somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল নারীদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস)। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। নানা আয়োজনে নারীর অধিকার আদায়ের প্রত্যয়ে নিয়ে প্রতি বছর ৮ মার্চ পালিত হয় দিবসটি। 'ইনস্পায়ারিং চেঞ্জ' বা 'পরিবর্তনকে উত্সাহিত করো'-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবছর বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। আন্তর্জাতক নারী দিবস বিশ্বের এক এক প্রান্তে উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশ সরকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অগ্রযাত্রার মূল কথা নারী-পুরুষের সমতা'। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে 'রাজনীতিতে ধর্েমর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, নারীর সমতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করি' প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করছে। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল নারীদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।


আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে নারী দিবসের পটভূমি রচিত হয় এরও অর্ধশতাধিক বছর আগে। সেই দিনটি ছিল ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। আন্দোলন করার অপরাধে তাদের অনেককে আটক করা হয়। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। এর পর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এর তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন'। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ সালের ৮ মার্চ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে বিশ্বের নারীরা প্রথমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করবে।


এরপর দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ নারীর অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস হিসেবে ঘোষনা করে। এর দু'বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।


এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে - আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ, ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিনভোগ করেন।


বিশ্বের অনেক দেশে নারী দিবসে সরকারি ছুটি থাকলেও বাংলাদেশে এই দিনটিতে নেই কোনো ছুটি। তবে নানামূখী কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বেশ আড়ম্বরেই পালিত হয় দিবসটি। এ দিবসটি এমন একসময়ে হচ্ছে যখন নারী নির্যাতন, বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ৮ মার্চ সারা বিশ্বে যখন নারী দিবস পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে হয়তো কোন নারী সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গতকালই মিছিল-মিটিং করার অপরাধে চার নারী এমপিসহ ৩৪ নারী কর্মীকে র্যাব-পুলিশ নির্যাতন করেছে। গত দুই মাসে তিন হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত বছর এবং এ বছরের প্রথম দুই মাসে প্রায় পাঁচ হাজার মামলার তদন্ত ক্ষমতাসীনদের হস্তক্ষেপে বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গড়ে ১৫ নারী পাচার হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন সূত্র এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নারী নির্যাতনের উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতি উত্তরনের জন্য অনেকদিন থেকেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এতো পদক্ষেপ সত্ত্বেও নেই বাস্তবায়ন। গত বছর মহিলা পরিষদের এক জরিপে দেখা যায় দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪হাজার ৭শ ৭৭টি। যৌন নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, নারী আত্মহত্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অত্যাধুনিক যুগেও নারীর প্রতি এ ধরনের বর্বরতা চলছে। ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ নামের এই জরিপে নারী নির্যাতনের একই চিত্রই উঠে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনের বলা হয় নারীরা বাইরের থেকে নিজ ঘরে অনেক বেশি নির্যাতিত হয়। আমরা এর থেকে উত্তরণ চাই।


ঘরে বাইরে, দেশে ও আন্তর্জাতিক ভাবে সকল নারী ভোগ করবে সমান অধিকার ও সমান মর্যাদা এই প্রত্যয় ব্যক্তকরে আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল নারীদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×