বাংলাদেশে বিবাহের বয়স সেই ১৯২৯ সাল থেকে আইনগত ভাবে এক নিয়মে চলতেছে। ছেলেদের জন্য ২১, মেয়েদের জন্য ১৮। প্রায় শতাব্দী পুরানো এই নিয়ম সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত - মোটামুটি সবাই জানে যে মেয়েদের বিবাহ ১৮ বছরের কমে দেয়া যায় না। তারপরেও মানুষ বিয়া দেয়, বেশী বয়স দেখায়া। নিয়মটা পুরাপুরি ফলো না করলেও মানুষজন আইনটারে নিয়া তেমন কোনো উচ্চাবাচ্য করে নাই। মাইনা নিছে। যেইটা পজিটিভ দিক।
কমবয়সে মেয়েদের বিবাহ হওয়া যে কত খারাপ সেইটা বিগত একশ বছর যাবত বাংলার মানুষরে বুঝাইছে ডাক্তাররা, শিক্ষকেরা এবং জ্ঞানীগুনি ব্যক্তিরা। মানুষজনও নিজেরা দেখছে যে কম বয়সে বিয়া হইলে কেমনে সন্তান জন্মের সময় মাইয়াগুলা পটপট কইরা মইরা যায়। বাচ্চা মরে। বাচ্চার মায়েরা কত অসহায় হইয়া পড়ে একটা ঝামেলা হইলে। নিজেরাই তো বাচ্চা - আরেকটা বাচ্চা সামলাইবে না কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।
শিক্ষিত লোকজন এইজন্য বেশী বয়সে পোলামাইয়াদের বিয়া দেয়। আইনের বয়স-সীমার অনেক উপরে তাদের পোলামাইয়াদের বিয়ার বয়স হয়। কিন্তু গরীব মানুষরা তো কম বয়সে বিয়া দেয়। নানা করণে - তার মধ্যে অন্যতম সামাজিক কারণ, দারিদ্রের কারণে। আরেক সংসারে গিয়া সুখে থাকবো এমন চিন্তায়। রাস্তাঘাটে ইভটিজিং হয় ইত্যাদি। কিন্তু এইগুলা কোনো কারণ ? আপনারাই কন! শিক্ষিত মানুষ কি এইটারে কোনো কারণ বলবে? যাদের ন্যুনতম ধারণা আছে এবং নিজেরা ভূক্তভোগী তারা সবাই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়া জানে কম বয়সে বিয়া কত খারাপ হইছিলো তাদের জীবনে!
সংসারে গিয়া এই অল্পবয়সে বিবাহিত মেয়েরা কূলকিনারা নাই এমন বিপদে পড়ে। যে শরীর তার অপরিণত সেই শরীরের নিয়মকানুন যার অচেনা – যা জানানোর জন্য কোনো শিক্ষা তার পরিবারে পায় নাই - সেই মেয়ে যখন শশুর বাড়ি যায় তখন প্রথম রাইতে স্বামী - যে তার চাইতে ম্যালা বড় থাকে সে কি তারে পড়াশুনা করতে বসাইবে? যদিও ঐ মাইয়ার পড়াশুনার বয়সই - কিন্তু স্বামী তার সাথে ডাইরেক্ট সঙ্গম করতে শুরু করে। যেইটাকে বলে দাম্পত্য ধর্ষণ! ঐ মেয়ে প্রস্তুত না....জানে না তার নিয়মকানুন, জন্ম নিয়ন্ত্রন সম্বন্ধে ধারণা নাই – ফলে হইয়া যায় গর্ভবতী!
এরপরে তো মেলা কেস...সন্তান হবার সময় এই বয়সী মায়েদের মৃত্যু সবচেয়ে বেশী হয়। বাংলাদেশ যেমন অল্পবয়সী মাইয়াদের বিয়াতে বিশ্বের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন তেমনই মাতৃমৃত্যুতেও চ্যাম্পিয়ন। আর যদি হয় কন্যা সন্তান - তারপরে শুরু হয় পরের সন্তানের জন্য তোড়জোড় - দেখা যায় ১৮/১৯ বছর বয়সেই তার দুইটা বাচ্চা হইয়া গেছে - যখন তার মাত্র এইচএসসি পাস করার কথা!
অসুস্থ রুগ্ন হইয়া পড়ে, স্বামী আনহ্যাপী থাকে - ঠিকমত সঙ্গম করতে পারে না - স্ত্রীর রোগশোক - ফলে কলহ তৈরী হয়, বিবাহ ভাঙে এবং মাইয়াটা রাস্তায় পড়ে। সমাজ ও রাষ্ট্র এইসব অসহায় মায়েদের বোঝা কান্ধে নেয় – কিন্তু সেই কাধও তো তেমন মজবুত না। গরীব ঘরের মাইয়ারা সামাজিক নির্যাতন ও কলঙ্কের মুখে পড়ে – কেউ খারাপ পথে পা বাড়ায়।
এইসব কথা নতুন কইরা কেন কই? আমি কোনো ডাক্তার না। এইকথাগুলো আপনাদের মতই সমাজ থেকে শিখছি। এতকাল পর্যন্ত আমাদের ডাক্তাররা, শিক্ষকেরা এই কথাই বলছে, টিভিতেও বলছে এমনকি এই সেদিন পর্যন্ত রাজনীতিবিরাও বলছে..জানি তো সেইজন্যই।
কিন্তু হঠাৎ করে এই বেসিক কথাগুলা আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভুইলা গেছে ...সে আবদার করছে মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৬ করতে! চিন্তা কইরা দেখেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ কি হইলো? এতদিনের স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান এবং সমাজে তৈরী হওয়া সচেতনতাকে সে কেমনে মাত্র একটা কথা বইলা হেলাইয়া দিলো! কেমনে সমাজটাকে পেছনে নেওয়ার...আরো বেশী বাল্যবিবাহ হওয়ার দিকে, মায়েদের মৃত্যুর দিকে নিয়া যাওয়ার ঝুঁকি লইছে? এবং প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলছে বাল্যবিবাহ রোধ করার আইন করতে গিয়া। বাল্যবিবাহ রোধ করবেন আর বিবাহের বয়স কমাবেন – বিষয়টা সাংঘর্ষিক হইলো না? বড়ই আজব কথাবার্তা! বাল্যবিবাহ রোধ আইনেই বাড়বে না তাইলে বাল্যবিবাহ?
এইটা অবিশ্বাস্য যে প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বলবেন? আমরা লজ্জিত। ভীষণ লজ্জিত যে প্রধানমন্ত্রী এমন একটা কথা বলছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করতে চাই প্রচণ্ড অভিমানে।
প্লিজ ১৬ বছরে মেয়েদের বিবাহের বয়স কইরেন না - দোহাই লাগে।
অভিমানী প্রতিবাদ জানাবো আমরা ১৮ই অক্টোবর - মানববন্ধন কইরা - প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১ টায়।
ফেসবুক ইভেন্ট - Click This Link