চলতি বছরের একদম গোড়ার দিকে চীনের উহানে নভেল করোনা ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা যায় যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিনের গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত খবরে ইতালি, স্পেন যুক্তরাষ্টসহ সারাবিশ্বে এই ভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে দ্রুত গতিতে বাড়ছে তাতে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্রে ভয়ংকর আকারে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে বললে অত্যুক্তি হবেনা।
চিত্র: ১
আমরা যদি বাংলাদেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক জন থেকে দিন হিসেব শুরু করি, তাহলে চিত্র-১ থেকে সংক্ষেপে দেখতে পাই,
দিন (০) ৬ এপ্রিল, মোট ১২৩ জন,
দিন (১) ৭ এপ্রিল, মোট ১৬৪ জন,
দিন (২) ৮ এপ্রিল, মোট ২১৮ জন ,
দিন (৩) ৯ এপ্রিল, মোট ৩৩০ জন,
দিন (৪) ১০ এপ্রিল, মোট ৪২৪ জন,
দিন (৫) ১১ এপ্রিল,মোট ৪৮২ জন,
দিন (৬) ১২ এপ্রিল, মোট ৬২১ জন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
অর্থাৎ ছয় এপ্রিলের আগে পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা একশো এর নিচে ছিল। পরবর্তিতে তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করেছে এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে ছয় শতাধিকের চেয়ে বেশিজন আক্রান্ত হয়েছেন যাদের মধ্যে ৩৯ জন সুস্থ হয়েছেন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫৪৮ জন এবং ৩৪ জনের মতো মৃত্যুবরণ করেছেন।
চিত্র: ২
চিত্র: ৩
মডেল আকারে প্রদর্শিত হলে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কেস A অথবা কেস B অনুসরণ করতে পারে (চিত্র: ২ ও ৩) । যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখা হয় এবং কোনোরূপ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে আক্রান্তের ঘটনা কেস A এর মতো হতে পারে। তারমানে একজন আক্রান্ত রোগী থেকে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং উল্লেখযোগ্যহারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। আর যদি যথাযথ সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয় যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পারস্পরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে সম্ভাব্য রোগের সঞ্চালন ঝুঁকি কমানোর নিমিত্তে সামাজিক দূরত্ব (প্রায় ২ মিটার) বজায় রাখা ইত্যাদি মেনে চলা হয় তাহলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রবণতা কেস B এর ন্যায় হবে। সেক্ষেত্রে তুলনামূলক কম মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
চিত্র -৩ এ সংক্রমণের প্রবণতা কার্ভ আকারে দেখানো হয়েছে। উক্ত কার্ভ থেকে এটা সহজেই অনুমেয় যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংক্রমণের হার অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যাবে। অপরদিকে, সামাজিক দূরত্ব এবং যথোপযুক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভবপর হবে এবং বৈশ্বিক মহামারীটির হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
চিত্র: ৪
এক নম্বর তথ্যচিত্র থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অনেকটা ইতালি, স্পেন ও ইরানের সাথে তুলনা করা যায়। আমার ধারণামতে, বাংলাদেশে সম্ভাব্য কার্ভটি চিত্রে প্রদর্শিত ডট লাইন এর মতো হতে পারে। সেই হিসেবে, দিন (১৭) অর্থাৎ ২৩ এপ্রিলে বাংলাদেশে আনুমানিক মোট ৫০০০, দিন (২২) / ২৮ এপ্রিল আনুমানিক মোট ১০,০০০ ও দিন (৪৮) বা ২৪ মে এর কাছাকাছি সময়ে - আনুমানিক মোট ৫০,০০০ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। (চিত্র: ৪ )
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের উচিত মে মাসের শুরু থেকেই ন্যূনতম ৫০,০০০ করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা কার্যক্রমের জন্য যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতির বন্দোবস্ত রাখা যেমন পর্যাপ্ত রোগ সনাক্তকরণ কীট, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য পিপিই, সফল ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। নচেৎ বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশে রোগটির প্রাদুর্ভাব ঠেকানো কঠিনতর হয়ে পড়বে। যদিও প্রস্তুতি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং তা কখনোই নির্ধারিত নয়। তবুও এখনই এর বিরুদ্ধে যথার্থ ও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার।
ডাটা সূত্র :
[১]Institute of Epidemiology, Disease Control and Research (IEDCR), Bangladesh
[২] DOMO CORONAVIRUS TRACKER
[৩] উইকিপিডিয়া - ২০২০ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী
[৪] The New York Times -"You Can Help Break the Chain of Transmission"
[৫] Live Science - "Coronavirus: What is 'flattening the curve,' and will it work?"