somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় ছেলে

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজের বুয়ার বিছানায় স্বামীকে আবিষ্কার করা নাকি স্বামীর একটা অবৈধ ছেলে আছে তা জেনে ফেলা- কোনটা বেশি খারাপ। তাঁর স্বামীর চরিত্রে গোলমাল আছে, বিয়ের পনেরো বছর পর উপলব্ধি করলেন নাদিরা বেগম।
কোনকালেই কোন কাজের মেয়ে বা পাশের বাড়ির ভাবিকে নিয়ে ভাবতে হয়নি। নাসিরুদ্দিন নিজের মনে থাকেন। বাড়ি ফিরে টিভি দেখাই তাঁর একমাত্র কাজ। অফিস টাইমের ঠিক চল্লিশ মিনিটের মাথায় ফেরেন তিনি। ঝড়-তুফান ছাড়া এর নড়চড় হয়নি কোনদিন। নাদিরা তাঁর মোবাইল ফোন, ড্রয়ার সব ঘেটে দেখেছে। না, শাশুড়ি ছাড়া আর কোন নারীর অস্তিত্ব তাঁর স্বামীর জীবনে পাওয়া যায়নি। তাহলে ছেলেটা এল কোত্থেকে। বামদিক থেকে তাকালে ঠিক নাসিরুদ্দিনের মুখের আদলটাই আসেনা! নাদিরা আঁতিপাতি করে প্রমাণ খোঁজেন। ছেলেটার হাঁটাচলা, কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করেন। তবে মুশকিল, আপদটা তার জায়গা ছেড়ে বেরই হয়না। বলা সত্তেও সে সবার সঙ্গে এক টেবিলে বসে খায়না।
ছাপোষা কেরানিই নাসিরুদ্দিন। অফিসে বাদামি ফাইলগুলোর আড়ালে মুখ লুকিয়ে থাকেন। বাড়িতেও প্রায় তাই, নাদিরার সঙ্গে কোনদিন গলা তুলে কথা বলেন নি। কাজের মেয়েটাকে কোনদিন কিছু ফরমায়েশ দিয়েছেন তা-ও মনে করা যাবেনা। দুই ছেলেমেয়ে যেন পাশের বাড়ির, বেড়াতে এসেছে এখানে। অথবা তিনিই যেন এ বাড়ির অতিথি, তাও অনাকাক্সিক্ষত।
নাদিরা ভেবে কুলকিনারা পায়না, এই লোকটাই এত বড় সাহস দেখালো কীভাবে! বলা নেই, কওয়া নেই বাড়িতে এনে তুললেন মাদ্রাসার এক এতিমকে। তার বয়স আঠারো পেরিয়েছে। মাদ্রাসায় আর থাকতে দেবেনা। তাই বলে নাদিরার বাড়ি!
হুলস্থুল রাগ হলেও একসময় মেনেই নিয়েছিলেন তিনি। থাক, বাচ্চাদুটোকে আরবি পড়াবে। টুকটাক কাজও করে দেবে। খরচ আর কী-ই বা বাড়তি একটা মানুষের পেছনে।
নাদিরার স্কুল ছুটি দুপুরের মধ্যেই। ছেলেমেয়ে দুটো তাঁর স্কুলেই পড়ে। মার সঙ্গেই ফেরে তারা। প্রথম প্রথম ফিরে একটু অস্বস্তি লাগত তাঁর। ড্রইংরুমের এক কোনায় খাট পেতে দেওয়া হয়েছে ছেলেটার জন্য। মুখ লুকিয়ে থাকতে পারলেই বাঁচে সে। কিন্তু এই সময়টায় নাদিরার সঙ্গে দেখা হয়েই যায় তার। সেদিন অসহ্য রোদে পুড়ে তেতে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। দরজা খুলে দিল সে-ই। ঘরে ঢুকেই নাদিরার মেজাজ খারাপ। ফ্রিজ নষ্ট, এক গ্লাস ঠান্ডা পানিও জুটবে না। ‘একটা মেকানিক ডেকে আনতে পারলানা এতক্ষণ। বসে বসে খাওয়া খালি।’ গলা তো তেমন চড়েইনি তাঁর। এরজন্যই স্বামীর কাছে এমন অপমান হতে হল তাঁকে, তা-ও ছেলেটার সামনে। ‘তোমার চাকর না ও নাদিরা। আমিই যাচ্ছি।’ বেডরুম থেকে বের হয়ে বললেন নাসিরুদ্দিন। তাঁর স্বামীটা যে একেবারে গোবেচারা ভুত নন, সেটা সেদিনই প্রথম টের পেলেন নাদিরা।
ও থাকবে বাড়ির ছেলের মতই। ফাইফরমাশ খাটার জন্য কাজের লোক আছেই। এখানে থেকে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবে। নাদিরার ছেলের চেয়ে কম নয় ওর অধিকার। লোকটা বলে কী! সন্দেহটা তখনই ঢুকে যায় নাদিরার মনে। কাকে বলবেন এই কথা? স্বামীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন?
নাদিরাকে আর তেমন ভাবাভাবির সুযোগ দেন না নাসিরুদ্দিন। ঠান্ডা মানুষটার রক্তচাপ কিন্তু বেশিই ছিল। টুপ করে এক রাতে তেমন সাড়াশব্দ না করেই মরে যান। অকালে বিধবা হয়ে নাদিরার যে কষ্ট তাকে যেন একটু ছাপিয়েই বড় হয়ে উঠল নিন্দামুক্তির স্বস্তি। এবার ছেলেটাকে ঘাড় ধরে বিদায় করা যাবে। কিন্তু নাসিরুদ্দিন যে এত বড় এটা কান্ড ঘটিয়ে রেখেছেন তা ভাবতেও পারেন নি তিনি। সংসার, দুটো ছেলেমেয়ে সবই এমন মিথ্যা হয়ে উঠল।
চাপা ফিসফাস জোরালো গুঞ্জন হয়ে উঠছে। লোকটা মরেছে একমাসও হয়নি। এরমধ্যেই আত্মীয়-স্বজন, চেনাজানা মানুষের কৌতুহল সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কেন? আপনি কিছু জানতেন না ভাবী? আপনাকে না জানিয়েই এত বড় কাজটা করে ফেললেন আপনার সাহেব? এখন দুই বাচ্চা নিয়ে আপনি চলবেন কীভাবে? শেষ প্রশ্নটার উত্তর মুখে চলে আসে প্রায় নাদিরা বেগমের। ‘তাতে তোর কী, তুই তো আমাকে খাওয়াবি-পরাবি না।’ শোকগ্রস্ত বিধবার চেহারাটা ধরে রেখে ভেতরের ঝড় সামলান তিনি।
আতংক লাগে তাঁর। লোকটা মরার পরও এমন মনে হয়নি। এবার কি ছেলেমেয়ে নিয়ে রাস্তাতেই নামতে হবে? প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকের কাজটাই হবে তাঁর সংসার চালানোর অবলম্বন?
কয়েকটা ফাইল হাতে রঙচটা ফুলহাতা শার্ট পরে শওকত সাহেব যেদিন এলেন, নাদিরা যেন হালে পানি পেলেন। স্বামীর বন্ধুর খাতিরযতœ কম করলেন না। মরা বাড়ির বসার ঘরে বসে চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে আসল কথাটা পাড়লেন শওকত সাহেব। ‘ভাবি, এই বাড়ি তো এবার যে মালিক তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। নাসির সব বন্দেবস্ত করে রেখে গেছে। তবে আপনার দিকটাও সে মনে রেখেছে।’
বিস্কুটের ভেজা অংশটুকু টুপ করে চায়ের কাপে পড়ে যেতে দেখেলেন নাদিরা। এই ছিল তাঁর স্বামীর মনে। অপরাধটা কোথায় তাঁর। শ্বশুড়ের জায়গার ওপর কোনমতে একতলা বাড়িটা তুলেছিলেন, গ্রামে কিছু জমি আছে। আর পেনশন হাবিজাবি। প্রায় সবই নাসিরুদ্দিন লিখে দিয়েছেন ছেলেটার নামে। নাদিরা আর ছেলেমেয়েরা এবার যাবেন গাছতলায়।
শওকত সাহের তাঁকে সান্তনা দেবার সাহস করলেন না। বাদামি একটা মুখবন্ধ খাম ধরিয়ে বিদায় হলেন।

নাদিরা
তুমি অনেক রাগ করবা জানি। বিশ্বাস কর আমার কোন উপায় ছিল না। আমি ওর যে ক্ষতিটা করেছি তা পুষিয়ে দেবার জন্য এটাও যথেষ্ট নয়। আমি না থাকলেও তোমার বাবা-মা, ভাইরা আছেন। ওর আমি ছাড়া কেউ ছিলনা। এখন তো তা-ও থাকলনা। খুব কঠিন একটা ছেলেকে আপন করে নেওয়া? আমার মত অপদার্থর জন্যও তো তোমার কম ভালবাসা ছিলনা।
আমি যা করেছি ভেবেচিন্তেই করেছি। ও আমাদের পরিবারের অংশ। আমার পরিবারটা ভেঙনা। তোমার কোন চিন্তা নেই। ছোট দুই ভাইবোন আর মার দায়িত্ব সে নেবে এই বিশ্বাস আছে আমার। তুমি কি পারনা এতটুকু আগাতে?
ভাল থেকো
নাসির

এই প্রথম একদম শোক আর ভালোবাসা থেকেই কাঁদতে পারেন নাদিরা।
তবে সেটা সাময়িক, মাথা পরিষ্কার হতেই নানা ভাবনা আসে। এত বড় পরীক্ষাও তাঁকে দিতে হবে। কেন? দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি চলে যেতে পারেন বাপের বাড়ি, চাকরিটা তো আছেই। কত বড় চালাকিটা করেছেন নাসিরুদ্দিন। নিজের পাপের বোঝা চাপিয়ে দিলেন নাদিরার ঘাড়ে। নাদিরার কি উচিত না প্রতিবাদ করা? মানসম্মানের আর ভয় কী। সম্পত্তি ভাগের কথা শুনলে তো যেটুকু সন্দেহ ছিল তাও উড়িয়ে দেবে মানুষ। মা-টাকে কেন বিয়ে করলেন না নাসির সাহেব, নাকি সে সুযোগ পাননি। তার আগেই মহিলা মরে গেছে। হিসেবমতে নাদিরার বিয়ের আগে ছেলেটার জন্ম। এত কথা লুকিয়ে লোকটা নাদিরাকে বিয়ে করেছিল। নাকি আগে ওই মহিলাকেও বিয়ে করেছিলেন! তাহলে তো ছেলেটাকে অবৈধ বলা যাচ্ছেনা।
ছেলেটা তো দূরেই ছিল। তাদের সংসারে এতদিন পর এসেছে। এতদিনেও নাসিরুদ্দিন বলতে পারলেন না এসব। কী হত নাদিরাকে বললে। সে কি এতই অমানুষ। লোকটার এই সামান্য সময়ের স্খলন মেনে নিতে পারত না? এইজন্যই লোকটা সবসময় চোরের মত থাকত। সারাক্ষণ কী যেন অপরাধবোধ। আসলেই তো, প্রতারক সে। সব যেন এখন খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। আঠার বছর ধরে এই ছেলের কথা গোপনেই রেখেছেন নাসিরুদ্দিন। তাকে এতিমখানায় রেখেছেন, খরচও চালিয়েছেন। আর রাখতে পারলেন না যখন, নিয়ে এলেন বাড়িতে। হ্যাঁ, বড় ছেলেই তো। তবে নাদিরার নয়।
নাসিরুদ্দিনের সামনে একবার দাঁড়াতে পারতেন যদি। লোকটাকে ছাড়তেন না। অপরাধ প্রমাণ হয়েছে, শাস্তিদাতাও তৈরি, শুধু অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই যন্ত্রণা নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে নাদিরাকে!
বাড়ি ছাড়েন নি তিনি। দেখাই যাক না, ছেলেটা কী করে। জেনেছেই তো সে, সব কিছুর মালিক সে-ই। তার কোন পরিবর্তন নেই। আগের মতই ড্রইংরুমের কোনায় পড়ে থাকে। তাঁর বাচ্চাদুটো সঙ্গেও কথা বলে না তেমন। ভর্তিপরীক্ষায় টিকে গেছে। এবার বোধহয় বাড়ি ছেড়ে হলে উঠবে। উঠবে কী? নাদিরা ভাবেন, কবে সে নিজের অধিকার চাইতে আসবে। মালপত্র গুছিয়ে চলে যেতে বলবে তাঁকেই। একটা বছর তো হয়েই গেল প্রায়। নাসিরুদ্দিন সাহেবের মৃত্যুবার্ষিকী এসে পড়ছে। লোক দেখানো হলেও তো কিছু একটা করতে হবে। মন টানছেনা নাদিরার একটু। মিথ্যার ওপর এতদিনের জীবন ছিল লোকটার, মরার তো শাস্তিটা পাক সে। তাঁর আত্মার শান্তির জন্য কিছুই করবেনা নাদিরা। ছেলেটাও তো কিছু বলছেনা। তারও তো বাবা। দোয়া-দরুদ তো সারাবছরই পড়ছে। আলাদা করে কিছু করছে কি?
বাদামি খামের আরেক বার্তা নিয়ে আসেন শওকত সাহেব। কাল নাদিরার স্বামীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। এবার কী? ওর মা কি বেঁচে আছে তবে? এবার এসে জুটবে সেও? নাদিরা অবাক হবেন না মোটেও। খামটা খুলতেও ইচ্ছা নেই যেন। এবার চা-টুকুও জোটেনা শওকত সাহেবের। কথা না বাড়িয়ে বিদায় হন। এটুকই কাজ দিয়ে গেছেন তাঁকে বন্ধু নাসিরুদ্দিন।
এবার খামটা বেশ মোটা। প্রমাণস্বরূপ আগের বিয়ের কাবিননামা দিয়েছেন নাসিরুদ্দিন? ঠিক এক বছর পরে? আগে থেকেই সব বলা ছিল বন্ধুকে।
খামের ভেতর থেকে খসে পড়ে এক টুকরা খবরের কাগজ। মলিন হয়ে বাদামি হয়ে গেছে। তুলে নিয়ে তারিখটা দেখেন নাদিরা। মনে মনে হিসাব করেন, ঠিক আঠার বছর আগের। একটা খবরে লাল সাইনপেনের বর্ডার।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত, অলৌকিকভাবে জীবিত শিশু

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চালকসহ একটি মাইক্রোবাসের ছয়জন আরোহি। অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে দুই বছরের শিশু। গতকাল ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মাইক্রোবাস খাদে পড়ে গেলে এ ঘটনা ঘটে। গাড়িটি আরোহি বাকি সবাই ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে কোন যানবাহন বা পথচারির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। শিশুটি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে ছিটকে পড়ে। গাড়ির আরোহিরা সবাই একই পরিাবারের সদস্য বলেও মনে করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে দুজন বয়োজ্যেষ্ট নারী পুরুষ, তিনজন তরুনী ও একজন তরুণ।
খুব ভোরে এ ঘটনা ঘটাতে কোন প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। সকালে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়িটি দেখতে পান গ্রামবাসীরা। শিশুটিকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। তার অবস্থা ভালোর দিকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

কাঁপা আঙ্গুলে চিঠি খোলেন নাদিরা বেগম।

নাদিরা
তুমি বুদ্ধিমতি মেয়ে। খবরটি নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে। সে সময়ে খুব আলোচনা হয়েছিল। বাচ্চাটার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। এতিমখানাতেই জায়গা হয় তার। তুমি ভাবছ, তাতে আমার কী, কত ছেলেমেয়েই এমন দুর্ভাগা হয়। কিন্তু আমিও দুর্ভাগা কম নই। কেন সেদিন আমি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি যাওয়া শখ করলাম, আমার জীবনটাই বদলে গেল এক ভোরে। হ্যাঁ, আমাকেই পাশ কাটাতে চেয়েছিল মাইক্রোবাস চালক। ঝরঝরে মোটরসাইকেলটা নিয়ে আমি যদি তার সামনে পড়তাম কী হত বল। তবে পরে আমার অনেকবার মনে হয়েছে এমন হলেই বোধহয় ভাল হত। একটা গোটা পরিবারের মৃত্যুর কারণ হয়ে এতদিন ধরে বেঁচে আছি আমি। শুধু তাই না, সবার আদরে মানুষ হওয়ার কথা যে বাচ্চাটার তাকে এতিমখানায় পাঠিয়ে দিলাম আমি। আজীবন এই পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে বলেই কি বেঁচে থাকলাম আমি।
বিশ্বাস কর, ওর সামনে দাঁড়াতে ঠিক আঠারোটা বছর সময় লেগেছে আমার। ওর আর কোন ঠিকানা ছিলনা বলেই আমাকে যেতে হয়েছে। এর আগে অনেকবার গিয়েছি সেই এতিমখানায়। ওকে দূর থেকে দেখতাম। দুর্ঘটনার যেভাবে পালিয়ে গিয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই পালাতাম এক সময়। তোমাকে কী বলতে পারতাম না? তুমি হয়তো আমার কষ্ট ভাগ করে নিতে। কিন্তু কখনো তোমার মনে হতনা আমার এই অপরাধের ছায় আমাদের সন্তানদুটোর ওপরও পড়তে পারে। এই ভয়ে কি কুঁকড়ে থাকতে হতনা তোমাকে সব সময়। আমি তোমাকে এই কষ্টটা দিতে চাইনি।
তুমি আমার আর ওর সম্পর্ক নিয়ে কী ভাবতে তা আমি বুঝতে পারতাম। তোমাকে শুধরে দেবার সাহস পাইনি। তোমার আশংকাটা সত্যি হলেই বোধহয় ভাল ছিল। অন্তত নিজের পরিচয়টুকু তো ওকে দিতে পারতাম। ও হয়তো আমাকে ওর বাবা ভাবে। থাক না, ওর ভুল ভাঙানোর দরকার কী। তুমিই সিদ্ধান্ত নিও।
ভাল থেকো
নাসির


চিঠি আর খবরের কাগজটা ছিঁড়ে কমোডে ফেলেন নাদিরা। ফ্লাশ টেনে ড্রয়িংরুমে এসে বসেন তিনি। ‘তোমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী কাল। মিলাদ-টিলাদের ব্যবস্থা করা দরকার না। টাকা নিয়ে যাও। সব তোমাকেই সামলাতে হবে। তুমি বড় ছেলে না!’

১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×