বাংলাদেশের হিন্দুরা কিছু ভুল দর্শন ও ধারনাকে কেন্দ্র করে নিজেরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।বাংলাদেশের হিন্দুরা মনে করছেন ৮ দফা দাবি সরকার মানলেই সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে যা একটি ভুল ধারনা।বাংলাদেশের কাগজেকলমে যা লেখা থাকে বাস্তবে এর কম বিষয়গুলো কাজেকর্মে প্রতিফলিত হয়।সুতরাং বাংলাদেশে যদি এমন কোন সরকার থাকে যার কর্তারা সাম্প্রদায়িক মনোভাবের হয় তাহলে ৮ দফা কেন ১৪ দফায় হিন্দুদের কোন লাভ হবে না।
আসলে উদার-গনতান্ত্রিক ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ না থাকলে সংখ্যালঘুরা কখনো নিরাপদ থাকে না।বাংলাদেশে এর কোন বৈশিষ্ট্যই নাই।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা এমনিতেই খারাপ।যে যাকে পারছে পুন্দানোর চেষ্টা করছে।এর মধ্যে হিন্দুদের উচিত রাস্তায় সমাবেশ না করা।চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে সরকার এমনিতেই ছেড়ে দিবে কিছুদিন পর।
বাংলাদেশের হিন্দুদের একাংশ মনে করে ভারত সরকার তাদেরকে সাহায্য করবে।বাস্তবতা এর ভিন্ন।সহমর্মিতা ও সহায়তা দুইটা ভিন্ন জিনিস।ভারত সরকার বা ভারতের হিন্দুরা বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি সহমর্মি হতে পারে কিন্তু ভারত সরকার লিপ সার্ভিস দিয়ে যাবে; কোন একশন নিবে না যেমন তারা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের ব্যাপারে চিন্তা জানালেও রপ্তানি বৃদ্ধি করছে
বাংলাদেশের হিন্দুদের বুঝতে হবে তাদের জন্য ভারত সরকার কোন দিন নিজের লস করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোন বানিজ্যিক, কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ নিবে না।
যেমন বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দুদের একাংশ লাফালাফি করছে বিধায় বিজেপি তাদের ঠান্ডা রাখতে একটা প্রেস রিলিজ করছে।আবার কংগ্রেসও লোক দেখানো একটা প্রেস রিলিজ করছে।বাস্তবে এইগুলো বাংলাদেশের হিন্দুদের কোন উপকারে আসবে না।
এছাড়া বাংলাদেশের হিন্দুদের অনেকে মনে করছে তুলসী গ্যাভার্ড এসে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়ে বিগত দিনের হিন্দুদের উপর হামলার বিচারের ব্যবস্থা করিয়ে দিবে।এইটা বাংলাদেশের হিন্দুদের ভুল ধারনা।৫ আগষ্টের পর বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর এতগুলো হামলা হইল তুলসী গ্যাভার্ড কি কোন বক্তব্য রেখেছে? ২০২১ সালে তুলসী গ্যাভার্ড বক্তব্য রেখেছিল কারন তখন সেইটা তার ভোটের রাজনীতির দরকার ছিল।সে যখন আমেরিকার গোয়েন্দা পরিষদের ডিরেক্টরের দায়িত্ব নিবে তখন সে প্রমান করার চেষ্টা করবে যে, আমেরিকার প্রতি সে খুবই ডেডিকেটেড।সুতরাং এসব থেকে তুলসী গ্যাভার্ড দূরে থাকবে।
এখন অনেকেই বলবেন ইসরায়েল তো ইহুদিদের রক্ষা করে তাহলে কি ভারতও হিন্দুদের বাঁচাতে আসবে?
দেখেন পৃথিবীতে ইসরায়েল ও ইরান দুইটা ব্যতিক্রমধর্মী দেশ।ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা চার্টারে রয়েছে তারা শুধু ইসরায়েলকে নয় একইসঙ্গে পৃথিবীর সকল ইহুদিদের রক্ষা করবে।ইরান একইভাবে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে শিয়া মুসলমানদের শক্তিশালী করেছে।এছাড়া মুসলমান দেশগুলো অকেশনালি অন্য নির্যাতিত মুসলমানদের সহায়তা করে যদিও বেশিরভাগ সময় লিপ সার্ভিস দেয়।
এখন ভারতের গঠনতন্ত্র ইসরায়েল বা ইরান কোনটার মতই নয়।ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা কখনো বাংলাদেশে আসবে না হিন্দুদের উপর হামলার প্রতিশোধ নিতে বা হিন্দুদের বিমান দিয়ে নিয়ে যেতে।বরং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের সীমান্তে গোয়েন্দা বিমান নিযুক্ত করবে যেন বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা গিয়ে ভারতে না ঢুকতে পারে।
রিপাবলিক টিভির মত থার্ড ক্লাস টিভি চট্টগ্রাম দখল করে ফেলতে পারে কিন্তু এতে বাংলাদেশের হিন্দুদের বিপদ বাড়াবে।চট্টগ্রামের মুসলমানরা মনে করবে হিন্দুদের চট্টগ্রাম থেকে না তাড়াতে পারলে চট্টগ্রাম হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে।বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ হুজুগে তারা এইটা বুঝবে না যে ময়ুখ রঞ্জন ঘোষ ভারত সরকারের কোন অফিসার না।
আমি বাংলাদেশের হিন্দুদের বলব কাশ্মীরী পন্ডিত লেখকদের লেখা পড়ার জন্য।তারাও মনে করত ভারত সরকার তাদের পাশে রয়েছে।এতে কাশ্মীরের লোকাল মুসলমানদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।যে রাতে পাকিস্তান থেকে আসা মুজাহিদরা কাশ্মীরী পন্ডিতদের বড় পরিসরে উপর হামলা চালায় সেই রাতে কাশ্মীরী পন্ডিতরা সারারাত শ্রীনগর ভারতীয় সেনাবাহিনীর বেস ও দিল্লির বিভিন্ন মহলে সহায়তার আকুতি জানায় কিন্তু কোন সহায়তা করে নি ভারত সরকার।ফলে তাদেরকে কাশ্মীর ছেড়ে জম্মুর শরনার্থী শিবিরে চলে আসতে হয়।এখনো সেইখানে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা।
সুতরাং বাংলাদেশে হিন্দুরা কতটা ভালো থাকবে সেইটা নির্ভর করে বাংলাদেশের মুসলমানদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন।এখন বাংলাদেশের মুসলমানদের ইলিয়াসের মত টাউটরা বুঝিয়েছে ইসকন বাংলাদেশের জন্য বিশাল বড় থ্রেট সুতরাং ইসকনকে বাটাম দিতে হবে।মূল সমস্যা এইরকম ডিসইনফরমেশনের কারনে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।এর সমাধান বয়ানের পিঠে পাল্টা বয়ান তৈরি করা।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের মুসলমানদের বুঝতে হবে বাংলাদেশের হিন্দুরা আমাদের শত্রু না।তারা যদি আমাদের শত্রু হতো তাহলে ১৯৭১ সালে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ভেতর ছিল তখনই নিজেদের জন্য আলাদা দেশ বা সেইফ জোন চাইত।এছাড়া দেশভাগ হওয়ার পরও তাদের পূর্বপুরুষ এই দেশে থেকে গেছে কারন জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করা কঠিন।এখন তাদের পেটালে কি একশো বছর পর বাঙালি মুসলমানের ইতিহাস গৌরবময় হবে নাকি কলঙ্কিত হবে?এছাড়া তাদের ঘর পুড়ালে সেই আগুন দিয়ে আলু পুড়িয়ে খাবে অন্য কেউ।একটা দেশের ৮% ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী ৯১% লোকের জন্য থ্রেট নয়।আপনাদের সোশাল মিডিয়ায় হিন্দুদের সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তা সেফ উস্কানি যেন আপনি তাদের উপর হামলা করে নিজেকে জঙ্গি প্রমান করেন।আর তাতে কার লাভ সেইটা না বুঝার কথা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮