেয়ে কম পুষ্টিমানের একটা ধরণ।

অথচ দেশী বীজের চাল ছিলো পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী। স্বল্প সেচে, জৈবসারে এবং জৈব উপায়ে পরিচর্যার মাধ্যমে ধান উৎপাদন হতো। যার ফলে অণুজীব সহ সকল উপকারী ব্যাকটেরিয়াও বেচে বর্তে থাকতে পারতো। ফলে আমাদের চারপাশের অন্যান্য প্রাণও খাদ্য পেতো, নিরাপদ থাকতো এবং জীব বৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ থাকতো। মাঠে পাখি এসে খেতে পারতো। জন্মাতে অনেক ধরণের বন্যশাক। এখন মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে প্রাণবৈচিত্র্য, বিষে ছেয়ে যাচ্ছে ফসলের মাঠ। সাম্প্রতিককালে কৃষকদের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার খবরও বাড়ছে। সব মিলে যে প্রকৃতিতে গিয়ে আমরা বুক ভরে নিশ্বাস নেবার স্বপ্ন দেখি, সেটা আর কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত আছে বলা মুশকিল।

সবমিলে হাইব্রিডের বর্ধিত উৎপাদনের সাথে খরচ যোগ করলে সাথে তারা পরিবেশের যে ক্ষতি করে সেসব আমলে নিলে দেশী বীজ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদই অনেক লাভজনক ও সস্তা মনে হয়।

এসব নিয়ে ইদানীং ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছি। এই দেশে কেউ কি প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করে না? শুধুমাত্র ধানের কথা বললাম। এমন আমাদের সকল চাষাবাদের ফসল, পুকুরের মাছ, গেরস্তবাড়ীর হাস-মুরগী সব কিছুতেই কেমিকেল উপকরণ এই মাত্রায় বেড়েছে যে আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক বলে যেনো কিছু নাই। তার উপরে জমিতে মিশছে প্লাস্টিক..নদীতে পানি আসছে কম, প্রতিবছর বন্যায় কৃষির জমি ভেসে গিয়ে পলি ফেলে প্রাকৃতিক পরিশোধনের যে ব্যবস্থা ছিলো - তাও বাধ দিয়ে, নদী শাসন করে আমরা বন্ধ করছি। এমন চলতে থাকলে এই জমিতে আর কত শক্তি থাকবে? ক্রমশ বাড়াতে হচ্ছে সারের পরিমাণ..আর মাটি থেকে উধাও হচ্ছে সকল অণুজীবচক্র।

তবে আশার কথা কেউ কেউ এখন প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ শুরু করছে নতুন করে। তেমন একটা খামার আছে মানিকগঞ্জ। দেলোয়ার জাহান এই খামারের উদ্যোক্তা। সে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে অন্যদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। অন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধু করছে। তারা মিলে যা উৎপাদন করে তার কিছু একটা অংশ ঢাকায় একটা দোকান দিয়ে বিক্রি করে।

তাছাড়া, তিনি তার খামারে প্রাকৃতিক কৃষি শেখার একটা কোর্স চালু করেছে। মাসে ৩ দিনের এই কোর্স করা যায় ৩ হাজার টাকা দিয়ে। আমি কয়েকমাস আগে করলাম। দেখলাম স্বচক্ষে তাদের কার্যক্রম। যেহেতু অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে ছড়ানো হলো এই কৃষি আন্দোলনের উদ্দেশ্য সেজন্য মনে হলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

আমি তাদের এই কার্যক্রম এবং প্রাকৃতিক কৃষিপণ্য বিক্রয় কেন্দ্রটি নিয়ে একটি ভিডিও ব্লগ করেছি। নিচে দিলাম



আমাদের সুস্থতার জন্য দরকার নিরাপদ খাদ্য। আসুন আমরা নিজেরা কৃষিতে যুক্ত হই, উদ্বুদ্ধু করি অন্যকে প্রাকৃতিক কৃষির প্রতি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৫৯
৭১ বার পঠিত
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

১. ১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৪২

আহসানের ব্লগ বলেছেন: ভাই কি করবেন । এখন দরকার প্রোডাকশন। যে পরিমাণ মানুষ ১০০০০ প্রজাতির বীজ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না।

১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৪৫

লেখক বলেছেন: ভালো খেতে চাই। কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে সুদূরপরাহত। বিশেষ করে কৃষকদের মধ্যে রোগশোকের পরিমাণ বৃদ্ধি যদি রোধ না করা যায় আমাদের ভবিষ্যত যে কি হবে!

২. ১৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: কৃষক বান্ধব সরকার নেই আমাদের।

১৮ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৪৭

লেখক বলেছেন: একদম সত্য। কোনোকালে ছিলোও না মনে হয়। কর্পোরেট বীজ, সার আর ব্যবসার কাছে কৃষি হারিয়ে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

১৯৭২-এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র ২০২৪-এর অর্জন না

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৩৯


৭২-এর রক্তস্নাত সংবিধান বাতিল করে । নিজেদের আদর্শের সংবিধান রচনা করতে চায় এরা‼️বাংলাদেশের পতাকা বদলে দিতে চায়! বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ভালো লাগেনা এদের!জাতিয় শ্লোগানে গায়ে ফোস্কা পরা প্রজন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০০

প্রতিযোগিতার এই দুনিয়ায় এখন আর কেউ নিজের মতো হতে চাই না, হতে চাই বিশ্ববরেণ্যদের মতো। শিশুকাল থেকেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সব ছাত্রদের মাথায় জিপিএ ৫, গোল্ডেন পেতে হবে! সবাইকেই ডাক্তার,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এইচএমপিভি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৩




করোনা মহামারির ৫ বছরের মাথায় নতুন একটি ভাইরাসের উত্থান ঘটেছে চীনে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নামের নতুন এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে দেশটিতে।চীনের সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান, আমেরিকা, জামাত-শিবির আমাদেরকে "ব্যর্থ জাতিতে" পরিণত করেছে।

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭



আজকে সময় হয়েছে, আমেরিকান দুতাবাসের সামনে গিয়ে বলার, "তোরা চলে যা, ট্রাম্পের অধীনে ভালো থাক, আমরা যেভাবে পারি নিজের দেশ নিজেরা গড়বো। চলে যাবার আগে তোদের পাকী... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হয়তো কখনো আমরা প্রেমে পড়বো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০০


পোস্ট দিছি ২২/১২/২১

©কাজী ফাতেমা ছবি

কোন এক সময় হয়তো প্রেমে পড়বো আমরা
তখন সময় আমাদের নিয়ে যাবে বুড়ো বেলা,
শরীরের জোর হারিয়ে একে অন্যের প্রেমে না পড়েই বা কী;
তখন সময় আমাদের শেখাবে বিষণ্ণতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×