বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবীর ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
কলকাতার জোড়সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্রী, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় বোন স্বর্ণকুমারী দেবী। তিনি তাঁর অনুজ ভ্রাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে পাঁচ বছরের বড়ো ছিলেন। সংগীত, নাটক ও সাহিত্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পুরুষ সদস্যদের সৃষ্টিশীলতা স্বর্ণকুমারী দেবীকেও স্পর্শ করেছিল। স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য মহিলা সাহিত্যিক, কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক। স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম বাংলা গীতিনাট্য ‘বসন্ত উৎসব’। ১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস দীপনির্বাণ প্রকাশিত হয়। ইতিপূর্বে ১৮৫২ সালে হানা ক্যাথরিন মুলেনস তাঁর ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত প্রকাশ করে বাংলা ভাষার প্রথম ঔপন্যাসিকের মর্যাদা লাভ করলেও স্বর্ণকুমারী দেবীই ছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক। ১৯৩২ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন স্বর্ণকামারী দেবী। আজ তার ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবীর ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
১৮৫৫ সালের ২৮ অগস্ট কোলকাতার জোড়সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন স্বর্ণকুমারী দেবী। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মায়ের নাম সারদা দেবী। তৎকালীন ঠাকুর পরিবারের রীতি অনুসারে তিনি শৈশবে ঘরেই লেখাপড়া শেখেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, তাঁদের শিক্ষয়িত্রী শ্লেটে কিছু লিখে দিতেন, সেই লেখাটিই তাঁরা টুকে লিখতেন। তার পিতা এ কথা জানতে পেরেই এই শিক্ষাদান পদ্ধতিটি তুলে দেন। এর পরিবর্তে তিনি অযোধ্যানাথ পাকড়াশি নামে এক দক্ষ শিক্ষককে নিয়োগ করে মেয়েদের লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থা করেন। পরে স্বর্ণকুমারী নিজ চেষ্টায় স্বশিক্ষিত হয়ে উঠেন। বিবাহের পর স্বর্ণময়ীকে লেখাপড়ায় বিশেষভাবে তাঁর স্বামী সাহায্য করায়, তিনি নানা ধরনের বিষয় পড়ার সুযোগ লাভ করেন। উল্লেখ্য ১৮৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে স্বর্ণকুমারী দেবীর বিয়ে হয়। জানকীনাথ ছিলেন নদিয়া জেলার এক জমিদার পরিবারের শিক্ষিত সন্তান এবং একজন দিব্যজ্ঞানবাদী (থিওজফিস্ট) এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা আদি যুগের সক্রিয় সদস্য। কিন্তু ঠাকুর পরিবার ছিল পিরালী থাকভুক্ত ব্রাহ্মণ। পিরালী ব্রাহ্মণ বংশের কন্যাকে বিবাহ করার জন্য জানকীনাথ পরিবারচ্যূত হয়েছিলেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা জানকীনাথ ব্যবসা করে সাফল্য অর্জন করেন এবং নিজস্ব এক জমিদারি গড়ে তুলে "রাজা" উপাধি অর্জন করেন। ১৮৬৮ সালের ৫ ডিসেম্বর তাঁর প্রথম কন্যা হিরন্ময়ী দেবীর জন্মগ্রহণের পর, স্বর্ণকুমারীর শ্বশুর তাঁকে এবং তাঁর কন্যাকে আশীর্বাদ করেন এবং এর দ্বারা জানকীনাথের সাথে তাঁর পিতার সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।
১৮৭৬ সালে প্রকাশিত হয় স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস দীপনির্বাণ। দীপনির্বাণ ছিল জাতীয়তাবাদী ভাবে অনুপ্রাণিত এক উপন্যাস। এরপর স্বর্ণকুমারী দেবী একাধিক উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-পরিভাষা রচনার বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ
উপন্যাসঃ ১। দীপনির্বাণ (১৮৭৬), ২। মিবার-রাজ (১৮৭৭), ৩। ছিন্নমুকুল (১৮৭৯), ৪। মালতী (১৮৭৯), ৫। হুগলীর ইমামবাড়ী (১৮৮৭), ৬। বিদ্রোহ (১৮৯০), ৭। স্নেহলতা (১৮৯২), ৮। কাহাকে (১৮৯৮), ৯। ফুলের মালা (১৮৯৫), ১০। সাব্বিরের দিন রাত (১৯১২), ১১। বিচিত্রা (১৯২০), ১২। স্বপ্নবাণী (১৯২১), ১৩। মিলনরাতি (১৯২৫),
নাটকঃ ১। বিবাহ-উৎসব (১৮৯২), ২। রাজকন্যা, ৩। দিব্যকমল।
কাব্যগ্রন্থঃ ১। গাথা, ২। বসন্ত-উৎসব (১৮৭৯) ৩। গীতিগুচ্ছ।
বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধঃ পৃথিবী (১৮৮২)
এ ছাড়াও তিনি অসংখ্য গানও রচনা করেছিলেন। সেই যুগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণকুমারী দেবী বা কামিনী রায়ের মতো মহিলা সাহিত্যিকদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাঁরা ছিলেন শিক্ষিত বাঙালি নারীসমাজের প্রথম যুগের প্রতিনিধি। সেই হিসাবে তাঁদের দায়িত্বগুলি সাহিত্যরচনার মাধ্যমে পালন করে গিয়েছিলেন তাঁরা। ১৮৭৯ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী প্রথম বাংলা গীতিনাট্য (অপেরা) বসন্ত উৎসব রচনা করেন। পরবর্তীকালে তাঁর অনুজ রবীন্দ্রনাথ এই ধারাটিকে গ্রহণ করে সার্থকতর গীতিনাট্য রচনায় সফল হয়েছিলেন।
১৮৭৭ সালে ঠাকুর পারিবার থেকে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘ভারতী’ প্রকাশিত হতে থাকে। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ৭ বছর এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালের ২০-২১ এপ্রিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। এ কারণে ভারতী পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর আগেই ভারতীর বৈশাখ ১২৯১ সংখ্যার প্রায় অর্ধেকটা ছাপা হয়ে গিয়েছিল। ফলে বাকি অংশসহ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল স্বর্ণকুমারী দেবীর সম্পাদনায়। এরপর থেকে তার সম্পাদনায় পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮৮৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে তিনি ভারতী সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। তবে ১৯০৯ সাল থেকে স্বর্ণকুমারী দেবীর সম্পাদনায় পুনরায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১৪ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর স্বামী জানকীনাথ ঘোষাল মৃত্যুবরণ করলে ১৯১৫ সালে তিনি ভারতী সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। সহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৯২৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণকুমারী দেবীকে "জগত্তারিণী স্বর্ণপদক" দিয়ে সম্মানিত করে।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই মৃত্যবরণ করেন বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবী। আজ তার ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবীর ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন