আফগান/ইরাক যুদ্ধকে এবার কি বলবেন!!
কেবল সন্ত্রাসীরা নয়, বিশ্বের গোটা মুসলিম সম্প্রদায় আমেরিকার শত্রু। তাই গণহারে তাদের ধ্বংস করা উচিত। ফলে আমেরিকার যুদ্ধ ‘ইসলামের’ বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধে বিশ্বের ১৪০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে জিততে এমনকি হিরোশিমা স্টাইলে এটম বোমা মেরে ইসলামের পবিত্রতম ভূমি মক্কা এবং মদীনাকে নিশ্চিহ্ন করার দরকার হতে পারে! একইভাবে বেসামরিক মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানোরও প্রয়োজন পড়তে পারে!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জয়েন্ট ফোর্সেস স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর তরুণ সদস্যদের প্রশিক্ষণের একটি কোর্সের এক অংশে গোটা ইসলাম ধর্মকেই এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল! সঙ্গত কারণেই যেসব সেনা ওই কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ কোর্স করেছে, তারা ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ নিয়েই চাকরিতে যোগদান করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি পেন্টাগণের নজরে আসার পর গত মাসের শেষ দিকে কোর্সটি স্থগিত করেছে এবং তা পুণঃনিরীক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। ওই কলেজের কোনো সেনা প্রশিক্ষন কোর্সে যাতে ইসলামবিরোধী কোনো উপাদান না থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে বলেছে পেন্টাগণ। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এজাতীয় উগ্র মতবাদ তারা সমর্থন করে না। দেশটির সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এই কোর্সের নিন্দা করেছেন। মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি বলেছেন, এই কোর্সটি খুবই আপত্তিকর এবং তা মার্কিন মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং একাডেমিক দিক থেকেও এটি যথার্থ ছিল না।
কোর্সের একটি অংশে পড়ানো হতো, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক লড়াই’ চালানো উচিত। মুসলমানের সঙ্গে ‘সহাবস্থান’ সম্ভব নয়! গত এপ্রিলে ওই কলেজের এক প্রশিক্ষণার্থী এই কোর্সটির ব্যাপারে প্রথম আপত্তি তোলেন। এরপর কোর্সটি নিয়ে হৈ চৈ শুরু হলে তা বাতিল করা হয়। জেনারেল ডেম্পসি জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং কোর্সটির দায়িত্বে থাকা সামরিক অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম্যাথিউ ডুলেকে ওই শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই বিতর্কিত কোর্সটির কিছু পাঠ্যসামগ্রী একটি ওয়েবসাইটে পোস্ট করার পর এটি গণমাধ্যমের নজরে আসে। লে. ডুলে তার কোর্সের একটি অংশে লেখেন, এখন আমরা বুঝতে পারছি ‘মধ্যপন্থী ইসলাম’ (মডারেট ইসলাম) বলে কিছু নেই। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সময় এসেছে তার আসল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে জানানোর। এই বর্বর আদর্শকে (ইসলাম ধর্মের) আর সহ্য করা হবে না। হয় ইসলামকে নিজে থেকে বদলাতে হবে, নয়তো ইসলাম যাতে নিজে থেকই ধ্বংস হয় আমরা তার ব্যবস্থা করবো।’ এতে তিনি আরও লেখেন, সশস্ত্র সংঘাতের সময় বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেয়ার যে নীতি জেনেভা কনভেনশনে আছে, তা এখন আর প্রযোজ্য নয়। এরপর তিনি পরামর্শ দেন, জার্মানির ড্রেসডেন, জাপানের হিরোশিমা বা নাগাসাকিতে যা করতে হয়েছিল (বোমায় গোটা শহরর ও বিপুল জনগোষ্টি নিশ্চিহ্ন করা) , ইসলামের পবিত্রতম নগরী মক্কা বা মদীনা ধ্বংসের জন্য সেই পথই বেছে নিতে হতে পারে। এ ঘটনা নিয়ে হই চই শুরু হওয়ার পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডুলে চুপ মেরে গেছেন। তার এই অদ্ভুত পাঠ্য সম্পর্কে মন্তব্য জানতে বার্তা সংস্থা এপি তাকে ফোন করলে, ‘সরি স্যার, আমি এখন কথা বলতে পারছি না’ বলেই ফোন কেটে দেন। আর ফোন ধরেননি। পেন্টাগন আশা করছে এ মাসের শেষ নাগাদ ঘটনার একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে। খবর বিবিসি, এপি ও রয়টার্সের।
সূত্রঃ দৈনিক ঈত্তেফাক