তুমি আমায় একটা ঘুমের ওষুধের নাম বলতে পারবে?
কেন বলত?
না, এমনি, দুসপ্তাহ ধরে ঘুম হয় না?
কিন্তু কেন? শরীর খারাপ?
না না, তেমন কিছু নয়।
তাহলে?
ও এমনিই...।
কিন্তু দেখ ঘুমের ওষুধ খাওয়া তো ঠিক নয়। তোমার কোন সমস্যা হলে ডাক্তার দেখাও।
আরে না না কিছুই হয়নি। তুমি ভেবনা। চল অনেক রাত হল টাটা।।
কথোপকথন টা সেদিন এখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম প্রত্যাশিত ভাবেই একটা ঝড় উঠতে চলেছে। কিন্তু আমি ওপার ছিলাম, আমার কাছে কোন উপায় ছিলনা।
আমি তখন অনেক রাত অবধি জেগে থাকতাম আজকের মতন। আমার মশারির ওপর জোনাকি গুলো এসে বসত। আমি ওদের দেখতাম। মাঝে মাঝে ওদের সাথে খেলা করতাম। একটা টোকা মারতাম আর ওরা ওপরে উঠে আবার পড়ে যেত মশারির ওপর। বেশ মজা লাগত। আসলে কীভাবে একটা নির্ঘুম রাত কাটানো যায় তার ফন্দি করতাম। রাত কাটত। ভোরের আলো ফুটে উঠত। আমার তখন একটু একটু ঘুম পেত, আস্তেআস্তে ঘুমিয়ে পড়তাম। এইভাবেই দিন কাটছিল বেশ।
ভেবেছিলাম অভ্যাস হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যে। কিন্তু না অভ্যাস বদলালো। আজও রাত জাগি ঠিক আগের মতই কিন্তু এখন আর জোনাকি গুলোর সাথে খেলা করি না। এখন কথা বলি কখনও নিজের সাথে কখনও বা অনেক রাত অবধি মেসেজ আসে, তার সাথে।
অনেকদিন তোমার লেখা দেখি না?
আমি তো আর লিখিনা।
কেন?
বলতে পারো ভালো লাগে না বা সবচেয়ে ভালো হয় বলা আর পারিনা।
ওহ আচ্ছা বুঝলাম।
হুম।
আচ্ছা সিনেমা দেখতেও যাও না মনে হয়?
না বহুদিন হল যাই না।
কেন?
মাঝে মাঝে টাকা থাকে না আবার ইচ্ছাও করে না কখনও।
এইভাবেই কথা হত। কিন্তু কেন জানি না জোনাকি গুলো এরপরও মশারির ওপর এসে বসত। বোধহয় ওদের অভ্যাস হয়ে গিয়েচ্ছিল। আমি জানি আমিও আবার ফিরে আসব ওদের খেলা করার জন্য। তখন আবারও আমার অভ্যেস হয়ে যাবে।
ইন্টারনেটের নতুন কানেকশন নিয়েছে। এইসেই করতে করতেই অনেক রাত হয়ে যায়। সন্ধ্যে বেলা টিউসুনি থাকে আরও একটা নতুন জয়েন করলাম। কি জানি পারব কিনা হয়ত পেরে যাব বা পারব না অভ্যেস হয়ে যাবে ঠিক।
শোনো তুমি না আর আমায় মেসেজ করো না আমার ফোন টা বাড়ির সবাই ঘাটে।
ওহ আচ্ছা তাই। ঠিক আছে আমি করব না।
আমি যদি করি তারপরই রিপ্লাই কর।
হুম ঠিক আছে।
আমি এখন রোজ রাতে পড়িয়ে বাড়ি ফিরে হাঁটতে বেরোই। হয়ত কোনদিন একটা সিগারেট খাই বা কোনদিন খাই না। রবিবার করে এক বন্ধু ডাকে আয় আজ সন্ধ্যে বেলায় একটু বোতল নিয়ে বসি। আমি প্রতি সপ্তাহেই এটা ওটা বলে এড়িয়ে যাই। মনে পড়ে দুটো নতুন চাকরির ফর্ম বেরিয়েছে ৬০০ টাকা লাগবে, একটা বইও যদি কিনি আরও ২০০ টাকা। হিসেব মেলাই নেটের ফিস, ফর্মের দাম, ধারবাকি আর যদি এরমধ্যে দেখা হয় তাহলে আরও কিছু টাকা লাগবে। না শেষমেশ হিসেব মেলে না। আমি বইটা খুলি একটু পড়তে বসি, পরের মাসে একটা পরীক্ষা আছে। হাতে সময় খুব কম। যদি সময়ের সদব্যাবহার করতে পাড়ি তাহলে হয়ত আবারও-
আচ্ছা আমায় না পরদিন কোথাও খেতে নিয়ে যাবে?
হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। কোথায় যাবে বল?
সে জানি না। কোথাও একটা নিয়ে যাবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি ভেব না আমি একটা কিছু ব্যাবস্থা করছি।
সামনে ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা। কি হবে জানি না। হয়ত প্রতিবারের মত এবারেও কোনরকমে পাশ করে যাব। কিন্তু কি লাভ এইভাবে পাশ করে। না আর পড়তে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছেটাকে হারিয়ে ফেলেছি বলা যায় দিনের পরদিন হতাশাকে আঁকরে ধরে তাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছি। হয়ত আবার কোন রাতে ঠিক আগের মতই জোনাকি গুলো আমার ইচ্ছে তাকে মশারির বেড়াজাল ভেদ করে আমার ওপর ফেলে দেবে।
তোমার কবিতাটা পড়লাম।
আচ্ছা তাই। কেমন লাগল?
ভালো খুব ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ ধন্যবাদ।
সতিই জানো তো তুমি সবার থেকে আলাদা।
তাই কীভাবে?
পরদিন দেখা হলে বলব।
আচ্ছা তাই শোই।
সময় বড় স্থির হয়ে আছে আমার কাছে। হয়ত এটা হওয়ারই ছিল। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। আজ সকালে আবার একটা মেসেজ আসে। আমি পড়ার পর বুঝতে পারি যে ঝড়ের সম্ভাবনার কথা আমার মনে এসেছিল সেটা এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে আমি টেরও পাইনি। হয়ত অনেক ভোরে এসেছিল ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন।
আমাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেছে জানো?
মানে? কেন? কি হয়েছে?
না আমিও এটা জানি না যে তোমায় বলব।
আচ্ছা মন কে শান্ত রাখ। সব ঠিক হয়ে যাবে।
কেন বলত আমিই এত কষ্ট পাব? কেন?
আমি মেসেজের রিপ্লাই দেওয়ার আগেই একটা ফোন আসে। "শোন পরশু মিঠুনের বিয়ের কার্ড দিয়ে গেছে। ৩০০ টাকা করে দিতে হবে।" আমি কর গুনতে থাকি। নেটের ফিস, দুটো ফর্মের দাম, একটা বই, ধারবাকি আর যদি ওর সাথে বেরোই তাহলে আরও কিছু টাকা। আর গুনতে পারি না। কর আর গোনার পারমিশন দেয় না। হিসেবটা সেই অধরাই থেকে যায়।
আমি মেসেজ করতে যাব সবে হঠাৎ মনে পড়ল কাকে মেসেজ করব সেদিক থেকে তো অনেকদিন ধরেই কোন বার্তা আসেনি।
মা ডাকে খেয়ে নে অনেক বেলা হয়ে গেল। আমি খেতে যাই। মোবাইলটা পড়ে থাকে বিছানায়। হয়ত ফিরে এসে দেখব একটা মেসেজ এসেছে। না এলেও ক্ষতি নেই, সবটাই অভ্যেস হয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭