"জাগো হে তরুণ" নামে পাঁচই মে দুইহাজার সাত সালে জারীর একটা কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি ব্লগের ইতিহাসে একটা কালজয়ী সৃষ্টি। যেমন তিনি বলেছেন, "রাত নামেছে এই ধরায়/ হয় তো আলোর দেখা পাবে কাল", এই চরনদ্বয়ে আমাদের মধ্যে রাত্রির এক ভয়াবহ আখ্যানমঞ্জুরী জেগে উঠে, আমরা ধরায় রাত্রির কালো আগমনসংকেতে ব্যাকুল হয়ে উঠি। ঠিক পরক্ষণেই তিনি আগামীকাল আলোর দেখা পাবার এক সম্ভাবনার কথা বলে আমাদেরকে মুক্তি দেন। আমরা নিশ্বাস নিতে শুরু করি। তিনি এখানে নামেছে শব্দ ব্যবহার করে যে নতুনত্ব আনলেন কাব্যকাশে তা সত্যিই আমাদের জন্য নতুন ভাবনার দীগন্ত উন্মোচন করেছে।
এরপরে কবি বলেছেন, "কিন্তু হে তরুণ, তুমি কি বলতে পারো/এ ধরায় থাকবে চির কাল ?, যা প্রতিটি তরুনকে একটা বিশাল প্রশ্নবোধকত্বের সম্মুখে দাড়া করিয়ে দেয়, তরুনীরা কিঞ্চিত ভারমুক্ত হয়ে ওঠে এবং পৃথিবীতে যে আগতকালে থাকা সম্ভব নয় তার পরিষ্কার একটা পয়গাম আমরা ধ্বনিত হতে দেখি।
এরপরে কবি ঘুমের প্রসংগ এনেছেন। তিনি তরুনদেরকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখতে চান না। এখানে কবি ঘুম বলতে রাত্রিভর নাক ডেকে নিদ্রাদেবীর সাথে জলকেলী করার কথা বোঝাননি, তিনি কাজের মহাসমূদ্রে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য এগিয়ে যেতে বলেছেন। যেমন কবি বলেছেন, "যদি নাই পারো, তবে কেন/ঘুমিয়ে আছো বলো ?/ করো কাজ, হও আগুওয়ান/ ঘুমিয়ে থেকে লাভ কি বলো ?", যার মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই, পৃথিবীর থাকার জায়গা নয়। এ পৃথিবীতে শ্রম দিতে হবে। কাজের মাধ্যমে জেগে থাকতে হবে। কিন্তু কি কাজ, সে সন্বন্ধে তিনি এরপরের ছত্রে আমাদেরকে পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
কবি বলেছেন, "আজ আছো তুমি/যদি না থাকো কাল/ভেবেছো কি জাবাব দিবে/প্রভুরে পরকাল ?" - এক স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, প্রভুর সমীপে অবনত হয়ে যেন তার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থতার জন্য অভিশাপ গ্রহণ না করতে হয় তার জন্য সতর্কবানী। যা আমাদেরকে এক অপার জিজ্ঞাসার দারপ্রান্তে উপনীত করে। আমরা ভাবতে বাধ্য হই পরকালে প্রভুর টকশোতে কিভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করবো। এক জাগতিক অবস্থানকে পারলৌকিক গন্তব্যের কষ্টিপাথরে সেখানে "জাবাব" প্রদানকে তিনি অপরিহার্যরূপে উপস্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
কবি সর্বশেষ ছত্রে আমাদেরকে দৃষ্টি সম্প্রসারিত করে কথা মেনে এক শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের লোভ দেখিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, " দেখ তার সৃস্টি/মানো তার কথা/তবেই দিবেন তিনি/উত্তম জাঝা* !" - এখানে লক্ষ্যনীয় বাংলা কবিতায় নজরুলের পরে এত চমৎকার নিজস্ব শব্দের অলংকরণ সাথে বিদেশী শব্দ অনুগ্রহণের মাধ্যমে সমৃদ্ধতা খুব কম কবিতায় আমরা দেখেছি। কবি এখানে আমাদের ইশ্বর কর্তৃক জাঝা প্রাপ্তের সুসংবাদ দিয়েছেন।
সামগ্রিক বিচারে কবিতাটি একজন মানুষের ইহলোকিক অসারতা থেকে চিরস্থায়ী শান্তির পথ উন্মোচনকারী। নাইন/ইলেভন পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় কবিতাটি মানবতাবিরোধীদের জন্য দৃপ্ত চটপোঘাত। সে বিচারে "জাগো হে তরুন" নামক কবিতাটি কবি জারীরকে চিরঅম্লান করে রাখবে বলে আমি প্রচন্ড আশাবাদী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০০৭ দুপুর ২:৫৪