ঘটনার সূত্রপাত যেখানে তা হলো সংসদে হাইকোর্টের একটা সিদ্ধান্তের সমালোচনার মধ্যে দিয়ে। প্রসঙ্গ সড়ক জনপদ বিভাগের অফিস উচ্ছেদ হাইকোর্ট অঙ্গন থেকে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা জ্ঞাপন আমার দৃষ্টিতে চরমতম আদালতের অবমাননা। আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আদালতিক প্রক্রিয়া আছে, সংসদের সাংবিধানিকভাবে যেহেতু কিছু করার ক্ষমতা নাই, সুতরাং তার সমালোচনা করারও ক্ষমতা নাই। যদি আরেকজন নাগরিকের আদালতকে সমালোচনা করার অধিকার থাকতো তাহলে সংসদেরও থাকতো। স্পিকার ও তাবত সংসদ সদস্য আদালতের অবমাননা করে প্রথমেই সংবিধানের লংঘন করেছেন এবং সেহেতু তারা কেহই সংসদ সদস্য থাকার উপযুক্ত নয় বা সে যোগ্যতা হারিয়েছেন।
পরবর্তীতে বিচারপতি শামসুদ্দিন সেই বিষয়টাই উত্থাপন করেছেন, কিন্তু কোনোধরণের আদেশ দেননি সংসদের স্পিকার বা সদস্যদের প্রতি, যা উচিত ছিলো, তাদের দাঁড় করানো উচিত ছিলো কাঠগড়ায়। যেমন স্পিকার তখন বলেছিলেন "আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হলে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে" যা চরমতম থ্রেটমূলক অসদাচারণ, জনগণের প্রতিনিধি যদি এভাবে কথা বলে বিচারিক আদলতের বিরুদ্ধে তাহলে সেই প্রতিনিধি কখনই রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার রাখেন না।
কিন্তু আমাদের বেশীরভাগ সংসদ সদস্য ও সচেতন নাগরিক এই চরমতম অসৌজন্যমূলক বক্তব্য বিষয়ে নিরব ছিলেন, এর পরবর্তী লোকসান কি হতে পারে সে বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র উদ্বেগ দেখা যায় নি। এমনকি প্রধান বিরোধীদল এ বিষয়ে ছিলো রহস্যজনকভাবে নীরব। অতপর বিচারপতি শামসুদ্দিন যখন স্পিকারের উক্ত বক্তব্যের বিরুদ্ধে কেবল আদালতের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন তখন স্পিকার ও সংসদ সদস্যরা সেটার বিরুদ্ধে রুলিং দেয়ার একটা ব্যবস্থা সামনে নিয়ে আসলেন, যেনো এই রুলিং এ সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে যায়, আদপে যার কোনোই ভিত্তি নাই, থাকে না। একজন আইনজ্ঞ হয়ে সংসদের স্পিকারের যে সেটা জানা নাই বা চেপে গেলেন এবং পুরা জাতির সামনে একটা ভুল তথ্য ও ব্যবস্থা এনে হাজির করলেন - সেটা রীতিমত হতাশাজনক ও অযোগ্যতার পরিচায়ক।
সংসদ আইন তৈরীর করার জায়গা, বিচারপতি ও তাদের বিচারিক কার্য পরিচালালনার জন্য আইন তৈরী করার জায়গা, মানে সহজ কথায় তারাই নির্ধারণ করেন বিচার কার্য পরিচারণার জন্য আরেকটা পৃথক স্তর। এর কারণ সংসদ বিচার কার্য পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে না। সরকারের
তিনটি নির্বাহী বিভাগের কাজ এভাবে আলাদা করা হয় - কাজ পরিচালনার সুবিধার্থে।
সংসদ আইন তৈরীর করার জায়গা, বিচারপতি ও তাদের বিচারিক কার্য পরিচালালনার জন্য আইন তৈরী করার জায়গা, মানে সহজ কথায় তারাই নির্ধারণ করেন বিচার কার্য পরিচারণার জন্য আরেকটা পৃথক স্তর। এর কারণ সংসদ বিচার কার্য পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে না। সরকারের
তিনটি নির্বাহী বিভাগের কাজ এভাবে আলাদা করা হয় - কাজ পরিচালনার সুবিধার্থে।
বিচার বিভাগ যদি বিচার ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা না করে বলে মনে করে সংসদ তবে তাকে আইন সংশোধন,পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ নাই। কারণ সংসদের প্রণীত আইন আবার বিচার বিভাগকেই বাস্তবায়ন করতে হবে বা বিচার করতে হবে। সেই প্রণীত আইনের মধ্যে বিচারকদের অপসারণের যেহেতু ব্যবস্থা বাধ্যতামূলকভাবে থাকে, সেটাই অনুসরণ করা সংসদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে - কারণ তারাই সে আইন তৈরী করেছেন, সে আইন সংসদের হাতে তুলে নিয়ে বিচার পরিচালনার জন্য নয়।
অতপর স্পিকারের সেই অপরিনামদর্শী রুলিং কে হাইকোর্ট এখন অকার্যকর ও ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা করলো। এর ফলে স্পষ্ট হয়ে গলো স্পিকার ও সংসদের বাগড়ম্বরতা, তবে তা একই সাথে বিস্তৃত করলো স্পিকারের আরো একবার গলাবাজির সুযোগ।
হাইকোর্টের উচিত স্পিকার ও সংসদসদস্যদের এ বিষয়ে কিভাবে তারা সাংবিধানিক ব্যবস্থা নিবেন সেটা একটু এবিসিডি পড়ানোর মত করে, হাতে কলমে বুঝিয়ে দেয়া। হাইকোর্ট সাংসদদিগকে বলতে পারে, দেখুন আপনারা যদি আমাদের বিচারকদের অপসারণ করতে চান, বা কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে অমত পোষণ করেন তবে হাইকোর্টেই আসুন, সংসদে দাড়িয়ে সমস্ত দেশের জনগণকে বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড় করাবার ষড়যন্ত্র করবেন না। হাইকোর্ট এটাকে একটা পরিস্কার ষড়যন্ত্র হিসাবেও চিহ্নিত করে স্পিকার ও সমস্ত সাংসদদিগকে হাই কোর্টে তলব করার ক্ষমতাও রাখে এবং সেটাই করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:০৬