somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হৃদনন্দী"

২২ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভরদুপুরে সময় নির্ণয় করার জন্য আকাশের দিকে তাকালে ঠাঠাপড়া রোদে সূর্যকানা হতে হয়। বৈশাখ মাস, ধান কেটে মাড়াই দিয়ে কৃষকরা আমোদ প্রমোদে মত্ত। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলে প্রতি বছরের মত এবারও যুবক যুবতি ছুটি কাটাবার জন্য গ্রামে এসেছে। দুজনের নানাবাড়ী এক গ্রামে। গ্রাম তাদের জন্য দুঃসাহসিক অভিযানের একদম উত্তম স্থান। অত্যধিক সাহসের প্রবণতা দেখে সবাই তাদেরকে যত্নআত্তি করে। ঠিক দুপুরবেলা পুকুর ঘাটের আমগাছের ডালপাতা নড়তে দেখে সুপিয়া সোঁটা টেনে দৌড়ে যায়। গ্রামের জোয়ানরা জানে ওর নানা এই গাছের আম খুব পছন্দ করেন। সেই কারণে হাজি সাহেবের পুকুর পারের গাছে কেউ ওঠানামা করে না। গাছে পাকা আম দেখে ওরা লোভের মুখে জলপাই গুঁজে মিঠা আমাকে চুকা বলে মনকে প্রবোধ দেয়। তা সুপিয়া জানে তাই সোঁটা টেনে যায়। গাছের ডালে বসা পিরের নাতি গূঢ়তত্ত্ব জানেন না। উনি ডালে বসে বুলবুলির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পিরের নাতি হওয়ার সুবাদে উনি চুরি করেন না। উনার নানা বলেছেন, চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়লে কব্জি কেটে ফেলবেন। সাধু মশাই বুলবুলির অপেক্ষায় অধৈর্য প্রায়। বুবুলিরা তেঁতুল গাছে বসে গুনুগুন করে উনার কাণ্ডকারখানা দেখছিল। সুপিয়া গাছের নিচে যেয়ে ধমক দিলে সাধুমশাই চমকে উঠেন। উনি শহুরে মস্তান হলেও সুপিয়ার ধমকে উনার সাহসের বারোটা বাজে।
"তোর এত সাহস! জেনেশুনে অথবা বুঝেশুঝে পুকুর পারের গাছের আম চুরি করতে এসেছিস। চোরের বৈরী বাটপাড়, আজ তোকে যমের জেলে চালান করব।" বলে সুপিয়া শাড়ির আঁচল কোমরে গোঁজে সোঁটা দিয়ে গুঁতা মারার জন্য প্রস্তুতি নিলে সাধুমশাই বললেন, "দেখো, আমি হলাম দক্ষিণ পাড়ার পির সাহেবের একমাত্র নাতি। আমি তোমার গাছের আম চুরি করে খাইনি। ডালে বসে বুললির জন্য অপেক্ষা করছি।"
"এই সাধুর নাতি চোর, তুই কি জানিস না অপেক্ষাকৃত ভাবে বেশি সংক্রান্ত হলে বিভ্রান্ত হতে হয়। বুলবুলিরা তা জানে তাই এই গাছের আশে পাশে ওরা আসে না। দাঁড়া! আজ তোকে গুঁতিয়ে মারবো।" বলে সুপিয়া সোঁটা উঁচায়। সাধুমশাই দোহাই দিয়ে বললেন, "হৃদনন্দী, দোহাই দিচ্ছি, সোঁটা দিয়ে গুঁতা মারিস না। এবারের মত ক্ষমা করলে, তোর কাছে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমের কিরা খেয়ে নানাকে বলব।"
"তোর মতো কাপুরুষকে আমি বিয়ে করবো? তুই আমাকে কী পেয়েছিস? বুঝেছিস সুন্দর চামড়া দেখে তোর প্রেমে মজে হাটু জলে গোসল করব? দাঁড়া, আজ তোকে সত্যি গুঁতিয়ে মারব।"

এমন সময় পিরসাহেব জোহরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিলেন। সুপিয়ার নানা উনাকে ডাকেন নি তাই দেখতে এসেছেন হাজি সাহেব অসুস্থ কি না। উনাকে দেখে সুপিয়া মাথায় কাপড় দিয়ে সালাম করে সোঁটা নামিয়ে দূরে সরে বললো, "নানাজান হয়তো ফকেরা মালা নিয়ে ব্যস্ত।"
পিরসাহেবকে দেখে সাধুমশাই কেঁদে বললেন, "নানা গো, জল্লাদের নানি আমাকে সোঁটা দিয়ে গুঁতিয়ে মারাতে চায়।"
"তাহির, আম গাছে তুই কী করছিস? নেমে আয়। আর মারবে না। আমি তোকে বলেছিলাম চুরি করলে কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলব।"
গাছ থেকে নামতে নামতে তাহির বললো, “আমি আম চুরি করিনি। এই গাছের আম খাওয়ার জন্য ওরা আমাকে উসকিয়েছিল, বলেছিল এই গাছের আম বুলবুলিরাও খায় না। সত্যাসত্য জানার জন্য দুপুরবেলা উঠেছিলাম। বুলবুলিরা আসেনি কিন্তু ঝকড়া হাতে হৃদনন্দী সত্যি এসেছে।"
"আম খাসনি তো?"
"না গো নানা, আমে হাত দেইনি। আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যান নইলে এই ভূতের তাবিজ আমাকে ভূত বানিয়ে কবচে ভরে ডালে বাঁধবে।" বলে তাহির পিরসাহেবের পিছনে লুকিয়ে টুকি দেয়।
"এটা তো ভূতের বৈরী। তার হাউমাউ শুনে আমার পোষ্য ভূতরা এবার গ্রাম ছাড়বে।" বলে সুপিয়া মুখ বিকৃত করে চলে গেলে পিরসাহেব চোখ কপালে তুলে বললেন, "তোর মা বলেছিল তুই মস্ত মস্তান হয়েছিস। তোর আতঙ্কে টোলার লোকজন আতঙ্কিত। সুপিয়ার কোঁদায় তুই কাঁদতে শুরু করেছিস। ছি ছি, তোর লজ্জা হয়নি? এক হুংকারে দুঃসাহসিক অভিযানের বারোটা বাজিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডকারখানা মাহীকে বলতে হবে।”

পিরসাহেব যখন তাহিরের সাথে কথা বলেন সুপিয়া তখন ডেকে বললো, "নানাজানা, হুজুর আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন এবং উনার বিলাতি নাতি আমগাছ জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে।"
নানা দ্রুত বেরিয়ে বললেন, "উনার কোনো বিলাতি নাতি নেই।"
"একটা আছে, পুকুর পারে গেলে স্বচক্ষে দেখতে পারবেন।"
"তোর যন্ত্রণায় যে কী করি? বৈশাখ মাসে তোর ভয়ে জোয়ান বুড়ো বাড়ির ধারে পাশে আসে না। যাক, আজ বাড়ি এত নীরব কেন, মা’র সাথে তোর নানি চলে গিয়েছি নাকি? রান্না কে করবে, খাব কী, তুই তো ভাত রাঁধতে পারিস না।”
"নামাজ পড়ে আসুন। তারপর দেখব কী কী খেতে পারেন, এবার আমি রাঁধাবাড়া শিখে এসেছি।"
“বুঝেছি, এখন আর তোকে বিয়ে দিতে পারব না, বিয়ে করাতে হবে।"
"নানাজান, চাষিরা হালচাষ করে, বিয়ে বসে না। কাপুরুষকে আমি বিয়ে করব না।"
"আচ্ছা ঠিকাছে। এখন রান্না ঘরে যা, তোর ভয়ে কাজের ঝি আসেনি।"
"না আসার জন্য আমি ওকে বলেছিলাম।"
"কী?"
"নির্ভয়ে মসজিদে যান। আমি মারামারি করি না।”

[ ] উনি চলে গেলে সুপিয়া ভিতরে যেয়ে অজু করে নামাজ পড়ে মেঝেতে চাদর বিছিয়ে ভাত তরকারি সাজায়, এমন সময় মনের কানে হৃদনন্দী প্রতিধ্বনিত হলে নিম্নকণ্ঠে কয়েকবার হৃদনন্দী জপে অভিধান খুলে তন্ময় হয়। [ ]

নানা ডেকে বললেন, "সুপিয়া, ভাত দে।"
নানার দিকে তাকিয়ে সুপিয়া বললো, "হৃদয় এবং নন্দিনী শব্দদ্বয়ের মিলন সংক্ষেপ হৃদনন্দী হয় না।"
"কানে সমস্যা হচ্ছে, কিচ্ছু বুঝিনি।"
"মিনমিনে আমাকে হৃদনন্দী ডেকেছিল। নন্দী নন্দিনীর চেয়ে অর্থের দিক দিয়ে অনেক গরীয়ান। নন্দী, ভক্তির ক্ষমতা রাখে।"
নানা বিরক্ত হয়ে বললেন, "নিশ্চয় ভূতের ভয়ের য় এবং নী উহ্য করেছিল। এখন ভাত দে, পেটে ঝাঁগুড়গুড় শব্দ হচ্ছে।"
"খাবার সাজিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।"
"থাল আরো দুইখান আন।"
"শুধু আমরা খাব। আরো দুইখান দিয়ে কী করবেন?"
"হুজুরের সাথে উনার নাতি আসবে।"
"ভূতের ভায়রা, তওবা তওবা।"
"তুই ভেবেছিলে মাহী, তাই না? তোর ভয়ে ভণ্ডামি ছেড়ে সে এখন সাধক হয়েছে। যাক, থাল এনে দিয়ে হৃদনন্দীর অর্থ খুঁজে বার কর।" বলে নানা হাত দিয়ে ইশারা করেন। সুপিয়া থাল এনে দিয়ে পাকঘরে যেয়ে বিড়বিড় করে…
"ও কেন আমাকে হৃদনন্দী ডাকলো? দয়িতাকে হৃদনন্দী ডাকা যায়। আমি কারো প্রেমিকা হতে চাই না। আমাকে বিরক্ত করার জন্য ভূতের ভায়রা গ্রামে এসেছে। বাগে পেলে তাকে আমি বানরের মত নাচাব। দাগাবাজি করে বাঁকা নাকওয়ালা হয়েছে পাজি, দাগাদারি করে কুটনি হয়েছে কলঙ্কসৃষ্টিকারী।”

এমন সময় পাকঘরের পাশ দিয়ে তাহির হেঁটে যায়। তাকে দেখে সুপিয়া ঝাড়ু হাতে বেরিয়ে বললো, "এই দেখ আমার হাতে ঝাড়ু। ভূত ঝাড়ার জন্য বানিয়েছি। কলঙ্কের ঢোল পিটাবার জন্য কসবায় এসেছিস। দাঁড়া, আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।"
তাহির দৌড়ে পালায় এবং নানা বেরিয়ে বললেন, "তোর যন্ত্রণায় যে কী করি। তুই আসলে বুলবুলিরাও আনাগোনা বন্ধ করে।"
"ওরা ওকে চেতিয়েছিল তা আমি জানি, কিন্তু তার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি নেই? লেখাপড়া করেও জানতে পারেনি মাথায় যে মগজ থাকে। বেআক্কেলের বন্ধু, বুদ্ধির খনির সন্ধান আজো পায়ানি।"
"তুই কোন কলেজে পড়িস?"
"নানাজান, ভূতের ভক্তরা আমার নামের তাবিজ ডরায়। ওরা জানে, ঝাড়ফুঁক শুরু করলে শহর গরম হয়। নাতনি কার দেখতে হবে তো।"
"ওরে বাসরে! তুই কবে মহিলা সন্ত্রাসী হলে?"
"নানাজান, ইতররা শয়তানের বেগার। পিরিতির মারিফতি ওরা জানে না। যে বেগার খাটে তার সাথে সংসার করব কেমনে?"

-সমাপ্ত -

© Mohammed Abdulhaque
author and publisher
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:২৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×