আদালতের আদেশে ইরাকের অনেক নারীকে কুমারিত্ব পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। বিয়ের আগে বা পরে তাদের প্রমাণ দিতে হচ্ছে তারা বিয়ের আগে কোন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেননি। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এক্ষেত্রে লাজলজ্জা ফেলে যুবতীদের বিয়ের আগে বিভিন্ন ক্লিনিকে ডাক্তারদের সামনে হাজির হতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে বিয়ের আগে কোন নারী যদি কুমারিত্ব হারান তাহলে তার শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড। কারণ বিয়ের আগে শারীরিক কোন সম্পর্ককে পরিবারের কাছে সম্মানহানিকর বলে বিবেচনা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এমন নারীকে তার আত্মীয়স্বজনরাই পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যা করে। বাগদাদের মেডিকেল লিগ্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিদিন গড়পড়তায় বেশকিছু কুমারিত্ব পরীক্ষা করা হয়। সেখানে জানালাবিহীন একটি রুমে এ পরীক্ষা করা হয়। এ রুমটি নীল রঙের টাইলস দিয়ে সজ্জিত। মাঝখানে রাখা একটি কালো টেবিল। তার এক প্রান্তে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা। সেখানেই এ পরীক্ষা করেন ডা. মুনজিদ আল রেজালি। তিনি বলেছেন, এখানে আমরা কোন এক যুবতীর বিয়ের প্রথম দিনেই পরীক্ষাগুলোর অর্ডার পাই। কারণ, নববিবাহিতার স্বামী তার স্ত্রীর কুমারিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন। এর পরেই পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে যায় পরীক্ষা করাতে। এ বিষয়ে আদালতেরও নির্দেশ আছে। এসব আদেশ আসে আদালত থেকে। ফলে আমরা পরীক্ষা করতে বাধ্য হই। ডা. রেজালি বলেন, এমন ঘটনা বিরল নয়। আমরা পর্যাপ্ত হারে পাই এ রকমের ঘটনা। তিনি বলেছেন, পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে নারীর সতীচ্ছেদ পরীক্ষা করা। এক্ষেত্রে একজন পুরুষ থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের প্রজননতন্ত্রের সমস্যার জন্য নিজেরা মনে করেন, তার স্ত্রী সতী নন। তার স্ত্রীর কুমারিত্ব পরীক্ষা করে ওই ফল বরপক্ষের হাতে দেয়া হয় না। তা সরাসরি চলে যায় আদালতের হাতে। ওই হাসপাতালের ফরেনসিক ডাক্তার সামি দাউদ বলেন, বিয়ের প্রথমদিনে কিছু উপসর্গ দেখে নববিবাহিত পুরুষ ধরে নেয় তার স্ত্রী কুমারী নয়। তার মতে, ইরাকের পুরুষদের এমন ধারণার কারণ তাদের যৌন শিক্ষা ও এ সংক্রান্ত জ্ঞান খুবই দুর্বল। তাই তারা ওই উপসর্গগুলো না দেখলেই আদালতের দ্বারস্থ হয়। আর আদালত কোন উপায় না পেয়ে নববিবাহিতার কুমারিত্ব পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়ে দেন। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, কুমারিত্ব পরীক্ষা করাতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। তিন জন ডাক্তার এ পরীক্ষা করেন। তার মধ্যে কমপক্ষে একজন থাকেন নারী ডাক্তার। তিনি যে পরীক্ষা করেন তা অন্য দু’ডাক্তার সত্যায়িত করেন। আইনজীবী আলী আওয়াদ কুর্দি বলেন, যদি পরীক্ষায় দেখা যায়, কোন নববিবাহিতা কুমারি নন, তিনি বিয়ের আগে এ সত্য গোপন করেছেন তাহলে তাকে রক্ষা করার কোন আইন নেই। তখন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ওই যুবতী বধূর পরিবারের সদস্যরা ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ বরপক্ষকে নানা উপহার, অর্থ ও অন্যান্য খরচ দিয়ে থাকে। এটাকে বরের ‘ক্ষতিপূরণ’ বলা হয়। ইরাকের বিচার বিভাগের অনেক কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে স্থানীয় নারী অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইরাকি ওমেন’স এসোসিয়েশনের ইনতিসার আল মায়ালি বলেন, এ অবস্থা থেকে নারীদের রক্ষা করার কোন পথ নেই বেসরকারি সংস্থাগুলোর। তবে মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র পলিসি উপদেষ্টা মারিয়ানি মোলমান কুমারিত্ব পরীক্ষাকে অন্যায় ও অকার্যকর একটি পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, কুমারিত্ব পরীক্ষা, জোর করে কুমারিত্ব পরীক্ষা এবং আদালতের আদেশেই কোন কুমারিত্ব পরীক্ষা- এ রকম যেকোন পদক্ষেপই অমানবিক এবং অন্যায্য। এক্ষেত্রে তিনি কুমারিত্ব পরীক্ষার প্রাথমিক যে উপসর্গ আছে সে বিষয়ে বলেন, সব সময়ই ওই উপসর্গগুলো দেখা যায় না।
যেকোন কারণে ওই উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এর জন্য পরীক্ষা করানো দরকার নেই।
পুরুষরাই তো বেশি চরিত্রহীন, তাদের কুমারিত্ব পরীক্ষার উপায় কি?
মানবজমিন
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪১