রোগমুক্তির আশায় রংপুরে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে পৌনে দু’মাসের বন্দিজীবন কাটালেন রংপুরের এক গৃহবধূ।
চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ১ মাস ২২ দিন আটকে রাখার পাশাপাশি অনৈতিক কাজেও বাধ্য করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূর মা।
অবশেষে বুধবার রংপুর জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন নির্যাতিত গৃহবধূ।
ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের মাহিগঞ্জে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের শাহিন আলম ও তার স্ত্রী গত ২৯ মে বাসে ঢাকা থেকে রংপুর শহরের মডার্ন মোড়ে এসে নামেন। এ সময় স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে শাহিন তাকে শহরের মাহিগঞ্জে বেসরকারি ক্লিনিক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাহীনকে জানান, তার স্ত্রীর গর্ভের দেড় মাস বয়সী ভ্রুণ নষ্ট হয়ে গেছে। জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। ওইদিনই তার অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচার করেন ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসক জাহারাতুন ফেরদৌস কনা।
ওই গৃহবধূ সুস্থ হওয়ার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারসহ তার চিকিৎসার আনুষঙ্গিক খরচ ধরে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।
কিন্তু এতো টাকা তার স্বামীর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় জানালে হাসপাতাল পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ গৃহবধূকে আটকে রেখে তার স্বামী শাহীনকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেন। টাকা ছাড়া এলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেন।
টাকা জোগাড় করতে না পারায় এবং হত্যার হুমকিতে ভীত হয়ে শাহীন আর হাসপাতালে যাননি।
পরে শাহীন ঘটনাটি তার শাশুড়ি পারুল আক্তারকে জানালে তিনি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা জোগাড় করে হাসপাতালে যান। জাহিদ তার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকা না দেওয়া পর্যন্ত গৃহবধূকে ছাড়া হবে না বলে পারুলকে জানিয়ে দেন এবং ভয়ভীতি দেখান।
পারুল আক্তার অভিযোগ করেন, হাসপাতাল পরিচালকের হুমকি-ধমকির পরও নিকটজন কেউ তাদের পাশে না দাঁড়ানোয় তার মেয়েকে আটকে রেখে তাকে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়।
বুধবার এলাকার লোকজন বিষয়টি রংপুরের জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হককে জানান।
তিনি দুপুরে পুলিশসহ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে গৃহবধূকে উদ্ধার করেন।
জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক বলেন, ‘চিকিৎসার টাকার জন্য একটি মেয়েকে আটকে রাখা অমানবিক ঘটনা। আমি তার কাছে পুরো ঘটনা শুনেছি এবং এ বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি জানান, গৃহবধূকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার জন্য বেসরকারি সাহায্য সংস্থা আরডিআরএসের কাছে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে এএসপি (সার্কেল-১) আবু বাশার মোঃ জাকির হোসেন জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আত্মীয়স্বজনের কাছে না দিয়ে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
দোষীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
View this link