যাকে আমি ভূতের্রাজা ডাকি সে আমার চাচাতো ভাই এবং বোনাই। আমাদের বাসার পাশে কবরস্থান আছে। কবরস্থান এবং শ্মশানে নাকি ভূত থাকে। শ্মশানের কথা আমি জানি না তবে কবরে যে ভূতের নামগন্ধ নেই তা আমি ভালোভাবে জানি। জানার কারণ, দিন অথবা রাত দুপুরে কবরের আশে পাশে হেঁটেছিলাম। তবে একবার এক ভূতের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তা সেই ছাওয়াল কালে। আমার অভিজ্ঞতার কথা বললে সে হেসে কুটিকুটি হয়েছিল। সেই থেকে আমি তাকে ভূতেরর্রাজা ডাকি। যাক, এখন গল্পের মূলে আসলে ভালো হবে। তো একদিন কী হয়েছিল ছুটির দিন কলম হাতে ব্যস্ত হলে আমার স্ত্রী বিরক্ত হয়ে কুটুমিতা করার জন্য কুটুমবাড়ি গিয়েছিল। কিছু করার না পেয়ে আমি ভূতের গল্প লেখার অপচেষ্টা করছিলাম। আমাকে দৈনিক কয়েক মাইল হাঁটতে হয়। ঘিয়ে ভাজা খাবার আমার জন্য হারাম। আমার রক্তে নাকি বেশি তেল হয়েছে। তেলমাত্রা বেশি হলে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি। তেলের মাত্রা যত বেশি হয় দুঃস্বপ্ন তত ভয়াবহ হয়। হাঁটাহাঁটি করে রাত হলে বোনের ঘরে গিয়েছিলাম। আমাকে সমাদর করার জন্য বোন এবং বোনাই মিলে ঘিভাত এবং কোর্মা পোলাও বানিয়েছিল। খাবার খেয়ে বাসায় ফিরে কিছু করার না পেয়ে আরাম করে বিছনায় বসে ল্যাপটপে লিখছিলাম। গরমের রাত ছিল। জানালা খুলতে চেয়ে ভয়ে খুলিনি। খোদা না খাস্তা যদি ভূত-টূত ঢুকে পড়ে তখন বিষম বিপদ পোহাতে হবে। তো যাক, আমি গল্পের পট নিয়ে ধেয়ানচিন্তা করছিলাম। খুব গরম পড়েছিল। বিথিবাতির আলোয় কামরা আলোকিত ছিল এবং ল্যাপটপের আলোয় লেখা দেখতে পারছিলাম দেখে কামরার বাতি নিবিয়েছিলাম। লেখায় নিবিষ্ট হলে চাচাতো ভাই আমার পাশে বসে বললো, ‘ভাইসাব, কী করছেন?’
‘নতুন গল্প লেখার চেষ্টা করছি। তোর খবর কী?’
‘আমার খবর ভালো। আপনাকে দেখার জন্য এসেছি। কিছু খেয়েছেন?’
‘এই একটু আগে আমরা একসাথে খেয়েছি। তুই কখন আসলে?’
‘এই তো আসলাম। দেখি কী গল্প লিখছেন। গল্পের নাম কী?’
‘ভূতেরর্রাজা। তোকে নায়ক বানিয়ে গল্প লেখার চেষ্টা করছি। তুই তো ভূতের গল্প পছন্দ করিস।’
‘নামটা দেখি। এ্যাঁ! এসব কী লিখেছেন? বানান ভূল করেছেন। রেফ দিয়েছেন কেন? দেখতে খুব বিশ্রি লাগছে। জলদি বদলান।’
‘মায়। বিশ্রী লাগবে কেন?’
‘ভূতের রাজা আলাদা লিখতে হবে। নইলে সমস্যা হবে। রেফ টেফ সরালে ভালো হবে।’
‘বেশি পণ্ডিতি করিস না। আমার মন যেমন চায় তেমন গল্পের নাম লিখব। তুই তো জানিস আমার মাথা গরম হলে হাত বেশি চলে। পড়তে চাইলে কথা না বলে পড় নইলে চলে যা।’
‘ঠিকাছে আমি চলে যাব, তবে যাওয়ার আগে রেফ সরাতে হবে।’
‘আমি সরাব না। আমি যেমন লিখেছি তেমন পড়তে হবে। তোর ভালো না লাগলে তুই পড়িস না। আমার লেখা এমনিতে কেউ পড়ে না।’
এমন সময় মোবাইল বাজে।
‘ভাইসাব কি শুয়ে পড়েছেন?’
‘ভাইসাব ডাকবে পরে। তুই তো আমার বগলে তাইলে ফোন করেছিস কেন?’
‘মায়! আমি তো বাসায়। আপনি কী করছেন জানার জন্য ফোন করেছি।’
‘তাইলে আমার বগলে ওটা কেটা?’
সমাপ্ত
© Mohammed Abdulhaque
author and publisher
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৫১