আমার গত পোস্ট 'স্থাপত্যকলায় উইপোকা'-তে প্রিয় ব্লগার জুন আপার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উইদের ঘরবাড়ির কাঠামো নিয়ে নেটে একটু ঘাটাঘাটি করলাম। অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম উইরা অন্ধ হয়েও বিভিন্ন নকশার সুন্দর সুন্দর ঢিবি বানাতে পারে। মানুষের মতোই অঞ্চলভেদে বাসা বানানোর কৌশলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। উইপোকা ও ঢিবি সংক্রান্ত বিদ্যায় তাদের বাড়িঘরের কাঠামোগুলোকে মোটামুটি ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে: (১) মোচাকৃতি (কনিকেল) (২) গম্বুজ আকৃতির (৩) গির্জা আকৃতির (৪) ভৌগোলিক দিকনিদর্শক (মেরিডিয়ান) বা ম্যাগনেটিক ও (৫) ব্যাঙের ছাতা আকৃতির।
অনেকগুলো ঢিবি বিভিন্ন আকৃতির মিশ্রণ। অঞ্চলভেদে মাটিতে বিভিন্ন প্রকারের খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকে। ফলে মাটির রঙের ভিন্নতা হয়। উইরা তাদের বাসস্থানের আশেপাশের ও ভূমির গভীর থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাড়ি বানায় বলে তাদের ঢিবি গুলো বিচিত্র রঙের হয়ে থাকে। আড়াই হাজারেরও বেশি প্রজাতির উইরা অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বিভিন্ন নকশায় বাসা বাঁধে। আসুন আমরা কিছু বিস্ময়কর কাঠামোর উইয়ের ঢিবির ছবি দেখি। ছবিতে বৈচিত্রময় ঢিবি গুলো মূলত অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের।
মোচাকৃতির উইয়ের ঢিবি: এই ঢিবিগুলো মজবুত শঙ্কু আকৃতির এবং নিচের দিকে এসে তা প্রসাররিত হয়। সাধারণভাবে ঢিবির উচ্চতা প্রস্থের চেয়ে ৩ গুন্ বেশি হয়।
গম্বুজ আকৃতির উইয়ের ঢিবি: এই ঢিবিগুলো কিছুটা মোচাকৃতির হলেও শীর্ষ অনেকটা গোলাকার হয়, আকারে তুলনামূলক ছোট এবং উচ্চতা ও প্রস্থের অনুপাত কম হয়। গম্বুজ ও মোচাকৃতির ঢিবিগুলো মধ্যে অনেক সময় পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু ঢিবি উভয়ের মতনই দেখায়। বিজ্ঞানীরা তখন তাদের অর্ধ-মোচাকৃতির বলে থাকেন।
গির্জা আকৃতির উইয়ের ঢিবি: এই ঢিবিগুলো অনেক জটিল কাঠামোর হয় যেখানে একাধিক শিখর দেখতে পাওয়া যায়।
ম্যাগনেটিক বা ভৌগোলিক দিকনিদর্শক ঢিবি: এই ঢিবিগুলো উত্তর - দক্ষিণ দিকের সাথে সমান্তরাল হয়ে কিছুটা সমতল ও আয়তাকার কাঠামো গঠন করে। উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এদের বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
ব্যাঙের ছাতা আকৃতির উইয়ের ঢিবি: এই ঢিবিগুলো ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুমের মতন টুপি পরে থাকে।
এছাড়াও আরো অনেক ধরনের উইয়ের ঢিবি চোখে পড়ে যাদেরকে উপরের ৫টি শ্রেণীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। এগুলো সুগঠিত নয় এবং কিছুটা ভিন্ন আকৃতির হয়। তেমনি কিছু ঢিবির ছবি :
প্রিয় ব্লগার আখেনাটেন ভাইয়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নওগাঁর আলতাদীঘি শালবনেও খুঁজে পেলাম লাল মাটি দিয়ে তৈরি সুন্দর সুন্দর উইয়ের ঢিবি। নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত সবুজ-সৌন্দর্যে ভরপুর এ শালবন। নওগাঁ এসে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে ৪০ কিমি. ভেতরে ধামইরহাটে যাওয়া যায়। এখানে আলতাদিঘী নামের একটি দিঘীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বনভূমি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এটিকে 'আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান' হিসাবে ঘোষণা করেছে। এছাড়াও জাতীয় উদ্যানের ১৭.৩৪ হেক্টর বনভুমিকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বন অধিদপ্তর বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করে। বনের ভেতর হাঁটলেই গাছের ঝরাপাতার মাঝে-মধ্যে চোখে পড়ে উইপোকার তৈরি বড় বড় লাল মাটির ঢিবি। বনে ঢিবিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কোথাও কোথাও প্রায় ১০ ফুট (৩ মিটার) উঁচুর বিশাল আকৃতির উইয়ের ঢিবিগুলো শালগাছের গায়ে জড়িয়ে আছে। নিম্নে গুগলে খুঁজে বিভিন্ন সাইট থেকে পাওয়া তারই কিছু ছবিঃ.
ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে মানুষজন যেমন বিভিন্ন নকশার বাড়িঘর নির্মাণ করে, তেমনি উইপোকাদের বাসস্থানের ক্ষেত্রেও অঞ্চলভেদে বিভিন্নতা দেখা যায়।
ছবিসূত্র : গুগল থেকে সংগৃহীত
তথ্যসুত্র : American Society of Civil Engineers (ASCE) - Journal of Structural Engineering - Termite Mounds: Bioinspired Examination of the Role of Material and Environment in Multifunctional Structural Forms