somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুভুতি, ভালবাসা আর একপশলা বৃষ্টি

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাছের ছায়ায় বসে থাকায় অনেকক্ষণ ধরে যে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে তার টের পাওয়া যায় নি। কিন্তু হঠাৎ ডান হাতের জামার হাতাটা দেহে স্পর্শ হওয়ায় ভেজাটা অনুভব হল, তখনই জলের দিকে তাকিয়ে মনে হল হ্যাঁ বৃষ্টি হচ্ছে।
এক অসম্ভব নিস্তব্ধটা চারিদিকের বাতাসকে যেন স্তব্ধ করে রেখেছে। দুজনের মনে অনেক কথা থাকলেও কেউ কাউকে কিছু বলতে পারছে না। কারও মনে হারিয়ে ফেলার এক অসম্ভব ভয় আর কারোর মনে কাউকে ভালবাসার এক অসম্ভব রাগ যেন দুজনের মধ্যের কথাবার্তাকে আটকে দিয়েছে। অনেক কথা যেন মন থেকে বেরিয়ে মাঝপথ অবধি গিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এই উপলব্ধি দুজনেই করছে কিন্তু মুখ ফুটে কেউ কাউকে কিছুই বলতে পারছে না। অনতিদূরে বসা প্রেমিকযুগল নিজেদের মধ্যে গোপন কথোপকথনে এমন কিছুই বলছে যে এখানকার দমবন্ধ করা পরিবেশ ওখানে গিয়ে যেন ওদের হাসাহাসিতে দম ফিরে পাচ্ছে। হঠাৎই এই দমবন্ধ করা পরিবেশে বেশ জোর করেই একটু তাচ্ছিল্যের সুরে একজন বলে উঠল-
----“আগে জানতাম না এত কষ্ট লুকিয়ে থাকে মনে
গাছের সবুজ পাতা থেকে সূর্যের আলো সব এক হয়ে গেছে আজ
আমি খুঁজে পাই না এর কোন মানে”।
নুইয়ে পড়া বড় বটগাছটার যে ডালটা একদম জলে গিয়ে পরেছে, সেই ডালটার ওপর একটা নাম না জানা পাখি বসে আছে। বোধহয় বৃষ্টির থেকে বাঁচবার জন্যেই। অনেকক্ষণ ধরে পাখিটা এক দৃষ্টে দূরে কি যেন দেখছিল আচমকা নিস্তব্ধটা ভেঙে যাওয়ায় নীচের দিকে তাকিয়ে একবার কি যেন দেখল।
----“ কিসের চাও খুজতে মানে?
ছবি দেখা ভালবাসা, না
প্রেমহীন আলোআশা?”
জলের ওপরে আকাশ ঘনঘটা করে এসেছে আর মেঘ গুলি জোরালো হাওয়ায় উড়ে বেরাচ্ছে, কখনো ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি মারছে। আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। লুকোচুরি খেলা বোধহয় শেষ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেঘই সূর্যকে আড়াল করে রেখেছে।

----“ আমি বৃষ্টি দেখতে চাই
আর খুঁজে পেতে চাই
অন্ধকারে তোমার ছায়া
ভালোবাসায় মন কেমন করা
আর তোমার হাত ধরা।”
বৃষ্টির ফোটা গুলো জলের ওপরে থাকা পদ্ম পাতার ওপরে পড়েছে আর দু ফোটা তার ওপর লেগে আছে। এ যেন বৃষ্টির সাথে পদ্ম পাতার খুব মন কষাকষি। কেউ কাউকে নিয়ে থাকতে চায় না। তাই নুইয়ে পড়া বট গাছটার নতুন সবুজ পাতা যেভাবে বৃষ্টি কে নিজের দেহে মাখিয়ে আপন করে নিচ্ছে পদ্মপাতা তা করছে না। মনের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ বোধহয় কোনোদিনও মুক্তি পাবে না।
----“ যে স্পর্শে ছোঁয়া লাগে না
যে অনুভূতিতে অনুভব নেই
তাকে কেন বারবার ফিরে পেতে চাও?
কেন বারবার ভালবাসার দোহাই দাও।”

----“ জানো পরশু সকালে
আমার জানালার পাশে
নিম গাছের ডালে
একটা প্রজাপতি উড়ে এসে
শান্ত শীতল বাতাস বয়ে আনে।
তার স্পর্শে আমার ছোঁয়া লাগে।”
পড়ন্ত বিকেলের ছোঁয়া যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরেই চলেছে তার মধ্যেই পাখিগুলোর ঘরে ফেরার সময় বোধহয় হয়ে এসেছে, তাই তারা সারিবদ্ধ ভাবে উড়ে চলেছে কোন অজানার উদ্দেশ্যে তা কে জানে।
---তুমি বড় অবুঝ
বুঝেও কিছুই বোঝ না
নিজের ভাবনাগুলিতে আর জড়িয়ে থেকো না।
দূরে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। ওই বুঝি বিকেলের নামাজ পড়া শুরু হল। ঈশ্বরের সাথে মানুষের একাত্ম হওয়ার যে প্রবল ইচ্ছা, সেই লোভ ছেড়ে মানুষ কোনদিনও মুক্তি লাভ করতে পারে নি। তাই আজও কোন এক নরনারীর মধ্যের ভালবাসা সর্বদাই ঈশ্বর ন্যায় পবিত্রতা চায়।
---জানই তো বুঝি না
ভালবাসার বাঁধন মানি না।
নিস্চুপ রাতে আজও শুয়ে ভাবি
কেন, কেন বল?
শুধু আমিই পাব না।

----জানি না, জানি না
আমি জানি না।
জানি তোমার ভালবাসা খুব জটিল
তাতে নেই আমার কোন মিল।

---মিল! কিসের মিল?
মনের মিল, না শরীরের মিল?
এ ভালবাসা সব কিছুর উর্দ্ধে
শুধুমাত্র এক অনুভুতি
অনুভব করার মুহূর্তে
রোজ অশ্রু বৃষ্টি হয়।
বৃষ্টির পরিমাণটা আকস্মিক বেড়ে গেল। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এবার মুশল ধারার আকার নিয়েছে। পাশে বসে থাকা প্রেমিকযুগল এই বৃষ্টির সুবাদে আরও খানিকটা শরীরের কাছাকাছি চলে এল। এক পশলা বৃষ্টিই বোধহয় আজ ওদের মধ্যেকার দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে দিল।এক অনাবিল প্রেমে আজ ওদের ভাসিয়ে দিল। ঠিক যেমন ভাসিয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে ব্রিজের ওপরে, একাকি নির্জনতায়।
---- আমি চাই না বৃষ্টিতে ভিজতে
সরে এস ছাতার তলায়
আজকের দিনটা অন্তত যাক কেটে
এই অবহেলায়।

খানিক নিস্তব্ধটা। হঠাৎ জোড়ে আসা বৃষ্টিটা দুজনের মধ্যে চাক্ষিক দূরত্ব খানিকটা কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মনের দূরত্ব যেন আরও অনেকটা বেড়ে গেছে। এর হিসেব হয়ত কেউই জানে না। একজনের ইচ্ছা থাকলেও অন্যজনের বোধহয় নেই তাই সময় কমাবার জন্য আবার তারা পথে নেমে পরেছে যাতে এই সময়টাকে কাটিয়ে উঠে পথটাকে ভোলা যায়।
গাড়ি গুলোর কাচে বৃষ্টির ফোটা পড়ে এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সৃষ্টি করছে। পাশে বসে থাকা সেই প্রেমিকযুগল হেঁটে আসতে আসতে বৃষ্টির জল নিয়ে খেলা করছে। ছাতার তলায় বৃষ্টির জল গায়ে পড়ে ভিজিয়ে না দিলেও মনের ভাঙা দেওয়ালের কোন থেকে জল চুইয়ে পড়ে মনের মণিকোঠাটা ভিজিয়ে দিচ্ছে আর মনের গোপন কক্ষে লুকিয়ে থাকা পাখিটা আজ যেন উড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইছে।

----তুমি যাও আর দেরি কর না।
এরপর আকাশের চাঁদের আলো ঠিকরে এসে
পড়বে তোমার গায়ে।
আর পরস্পর জড়িয়ে থাকা মুহূর্ত গুলো
শুধু তোমার বিচার চায়।

---বিচার! আমার বিচার?
আমি তো কবেই আলোর থেকে অন্ধকারে হেঁটেছি
দূরে সারি দিয়ে থাকা
তাল গাছের মাঝ দিয়ে
যখন অর্ধগোলাকার চাঁদ উঠত
আর দুরের কোন গাঁয়ে
কেউ শাঁখ বাজাত সন্ধ্যাবেলা
সেই মুহূর্তে আমি হেঁটে এসেছি
টিমটিম করে জ্বলা প্রদিপের আলোতে।
যেখানে আমার শরীর মন জুড়ে
দুটি সত্ত্বাই বেচে থাকে।

----জানি তোমার দুই সত্ত্বা
ভালবাসা আর অন্ধকার
হিসেব করে বলতে পারো
তুমি কখন কার?

---- দু চোখ বোজো
সামনে শুধুই অন্ধকার
এই অন্ধকারেই হাটি আমি
ভালবাসা সঙ্গী আমার।

একটা দীর্ঘশ্বাস। অতঃপর নিস্তব্ধটা। সন্ধ্যের মেঘ আজও খুব তাড়াতাড়ি আকাশকে ছেয়ে ফেলেছে।বৃষ্টি অনবরত পড়ছে। এবার আবার শরীরটাও ভিজে চলেছে। জোড়ে হুইসেল দিয়ে ডাউন ট্রেনটা চলে গেল। মাথার ওপর এখন আর কাল কাপড়টা দেখা যায় না এখন শুধুই দিগন্ত বিস্তৃত কালো আকাশ। মেঘের ফাঁকে চাঁদটা দেখে আর মুচকি হাসে। ঠাণ্ডা বাতাসে শরীরের ভিতরটা শিরশির করে ওঠে। পাশে দাড়িয়ে থাকা সেই প্রেমিকযুগলের একজন আরেকজন কে বলে ওঠে
--------ভালবাসা মানে অন্ধ আকর্ষণ
করতে চাইনা আমি তর্ক ভীষণ
আমার দিক থেকে আমি আজও তোমাকেই ভালবেসে যাই।----

একটা দমকা হাওয়া হঠাৎ ওদের ছাতাটাকে একটু বেসামাল করে দিল আর এক পশলা জোরালো জলের ছিটে আমার মুখে এসে লাগল। এভাবেই বোধহয় চোখের জল চিরকাল মিশে যায় আর পড়ে থাকা ভালবাসারা প্রান্তিক স্টেশনে গিয়ে গোঙায় আর...।।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি তাদের কাছেই যাবে তারা তোমার মূল্য বুঝবে....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪


মৃত্যুর পূর্বে একজন পিতা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বললেন, 'এই নাও, এই ঘড়িটা আমি তোমাকে দিলাম। আমাকে দিয়েছিলো তোমার দাদা। ঘড়িটা দুইশত বছর আগের। তবে, ঘড়িটা নেওয়ার আগে তোমাকে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×