চে গুয়েভারা (১৯২৮-১৯৬৭) সম্পর্কে ফিদেল ক্যাস্ট্রো একবার মন্তব্য করেছিলেন : ‘চে একজন ওইরকম ব্যক্তি যাকে দর্শনমাত্রই মানুষ পছন্দ করবেÑ তার সহজতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিরপেক্ষতা, কমরেডসুলভ গুণাবলী এবং মৌলিকতার জন্য।’ চে গুয়েভারা ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ট্রোর দক্ষিণহস্ত। যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন চে ফিদেলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে গেছেন। ফিদেলকে চে বিপ্লবী দলনেতা হিসেবে গণ্য করতেন।
ফিদেলের সঙ্গে চে গুয়েভারার আকস্মিকভাবে পরিচয় হয়। ২৬ জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই তাদের পরিচয় নিবিড় ও গভীর হয়।
চে ভাষায়, ‘গোয়েতামালার রাউল ক্যাস্ট্রোনামক এক ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়।"
পরে জানতে পারি, ওই আন্দোলনের নেতাই তার সহোদর ভাই ফিদেল ক্যাস্ট্রো । এভাবেই চে ফিদেলের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করেন এবং দুজনের মধ্যে অল্প সময়েই নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
কিউবাকে স্বৈরাচারী শাসক থেকে মুক্ত করার শপথ নেন উভয়ে। এ উদ্দেশেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২ জানুয়ারি ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গেরিলা যু্দ্ধের মাধ্যমে কিউবার তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক ফালজেনসিও বাতিস্তাকে হারিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করেন।
কারণ ১৯৫৬ সালের শুরুতেই ফিদেল কিউবার জনগণের উদ্দেশে এক ভাষণে বলেছিলেন ‘আমরা মুক্ত মানুষে পরিণত হবো, নচেৎ শহীদ হবো’ । এ পটভূমি সামনে রেখেই আরনেস্তো চে গুয়েভারা রচনা করেন ‘ফিদেলের জন্য কবিতা’ শীর্ষক বিখ্যাত কবিতাটি। এর পরতে পরতে কখনো উঁকি দেয় বাস্তবতা, কখনো ভালোবাসার সবুজ স্বপ্নময় দেশের মুক্তি, আবার কখনো কবিতার চিত্রকল্পে, উপমা ও উৎপ্রেক্ষায় স্বদেশের বিচিত্র চিত্র। কবিতাটি ইংরেজি থেকে নিম্নে অনুবাদ করে দেয়া গেল।
ফিদেলের জন্য কবিতা
চলো যাই
অগ্নিময় প্রত্যুষে
বালুকাময় আঁকা বাঁকা নির্জন পথ পেরিয়ে
তোমার ভালোবাসার সবুজ স্বপ্নময়
দেশের মুক্তির জন্য।
চলো যাই
জমাট বাঁধা অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে
আমাদের ললাটে অসংখ্য বিদ্রোহের তারা জ্বলছে
শপথের বহ্নিতে না হয় আমরা মরবো
অথবা জিতবো
যখন প্রথম বুলেটের শব্দে দেশ জেগে ওঠে
কারুময় ঘুম থেকে আচমকা কোন এক বালিকার মতোন
তখনো অবিচলিত থেকো, হে যোদ্ধা
আমরা তোমার পাশেই আছি...
থাকবো।...
যখন তুমি জোর প্রচার করো:
জমি-সংস্কার, ন্যায়, রুটি-রুজি আর
স্বাধীনতার
তখন আমরাও তোমার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করি:
আমরাও আছি;
আমাদের মুক্তির লক্ষ্যবানে
যখন বিপক্ষের বন্যপশুরা হতাহত হয়:
তখনো আমরা তোমার সাথে থাকি,
আমাদের হৃদয় গর্বে স্ফীত হয়:
আমরা সেখানে আছি।
বিপক্ষের সজ্জিত সৈন্যের নেকড়ে আক্রমণে
আমাদের প্রস্তাবিত সঙ্কল্পের ভিত কখনো
টলবে না। আমরা চাই:
একটি রাইফেল, কিছু বুলেট
আর
লাঠিসোঁটা।
তবু যদি
বিপক্ষের রাইফেলগুলো ভীষণ গর্জে ওঠে
এবং ইতিহাসের বিক্ষুব্ধ তরঙ্গে যদি
আমরা লীন হয়ে যাই
তখন কেবল আমাদের এইটুকুই চাওয়া:
কিউবার অশ্রু য্যানো
যুদ্ধেমৃত সৈনিকের এক একটি কাফন হয়।
চে গুয়েভারা আর ফিদেল কাস্ট্রো..
দুইজনকে বিপ্লবী লাল সেলাম
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৩:৩৭