ভুল, শিক্ষিত হয়ে গেলে তারে শিক্ষিত ভুল বলে। আর এই ভুল প্রতিটি মানুষই করে। কাছাকাছি এলে এর রূপ স্পষ্ট হয়। সুতরাং যে কোনো ক্ষেত্রেই কাছে এলে, ভুলের সাথে ভুলের দেখা হয়ে যায়। দূরত্ব বাড়ে।
নিজের অহংকারের বিষাক্ত প্রকাশ অনেক সময়ই অনুভূত হয় না; কাছের মানুষগুলো দুঃখ প্রকাশ করলে বিষয়টি অনুভব করা বাধ্যবাধকতা হয়ে যায়।
অনেকে নিজের দুঃখগত ভাবনা থেকে বলে বেড়ায়, টাকার অভাবে সব নষ্ট। টাকার কারণেই নাকি তার কাছের লোকেরা তার থেকে দূরে।
এভাবে গতানুগতিক বচনের ধারা তারা উড়িয়ে বেড়ায় টাকা নামের বঙ্গাল বিনিময় মাধ্যমের উপর দিয়ে।
যা নেই; তাতে কী আছে? জগতের হরেক রকমের শূন্যতা কখনই ভরপুর হবে না। আকাশের চিত্র হয় না; তবুও তা দেখা যায়।
শীতে পুড়ে গেলে আগুনের তাত দিয়ে কী হয়?
টাকার বিনিময়ে সেবা পেলে, অনুভব নিজ থেকে ছিন্ন হয়। এ পৃথিবী পূর্ণতার জন্য নয়। পূর্ণতার পরিপূরক হিসেবে যে বোধ রয়েছে তার জন্য টাকা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রাণির সেবার দরকার হলেও মানুষের চায় আরাম। দিনের উপরের দিন, অভিজ্ঞতার সঞ্চালনে টাকার মাধ্যমে সেবার বিনিময় প্রথা প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ধন-সম্পদ ও টাকার প্রথা বিবেচ্য প্রাণের মতো দু’জন দুজনাকে হারিয়েও পেয়েছে যেন, কোনো অদেখা জনমের জন্য। তারপর হঠাৎ অনানুষ্ঠানিকভাবে মেঘ এলো, বৃষ্টি হলো এরপর থেকেই প্রকৃতি আরও সবুজ হলো; সেই সবুজে মিশে গেল ধনী-গরীব সকল নয়নের জল।
স্বর্গের সুপুরুষের ভীড়ে, হুরেদের বিচরণ যেখানে প্রচার হচ্ছে, সেখানে প্রবেশের প্রবেশ মূল্য কি টাকা দিয়ে হয়?
অভিমানের আমি, মানুষ হয়ে জন্মে, বোকার স্বর্গ গড়তে গিয়ে, টাকাই কি শুধু চিনব?
বিনিময়হীন জীবিকা স্রষ্টাই দেন; যেভাবে তিনি প্রাণ দিয়েছেন।
অন্তরের স্রষ্টা, অন্তরের শূন্যতা জানেন, মস্তিষ্কের যুক্তি দেখেন। তার কাছে অভিনয় করার দরকার নেই।
পৃথিবী নামের এ কলনীতে, নতুনের জন্য পুরাতনের হিংসা ছিল, আছে, থাকবে। এখানে, স্খলনের ভয়; মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই তারা টাকার যুক্তি দিয়ে মানবতাকে গোলামির গোলাম বানাতে নিত্য নতুন অর্থনৈতিক ঘাট বেধে আসছে। অহংকারের বশীভূত হয়ে যারা দেখাতে চায়; যারা অন্যকে পোড়াতে চায় বিপরীত হিংসায়; তাদের নিতম্ব অগ্নির উপরে রাখা আছে। তাদের উচিত তাদের নিজের হিংসা ও অহংকারকে পরিণামের যৌক্তিক সম্ভাবনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা।
টাকা ছিল না যখন; তখনকার বোধ টাকা আসার পরেও যদি থাকে তবে সঞ্চয় সম্ভব। স্রষ্টা টাকা দেন, সুযোগ দেন, সময় দেন আপনার বুদ্ধিদীপ্ত জীবনের ব্যয় হিসেবে। আবার গাফিলতির কারণে কিংবা আপনার পরীক্ষার জন্যও সম্পদ খোয়া যায়। জীবন নামের জমিনের সীমানা নেই;
সুতরাং চাইলেই তাতে বেড়া দেয়া যাবে না। মৃত্যু যখন-তখন।
সুপেয় পানির মতো, টাকা স্বল্প হলেও চলবে। যতটুকু দরকার, ততটুকুতে শরীরের মতো মনের খোরাক মিটে গেলে, আর কী লাগে?
টাকা বেশি হলে, চাহিদা বাড়বে। চাহিদা বাড়লে, দাম বাড়বে। দাম বাড়লে খরচ বাড়বে সঙ্গে সঙ্গে তৃপ্তিতে নিত্য-নতুন ঘাটতির আবির্ভাবও চলবে। মনে, ঘাটতির ভাবনা ভর করলেই সুখ ছুঁই ছুঁই হবে কিন্তু ধরা দিবে না। সমুদ্র জল যতই বেশি হোক তা পানের যোগ্য নয়।
টাকা, সুখ নামের অবস্তুগত অনুভবের ভিত্তি নয়।
সুখ থাকে কান্নায়, প্রিয়ের অভিমানী অশ্রু ভিন্ন নয়নে আনতে হবে।
সুখ থাকে হাসিতে; মা-বাবার খুশির ছন্দতে তা মেলাতে হবে ।
সুখ থাকে শত্রুতে, তার ভালোবাসা অর্জন করলেই হৃদয় বুঝে নিবে।
সুখ থাকে পথের পথিকে, তার শুকরিয়ার ভঙ্গিতে আশ্রয় বিছাতে হবে। সুখ থাকে নারীতে। সুখ থাকে পুরুষে। প্রাণে প্রাণ রেখে বোধের কপোলে চুম্বন আঁকতে পারলে, সুখ আসবেই আসবে।
নিজের সুদৃষ্টি, সুবচন, সুচিন্তন এবং প্রশ্বাসকে ভালোবাসতে পারলে টাকা ছাড়ায় জীবিকার পথ দেখা যাবে।
যিনি দুরারোগে আক্রান্ত তিনি কখনও জমি চান না, টাকা চান না, নারী-কিংবা পুরুষ চান না। যা চান তা হলো সুস্খতা।
কোটি টাকার মানুষের পেটে গ্যাস্ট্রিক হলে, লাখ টাকার টেবলেট খেয়েও অসুস্খ থাকতে পারে। বিপরীতে ভাত না জুটা মানুষটির সহজলভ্য পানিতেই সমাধান থাকতে পারে।
স্রষ্টা যদি না চান, তবে টাকা শুধুই কাগজ। এ কাগজে আশীর্বাদ ছিনিয়ে আনা যায় না। সুতরাং সব ক্ষেত্রে টাকা ন চাকা।
মালিক-শ্রমিক উভয়ই গরীব; তাদের দু’জনেরই অনেক টাকা লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৬