ও নদীরে,
একটা কথা শুধাই শুধু তোমারে
তোমার নেই কি চলার শেষ? ও নদীরে!
মাঝির মল্লারের কন্ঠে, বাতাসে সুরের মুর্ছনার ঝঙ্কারের এই গান যেনো ডাকাতীয়া নদীর জন্য আজ আর প্রযোজ্য নয়। বিরহে কাতর পালতোলা নৌকার মাঝিরা আজ বিষাদের সুরে চোখের জল ফেলে। কিন্তু কেন? প্রশ্নটা আসা খুবই স্বাভাবিক। কি হয়েছে খরস্রোতা এই নদীর দু-কুলের? এমন হাজারো প্রশ্ন যেনো ডুকরে মরছে ডাকাতীয়ার বুক জুড়ে।
ভারতের ত্রীপুরা রাজ্যে হতে বাংলাদেশে প্রবাহিত এই নদীটির মুখ মেঘনায় গিয়ে পড়ে মিশে গেছে। যার দৈঘ্য ১৪১.২ কিলোমিটার বা ৮৭.৭ মাইল। প্রাচীনকাল হতে এটি খরোস্রোতা নদী হিসেবে লিপিবদ্ধ আছে।
এখন প্রশ্ন হলো এই নদীটির চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ অংশের এ বেহাল দশার কারন কি? টলটল করে বয়ে চলা নদীটি হাজীগঞ্জ অংশে এসে তার স্বাভাবিক খেই কেন হারিয়ে ফেলছে। কেউ কি একবারও প্রশ্ন করেছেন? না করেন নি। কারন রাজনৈতিক সার্থানেশি মহলের ছত্র-ছায়ায় এই নদী দখলের মহারন চলছে অবিরাম। এক সময়ের ডিগ্রী কলেজ খেয়া ঘাট খেত নদীর দুইটা পাড়েই প্রকাশ্যে চলছে ভরাট বালির রমরমা ব্যাবসা। আর এতেই নদীর দুই পাড় দখলে ভরাট হয়ে ছোট হতে হতে এখন নদীটি তাঁর স্বাভাবিক গতিই হারিয়েছে।
একই সাথে সরেজমিনে দেখা যায় যে নদীর উপর নির্মিত হাজীগঞ্জ রামগঞ্জ সংযোগ ব্রীজের পিলারগুলোরও বেপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে আশঙ্কা জনক হারে। কারন বালুবাহী ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজের ধাক্কা যেমন আছে, তেমনি ড্রেজার মেশিনে বালু স্থানান্তরের সময় ড্রেজারবাহী শিপগুলোর বেপোরোয়া চলাচলে আঘাতে আঘাতে জর্জরীত এই ব্রীজটি। এর জন্য তাহলে দায়ী কে? অবশ্যই এর দায় প্রশাসন তথা বি আই ডব্লিও টিএ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং এই আসনের সংসদ সদস্যও এড়াতে পারেনা। আওয়ামীলীগের উপজেলা পর্যায়ের এবং পৌরসভা পর্যায়ের বড় বড় নেতারাও এর দায় এড়াতে পারেন না। এমনকি তারা নিজেরাই এই দখলদারিত্বের ব্যাবসার সাথে সরাসরি জড়িত।
এখন যদি আমরা প্রশ্ন করিঃ মাননীয় সংসদ সদস্য কি নিজে দেখেন না এখানে কিভাবে দখলদারিত্ব চলছে নাকি তিনি নিজ সংসদ এলাকায় যানই না? অথবা ভাগ বাঁটোয়ারার অংশ পৌছায় তাঁর কাছেও। এদের এতো সাহস কে দিয়েছে আজ প্রশ্নটা করতেই চাই আমরা সাধারন মানুষরা। তিনি আবার সংসদীয় কমিটির নদী দূষন দখল বিষয়ক চেয়ারম্যনও। তাহলে বলাই যায় যে তার আসনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা এই নদীটির এই বেহাল দশার দায় তিনি এড়াতে পারেন না! ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এই সৈনিক যিনি একজন বীরউত্তম তার সংসদীয় এলাকায় এমন দখলবাজী চলছে আর তিনি নির্চুপ হয়ে কিভাবে বসে আছেন। ক্ষমতার লোভ আর দাম্ভিকতা কি ওনাকে ওনার আদর্শিক জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছে?
পরিশেষ, হাজিগঞ্জের সাধারনের মানুষের পক্ষ হতে একটা কথাই বলতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরু টলারেন্স নীতি নিয়েছেন হাজীগঞ্জ এর সাধারন মানুষের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাতে চাই। দ্রুত আপনার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। নদী হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। কারন নদীমাতৃক এই দেশে নদী বাঁচলেই মানুষ বাঁচবে। আর হাজিগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতির নামে যারা টেন্ডারবাজী, দখলবাজী এবং সিণ্ডিকেট বাজি করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাপোযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হোক। যদিও সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রী জানিয়েছেন শীঘ্রই জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে দূর্নীতি বিরুধী অভিজান শুরু হতে যাচ্ছে। আমরাও আশায় আছি, আশায় বাঁচি!
বন্ধ হোক সকল দূর্নীতি, পরাজয় ঘটুক সক অশুভ শক্তি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং সর্বোপরি নিরাপদে থাকুন
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫৫