যে জন দাঁড়িয়ে থাকে চৈত্রের তপ্ত নির্জন দুপুরে
কোনো এক নবীন কবি আসবে বলে…….
যে জন দাঁড়িয়ে থাকে শ্রাবণের ঘন বরষায়
কোনো এক নৃত্য অথবা সংগীতশিল্পী আসবে বলে….
যে জন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে মাঘের শীত-সকালে
নূতন এক আবৃত্তি অথবা নাট্যকারের জন্য
যে জন অপেক্ষমান নূতন এক শিল্পীর জন্য
সে জন তো আর কেউ নয়
আমাদেরই প্রিয় মানুষ অপেক্ষমান গোলাম কুদ্দুছ
নূতন এক শিল্পীর জন্য জীবনভর অপেক্ষমান
গোলাম কুদ্দুছ জীবনের ষাটের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে
আশায় বুক বাঁধে, অন্যেরে বাঁধিবার আহবান জানায়।
অপেক্ষমান গোলাম কুদ্দুছ …..]
আমন্ত্রণপত্রে লেখা কথামালার চেয়ে সত্য তার কর্মচাঞ্চল্য। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, যে না হাত দিলে কোন কাজ যেন সম্পন্ন হয়না। নির্ভরতার এক প্রতীক গোলাম কুদ্দুছ। শুক্রবার গোলাম কুদ্দুছের ৬০তম জয়ন্তীর অনুষ্ঠানটি ছিল সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে। সকাল থেকে বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত এ আয়োজনে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন প্রিয় গোলাম কুদ্দুছ।
ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে শত সংষ্কৃতিকর্মী,শুভেচ্ছার পালা যেনশেষই হয় না। গোছাল আয়োজনকে সামলাতে যেন হিমসিম খেলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও হাসান আরিফ। অন্যরকম একটি দিন ছিল শুক্রবার।
গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশির সুরে। এরপর নৃত্যনন্দনের শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন শেষে গোলাম কুদ্দুছকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন। তাঁর শংসাবচন পাঠ করেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ; যা তাঁর হাতে তুলে দেন রামেন্দু মজুমদার ও মামুনুর রশীদ। কিরীটী রঞ্জন বিশ্বাসের আঁকা প্রতিকৃতি তুলে দেওয়া হয় গোলাম কুদ্দুছের স্ত্রী মরিয়ম নাসরিন, মেয়ে সামানজা পৃথ্বী ও ছেলে ইয়াসাদ মাবুদের হাতে। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ও কলকাতার শিল্পী দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবৃত্তি করেন আশরাফুল আলম।
দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুক্তি’ কবিতা অবলম্বনে গীতিনাট্য পরিবেশন করেন গোবিন্দগঞ্জের শিল্পীরা। সংগীত পরিবেশন করেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা। ‘বহ্নিশিখা’র শিল্পীরা গেয়ে শোনান গোলাম কুদ্দুছের লেখা দুটি গান ‘সোনাঝরা সেই দিনে’ ও ‘জন্মভূমির ধুলো গায়ে মেখে’।
গতকাল শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের হাতে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, ইনামুল হক, কেরামত মওলা, ফকির আলমগীর, ঝুনা চৌধুরী, লাকী ইনাম, শমী কায়সার, বিটিভির মহা পরিচালক হারুনর রশীদ, ম হামিদ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদসহ বিশিষ্টজনেরা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, মুক্তিযুদ্ধ-গবেষক মেজর (অব.) সামসুল আরেফিন, সহপাঠী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ সমাজের বিশিষ্টজন। এসেছিলেন গোলাম কুদ্দুছের নানা বয়সের বন্ধুরা। সবার শেষে তার নিজের কর্মময় জীবন ও ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে কথা বলেন গোলাম কুদ্দুছ। দৃপ্তভঙ্গীতে বললেন, ‘সংস্কৃতির জন্য কাজ করতে দায়বদ্ধতা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি, তার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
পথনাটক পরিষদের নাটক শিকারী মঞ্চস্থ হবার মাধ্যমে শেষ হয় এ আয়োজন। গোলাম কুদ্দুছের জনম্দিন নয় এ দিনটি ছিল সংষ্কৃতিকর্মীদের এক দারুন মিলন মেলা।