খ্যাতিমান কিংবদন্তি ইংরেজ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন। শুধু হলিউড নয়, গোটা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের হৃদয় কেড়ে নিয়েছিলেন অড্রে হেপবার্ন তাঁর রূপ এবং গুণ দিয়ে৷ দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে যেমন হলিউড মাত করে দিয়েছিলেন, পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম ফ্যাশন আইকন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ২০১০ সালের একটি জরিপে গত শতাব্দীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। হেপবার্ন ছিলেন একজন ফ্যাশন আইকন, যার ছবি ছিল 'ভোগ' এবং 'হারপার বাজার'-এর প্রচ্ছদের পরিচিত মুখ। যেমন ছিল তাঁর সরলতায় ভরা মায়াভরা মুখ, তেমনি ছিলো মমতায় ভরা একটি সুন্দর মন৷ তাইতো শরীরে ক্যান্সার নিয়েও তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন আফ্রিকার বিভিন্ন জনপদে৷ পরম মমতায় কোলে তুলে নিয়েছিলেন অনাথ ও আশ্রয়হীন শিশুদের৷ প্রয়াত এই মহান অভিনেত্রী ১৯২৯ সালের আজকের দিনে বেলজিয়ামে জন্ম গ্রহণ করেন। আজ তার ৮৫তম জন্মদিন। কিংবদন্তি ইংরেজ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
অড্রে হেপবার্ন (Audrey Hepburn) ১৯২৯ সালের ৪ঠা মে বেলজিয়ামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জোসেফ এন্থনি রাস্টন আর মার নাম ব্যারোনেস এলা । তাঁর পিতার চাকরীর সুবাদে তিনি তিন দেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পান। তিনি ইংরেজি, ডাচ , ফ্রেঞ্চ ইটালিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ১৯৪৪ সালের মাঝে তিনি দক্ষ ব্যালে ডান্সার হয়ে ওঠেন । একটি খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অড্রের মা বাবার বিচ্ছেদ হয়। তার পর ১৯৬০ সালে রেড ক্রস এর মাধ্যমে ডাব্লিনে তিনি তাঁর বাবার দেখা পান এমং মারা যাওয়ার আগ অব্দি আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুধের সময় অড্রের মা তাঁকে নিয়ে নেদারল্যান্ড এ চলে আসেন। সেই সময় তিনি এনিমিয়া এবং অপুষ্টির শিকার হন। বিশ্ব যুদ্ধ তাঁর মনে এত টাই প্রভাব ফেলে যে তিনি ইউনিসেফ এর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করেন। তিনি ইউনিসেফ এর শুভেচ্ছা দূত হয়ে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি ভিয়েতনাম ভ্রমন করেন। তিনি ইথিওপিয়ার এক এতিম খানায় যান এবং খাবার এর ব্যবস্থা করেন ।
(রোমান হলিডে ছবিতে গ্রেগরি পেকের সঙ্গে হেপবার্ন)
অর্ডে হেপবার্ন প্রথম অভিনেত্রী যিনি একই সিনেমায় (রোমান হলিডে, ১৯৫৩) অভিনয়ের জন্য অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব ও বাফটা পুরস্কার অর্জন করেন (১৯৫৪)। বিখ্যাত রোমান হলিডে ছবিতে তিনি প্রিন্সেস অ্যান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন৷ রোমান হলিডের সাফল্যের পর তিনি ১৯৫৪ সালে Sabrina ছবিটি করেন এবং একি সাথে Academy Award for best Actress এবং Bafta Award এর জন্য মনোনীত হন। 'সাবরিনা' কেবল তাকে খ্যাতির শীর্ষেই পেঁৗছে দেয়নি, তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তার প্রিয় ডিজাইনার এবং তখনকার সফলতম ডিজাইনার ব্র্যান্ড 'গিভেঞ্চি'র কর্ণধার হিউবার্ট ডি গিভেঞ্চির সঙ্গেও। এর পর থেকে গিভেঞ্চি হেপবার্নের ব্যক্তিগত স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। তার পোশাক, অনুষঙ্গ সবকিছুর দায়িত্বেই ছিলেন গিভেঞ্চি। হলিউডের রূপালি পর্দার অন্যতম স্টাইল আইকন অড্রে হেপবার্ন কেবল একজন সফল অভিনেত্রীই নন, বরং শত পুরুষের স্বপ্নের নারীও বটে। শুধু তার অভিনয় বা পোশাকই নয়, তার হেয়ার স্টাইলও ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। হোক তা কোনো ছবির দৃশ্যের হেপবার্ন অথবা সদ্য প্লেন থেকে নামা এক ক্লান্ত যাত্রী হেপবার্ন। তার চুলের স্টাইল সব সময়ই ফিটফাট, যাকে বলে 'পারফেক্ট'। কিউভিসি নামে সবচেয়ে বড় বিপণি চ্যানেলের এক জরিপে গত শতাব্দীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন । দ্বিতীয় সেরা হয়েছেন চেরিল কোল। তিনি মেরিলিন মনরোকে পেছনে ফেলেছেন। মেরিলিন মনরো হয়েছেন তৃতীয়। জরিপে এ তিনজনের পরে সেরা সুন্দরীরা হলেনঃ অ্যানজেলিনা জোলি, গ্রেস কেলি, স্কারলেট জোহানসন, হেলি বেরি, প্রিন্সেস ডায়ানা, কেলি ব্রুক ও জেনিফার এনিস্টোন।
১৯৯৩ সালের ২০ জানুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঘুমের মাঝে মারা যান কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। তার মৃত্যুর খবর শুনে অভিনেতা গ্রেগ্রি পেক ক্যামেরার সামনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। প্রসঙ্গতঃ মারা যাবার চার মাস আগে সোমালিয়া এবং বাংলাদেশ ভ্রমন করেন এই অভিনেত্রী। এম্পায়ার ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের 'টপ ১০০' তালিকায় থাকা এই ফ্যাশন আইকনের শারীরিক মৃত্যুহলেও বিশ্বজুড়ে তার নাম যুগ যুগ ধরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, ফ্যাশনবোদ্ধা তথা ফ্যাশন সচেতনদের স্মরণে থাকবে নিঃসন্দেহে। খ্যাতিমান এই অভিনেত্রীর ৮৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। কিংবদন্তি ইংরেজ অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।