তুমি হয়ত ভাবছো, নিগ্রোরা এত কালো হওয়া সত্ত্বেও, একে-অপরকে কীভাবে আপন করে, কীভাবে সংসার বাঁধে?
তাহলে, আন্তরে প্রাণ রাখো; পৃথিবীর সমস্ত রং খেয়ে ফেলো।
স্বর্গ-নরকের চোখে তৃপ্তি রাখো; যেখানে শয়তান দৃঢ়তা দেখায়, সেখানে নয়; বরং তার চেয়ে নীচে। যেখানে শত বছরের কষ্ট পোড়া আত্মারা নিরহংকারে বিদ্রোহের মাশাল উচু করে, সুখ খোঁজে।
যুগে যুগে নারী-পুরুষে রূপ এসেছে। তারা একে অন্যকে দেখেছে। প্রয়োজন মিটিয়েছে। সাহায্য করেছে। বিনোদন নিয়েছে। অনুভব করার চেষ্টা অব্যাহত বানিয়েছে। সুতরাং দেখা যায় যে, নদীর পানি কিংবা লালের ক্ষরণ, কালো হয়ে গেলে, যে সমাধানে অপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হয়; সেরূপ কারণ ধারণ করার জন্যই জীবনের যাত্রা।
প্রাচীন গ্রীসের এক সক্রেটিক্সের স্ত্রী, গর্জনের পরে বারিধারা আনত কিনা দেখা যায় না। দূরের ইতিহাস থেকে সব কিছু স্পষ্ট ভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। চলমান বিষয়গুলো, নিজের ভূষাতে জড়াতে পারলেই অধিকাংশ চুপ হয়ে যায়। তৎকালীন বর্তমানে সেই সক্রেটিক্স নিজেকে মেলাতে পারে নি। তাই তাকে হেমলক পান করতে হয়েছে। তার স্ত্রীর জীবন রক্ষা হলেও ঠিকই তিনি সক্রেটিক্সের মতো বিকল্প ভাবনামুখী মানুষকে হারিয়েছিলেন।
যারা জ্ঞানের সুতা ধরে আছে, তারাই যে এ জগতের হর্তা-কর্তা, তা বলা যাবে না। সমস্ত পৃথিবী বিশ্বায়নের সুবিধা পেলেও সবাই বিশ্বায়নে সাক্ষর হয় নি। এখনও শিশুর জিজ্ঞাসায়, “আলোর মাশালটি কীভাবে ধরবো?”
আধুনিক সক্রেটিক্সরা যার-তার উপর রাগ করার অভ্যাস রাখে না। তারা অতীত গুরুদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া এবং নিজস্ব ঢং তৈরি করে নিয়েছে। আমার রাগ কিংবা অভিমান যত সস্তা হবে, আমি ততো দুর্বল প্রমাণিত হব। দুর্বলের অভিমান, কোনো মূল্য পায় না।
এরা যে কোনো ক্ষেত্রে বুঝে গিয়েছে, ব্যক্তি বিশেষ না হলে, তাকে ছেড়ে দিতে হয়। যাতে সে তার গোত্রে, তার মতো করে, ভালো থাকে। ছোট কিংবা বড় সংসার, একক কিংবা যৌথ পরিবার, সব কিছুই রঙ্গের মতো, নানান মতের নানান মানুষ। সবাই যার যার পরিবেশে তার রঙ্গে রঞ্জিত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ভিন্ন রংয়ের সংস্পর্শে সকল রং তার ধর্ম ত্যাগ করে, ভিন্ন এক রঙ্গের প্রকাশ দেখায়।
ভালোবাসার মানুষগুলো কষ্ট দেয়ার অধিকার রাখে, ভালোবাসার প্রভাবে। তবে বাক্যের ব্যবহার না জানলে, বোবা হতে হয়। জল না হলে, খরার পাশে যাওয়া অনুচিত। অমানুষের ’অ’ ভালো নয়, নিজের অমানুষিকতা থেকে এটি দূর করতে হবে। অমানুষের ভীড়ে, অন্য সবার মতো আপনাকেও বুঝতে হবে ‘অ’ তে মানুষের মৃত্যু হয়।
প্রাণি তার শাবক থেকেও মায়া তুলে নেয়; পরিস্থিতিি যার নির্ণায়ক। তবে রোদ্দুরের সাথে মেঘের বৈরী সম্পর্ক হতে পারে না। কষ্ট দিলেই কেউ অপ্রিয় হয়ে যায় না; প্রিয় মানুষের অপ্রিয় আচরণের গুরুত্ব দিতে হয়।
বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে, পৃথিবী যদি দরদ রাখে; তবে সমগ্র পৃথিবীই হয়ে যায় বাবা-মা। ছানা হারা পাখি ভুলে তো যায় না; তার চির মহকুমার কিচিরমিচির। অথচ আমরা ভিন্ন, অন্য কোনো ছানার শব্দে বিরক্ত হচ্ছি; সম্পর্কের খণ্ডন করতে বসেছি।
খণ্ডনে প্রেম থেকে ভালোবাসার উপাদানগুলো বিচ্ছিন্ন হতে থাকে।
যেহেতু মানুষ তার পরিবার ভালোবাসে। সেহেতু, মানুষের উচিত অন্য মানুষদেরকেও ভালোবাসা।
নদী, সাগর, পাহার, পর্বত, বাঘ, সিংহ, ময়ুর কেউ সম্মান ততটা বুঝে না। মানুষ সম্মানবোধ পেয়েছে। সম্মানের জন্য প্রতিযোগিতা চলছে-
সম্মান বাড়ার সাথে সাথে; বয়সও যাবে বেড়ে।
যে অর্জনের লাগি, একটিকে ছাড়তে হয়;
সেই একটি ছাড়, অন্য কেউ পাওয়ার জন্য হয়ত অন্য কিছু ছেড়ে আসছে। ছাড়াছাড়ির এই প্রক্রিয়া, সময় খেয়ে ফেলে; তাই মৃত্যুও সব সময় খুব কাছাকাছি থাকে।
স্বর্গের প্রচারকও তার সংসারে ভারসাম্য আনতে ব্যর্থ হতে পারে। কথার প্রচারণা নয়; বরং সক্রেটিক্স, সত্যে প্রতিষ্ঠিত জীবনের নাম।
শয়তানের ভীড়ে, শয়তান নেই;
রয়েছে, শত শত ভদ্র সমাজ।
আড়ালের অন্ধকারে হয়ত ভয় নেই;
রয়েছে যুগ ডিঙ্গানো সহজ কঠিনের সাংসারিক কাজ।
স্রষ্টাকে বিব্রত করা যায় না। আপনি মানেন কিংবা না মানেন তার পরিচয় স্পষ্ট। তিনি সব কিছুর পাশাপাশি ব্যথারও কারিগর, এটির রূপ জানেন। ব্যথা ভারী কিছু নয় বরং সহজভাবে দেখলে, এটি জীবন বোধের অন্যতম একটি অংশ। ব্যথার পরে ব্যথারা জমা হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। বড় ব্যথা যে হৃদয়ে পৌছায়, ছোট আঘাতও সেই একই হৃদয়ে পতিত হয়। হাজার হাজার ব্যাথা জমা হলেও তার প্রকাশক অশ্রু, দুটি চোখের বেশি চোখ ব্যবহার করে না।
যে ছোট ছোট ব্যথার রূপ বিশ্লেষণ করতে পারবে; ধারণ করবে হৃদয়ের উপভোগ্য অংশে: সে বড় বড় ব্যথার রাজ্যেও নিজেকে শক্ত অবস্থানে দেখাতে পারবে। ধনী-গরীব, ধার্মিক-নাস্তিক সকলের ব্যথা ধারণ করতে পারলেই আপনার রাজ্যের পরিসর বাড়তে থাকবে। সংসার সহজ ও সরল হবে।
যদি কখনও জীবন সঙ্গীর সাংসারিক কর্ম পচনশীলে রূপান্তরিত হয়, বয়সের ভার চেপে বসে কর্মে; তবে ছোট ছোট অর্জনেই খুশি হতে হবে। ভালোবাসার স্বরূপে জাগাতে হবে প্রণয়। দেহকে ডিঙ্গিয়ে, মনের কেলিতে খেলতে হবে কাঠিন্যের দরবারে।
স্বভাব দোষে,
কান যদি গীবতের প্রেমে পড়ে যায়; তবে তা সংসারের ভিত্তি ধ্বংশ করতে এসেছে, বুঝতে হবে। প্রিয় জনের ভুল ক্ষমারযোগ্য হবে সব সময়। প্রিয় ভুল করবে; প্রিয় বারে বার প্রিয় হবে। সংসার ভেঙ্গে গেলেও সেই নতুন প্রিয় থেকে শুরু হবে আরেক যাত্রা।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান পেয়ে গেলে যেকোনো শিক্ষার জন্য হৃদয়কে উন্মুখ করতে হবে। শিক্ষাই পথ বের করবে, কীভাবে নিজের অস্তিত্বের সাথে সংসারের মিশ্রণ করা যায়।
চিন্তাভাবনা বহির্ভূত সৌন্দর্য উপভোগে কী আছে? জাস্ট সাময়িক অবৈধ দৃষ্টিপাত। শুধু নারী-পুরুষের রূপই কি দেখার?
স্রষ্টা যা দেখতে দিয়েছেন; তা নিয়ে ভাবলে সংসার সুন্দর হয়।
নিজস্ব মুর্খতায় অহংকার না দেখিয়ে ব্যাকরণ অনুসরণ করুন। কারণ হাজার হাজার প্রতিভার গতিপথকে নির্দিষ্ট একটি সুতোই বাঁধার নাম ই ব্যাকরণ, যা পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিভাকে সহজী করণের জন্য তৈরি করা হয়েছে|
হরেক মানুষের ভীড় এক ভাবে দেখতে চাইলে দুর্যগের অপেক্ষা করুন। সবাই এক পথ দিয়েই দৌড় দিবে।
রূপের জিনিস, চোখের ক্ষুধা; কেউ চায় পাহারা দিতে, কেউ চায় অনুভব করতে। পাহারাদারে জীবন রাখা যায়, তার অনুভবের বিস্তৃতি বেশি। রূপ মোহিত করে; গুণ ভালোবাসায়।
এই সাংসারিক ভালোবাসারও ঘাটতি হয়; দুর্যোগ আসে। তবে বিষক্রিয়া সয়ে গেলে; দু-চোখ তখন মধুর| মৌচাকের মৌ; সংসারের বৌ ভয়ংকরে বাঁধতে পারে ঘাট, জলে পূর্ণ করে মিটাতে পারে সকল তৃষ্ণা মরুর।
আগুনের কাছাকাছি এসে, যে দগ্ধ না হয়েই বেঁচে গেলো, তার বোধে জন্ম নিবে অন্ধকার। শীতল অনুভবে সে আর কভূ প্রজ্বলন দেখবে না; তার বাগানের ছায়ায় রবে ধোঁয়ার রাজত্ব। অসুন্দরেরা সেখানে বনে যাবে ধোকার আলপনা।
তারপরেও
আগুনের উল্কাপিণ্ড হবে পুষ্প, নিবন্ধিত নিষিদ্ধে আপনার এ পাগল পাড়ায়, হয়তো জ্বলন্ত উনুনে প্রেমের দাহন হবে। চমৎকার সে অপরাধে অভিযুক্তরা পুড়তে এসেও ধূসর গোলাপের সৌরভে মুখরিত হবে চিরন্তন।
আলু কামড় দিয়েও কেউ কেউ লবণের স্বাদ খুজে না। ভাতে, তরকারির জন্যও অনেকে আফসোস করে না। সংসার করতে হয়। এখানে আফসোস চলে না।
স্মরণ রাখতে হবে, রক্ত ঝরে না কিছু কিছু মানুষের; অথচ গৃহে তার পঁচে যায় নিজের গায়ের মাংশ। না যায় তা বিক্রি করা; না যায় তারে ভক্ষণ করা। টুকরো টুকরো ব্যথায় তার থমকে দাড়ায় প্রকৃতি। গুঙিয়ে কেঁদে ওঠে মাংস খেকো নগ্নতা। অথচ তখনও কিছু কিছু মানুষ ব্যবসা করে ধর্মের; ব্যবসা করে নাস্তিকতার; ব্যবসা করে লিঙ্গ পঁচা সভ্যতার।
সংসারের এই রঙ্গিন সাদা-কালোতে, এক ঝাক কাক বাসা বানাচ্ছে কোকিলের। সেই কাকদের মতো যুগে যুগে সক্রেটিক্সরা নিজের সংসারের পাশাপাশি অন্যকে নিয়ে ভাবছে।
--------সংসারের সক্রেটিক্স
-------- আব্দুল্লাহ আল- মাহমুদ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৭