আজকের দিনটা কেমন জানি কাটছে অরন্যেকের। শরীরের ভীতর লুকিয়ে থাকা অসুখগুলো নির্বিচারে মাথা চাড়া দিয়ে ঊঠছে। এদিকে জীবনের চাতুরতায় হারিয়ে যাওয়া সময়ে খুঁজতে গিয়ে মগজের নিউরন সেলগুলো বেপোরোয়া কর্মকান্ডে ব্যাস্ত সময় পার করছে। সব কিছু যেন এলোমেলো। পত্রিকার পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়ানো আততায়ী লিখাগুলো খবরের অন্তরালের খবরগুলোকে মলিন করে দিচ্ছে। এই শহর বন্দরের পথে পথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্য ব্যাখ্যা কেউ দিচ্ছে না। অথচ অরন্যক জানে আসল ঘটনাগুলো কি। কেন ঘটছে এসব। সবার মাঝে কেন এতো হতাশা কাজ করছে তার কারনটাও আজ স্পষ্ট। কিন্তু কিছুই করার নেই। ক্ষমতার পাল্লাটা খুব বেশি ভারি না বলে।।
অরন্যকের কবিতার একটা খাতাছিল সেটা হারিয়ে খুঁজে পেয়ে অরন্যক পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে থাকা শব্দগুলো দেখছে আর ভাবছে, কি ছিলো আর আজ কোথায় এসে কোন ঠাসা দেয়ালে শ্যাওলাদের সাথে কথোপকথনে ব্যাস্ত সে। ঘরের কোনের শালিক পাখিটাও কেমন যেন নির্বাক হয়ে বসে আছে। সেই ছোট্ট বেলার হলুদ পাখিটাও মায়ের মতই অনন্ত পথের যাত্রী হয়ে পাড়ি জমিয়েছে অজানা গন্তব্যে। কোথাও কেউ নেই সব যেন নিরবতার অশালীনতায় বিকিয়ে দিয়েছে নিজেদের!
হঠাৎ বেজে উঠা ফোন কলের দিকে তাকায় অরন্যক তার কাজের ফোন, কোন একটা খবরে মনোযোগ দিতে হবে এখন। কিন্তু ধরতে ইচ্ছে করছে না। কি লাভ হবে যা জানবো তা কি বলা যাবে। অনেক অনেক বাধা আছে নোংরা কালো ধোয়ার মত। ইট পাথরের এই শহরে কিংবা গ্রামের সেই সহজ সরল মানুষটাকে ঠকিয়ে কি লাভ হবে। তবুও শুনতে হবে। ফোনটা ধরে অরন্যক, হ্যালো, বলতেই ওপাড় থেকে ভাই গরম খবর। অরন্যক বলে বেশি গরম নাতো কান বা হাত এমনকি মোবাইল ফোনটাও পুড়ে যাবে নাতো। ভাই জানেন একজন পেইন্টার এখন কোটি টাকার মালিক। রাজনীতি তাকে এতো টাকা দিয়েছে। ও আচ্ছা। তথ্য পাঠাচ্ছি। অরন্যকের উত্তর পাঠান। চেয়ারে হেলান দেওয়া অরন্যক ভাবে আর পাঠানো বার্তায় চোখ রাখে। ও আচ্ছা এই ব্যাপার। এটা এখন আর আন্দলিত করেনা। কারন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরুবে, সাপ খুড়তে গিয়ে এনাকোন্ডা, প্যান্থার সব। এবং রেজাল্ট হবে, মাত্র ১০ ঘন্টার জন্য। তারপর লাউয়ের নাম কদু আর কদুর নাম ল্লাউ। বাহ চমৎকার না ব্যাপারটা।
লিখাটা কেমন জেনো মেড়মেড়ে হয়ে যাচ্ছে। আসেন একটা জোকস বলিঃ জোকসটা পুরনো তবুও বলি
রাস্তায় দাঁড়ানো এক ব্যাক্তিকে আরেক ব্যাক্তির প্রশ্নঃ ভাই পথটা কি হাসপাতালের দিকে গেছে?
রাস্তায় দাঁড়ানো ব্যাক্তির উত্তরঃ ভাই রাস্তার কি ডায়রিয়া না আমশয় হইছে যে হাসপাতালে যাবে?
সরল প্রশ্নের উত্তর উনি গরল করেই দিলেন। হাঁ পথ সর্বত্রই যেতে পারে, সংসদ থেকে পতিতালয়। লাশ ঘর থেকে আঁতুড় ঘর। কিন্তু বিসিবি বনাম সাকিব কিংবা ক্যাসিনো বনাম রাজনীতির পথ কোথায় যাচ্ছে? আমরা এখনও কেউ জানিনা।
এই বার আসি ডিজিটালাইজেশন এর যুগে। একজন অরন্যককে বললো ভাই আপনিতো অনলাইন আউটসোর্সিং এর ব্যাবসা করেন। তা ভাই আমি যদি ২০ লাখ টাকা দিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ওয়েবসাইট বানাই তবে এবং আমার ইনকাম আসলে ব্যাংক আমাকে লোন দিবে, সরকার তো বলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে যা যা করার সব করবে। অরন্যক অনেক্ষন হাসলো, বেশ উচ্চস্বরে হাসলো। আর বললাম ভাই ২০ লাখ না আপনি ২০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করেন মাসে ২০ লাখ টাকা বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনেন তবুও ব্যাংক আপনাকে বলবে ভাই আপনার প্রজেক্টতো ধরা যায় না, ছোঁয়া যায়না। কেমনে কি? অথচ আপনি হয়তো টাকাটা তাঁর ব্যাংক দিয়েই আনছেন। এবং সেই ব্যাংক জানেও আপনার ইনকাম কোথা থেকে আসছে। আমাদের ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে, আপনি কষ্ট করে দিনরাত মার্কেট প্লেইসে বসে থাকবেন, টাকা কামাবেন আর সেটা বাংলাদেশে নিজেই কষ্ট করে ট্রান্সফার দিয়ে আনবেন আর খরচ করবেন দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করবেন আর বিনিময়ে টোটাল ইন্টারনেট ফেসিলিটির ৫ ভাগের কম পাবেন সবাই মিলে। এবং বসে বসে দূর্নীতির চিত্র দেখবেন। আমরা আসলে ডিজিটাইলেশনে নেই, আছি ভাজিটাইলেশনে। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আপনাকে ভাজবে। আর কিছু জানতে চান, না ভাই থাক; বুঝছি। দেখি ৬ মাসের মধ্যে আমার প্রজেক্টটা এখানেই দাঁড় করাই এবং সব গোছাই পাসপোর্ট তো করাই আছে। কোন একটা দেশ দেখে এপ্লাই করি। যাইগা। অরন্যক উত্তরে বললো আচ্ছা।
অরন্যক একা একা হাঁটছে, আর ভাবছে, সব কিছুর দূরত্ব যদি দূরন্তপনায় অতিক্রম করা যায়। তবে দূর্নীতির ব্যাধিটাকে একেবারে নির্মূল করা কেন যাবেনা দূরন্ত অভিযানে। অরন্যকের আজ খুব ছেলে বেলার কথা মনে পড়ছে। সেই দূরন্ত শৈশব, খেলার সাথী, পাখির কলতান আর সেই গানঃ
এই যে হলুদ পাখি,
বসে জামরুল গাছের ডালে
কত ডাকা-ডাকি
আমার শৈশবের সকালে।
একদিন গেলো উড়ে
জানিনা কোন সুদূরে!
ফিরবে না, সেকি ফিরবেনা
ফিরবেনা আর কোনদিন?
সবাই ভালো থাকুন, সন্দর থাকুন। এই কামনায় বিদায় বলার কি দায় না থাকলেও বিদায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪