সময়ের প্রিয় কবি সরকার মুহাম্মদ জারিফের কবিতা। আমার ভীষণ ভীষণ প্রিয় কবিতা। কবি তার ফেইসবুক নোটে কবিতাখানা দিয়ে নোটের শেষে লিখে রেখেছে এই কবিতার শেষ হয় নি। কবিতা আরও বাক্য খাবে। আপাতত যতটুকু শেষ হয়েছে ততটুকু সংগ্রহে রাখলাম।
চালধোয়া পানির মত
গ্রামীণ গন্ধের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে -
অপূর্ণ সন্ধ্যায় মুখোমুখি হয়েছিলে আমার ।
রাতের মত , শীতের রাতের মত
সে তুমি এক বিপর্যস্ত নেশা ।
ইতিহাস থেমে গেছে তোমায় উদার পটভূমি ভেবে ,
কুয়াশাবিভোর শহর শীতের রাতেও খুব ঘেমেছে ,
বাষ্পকে তুমি পুণর্জন্ম দিয়েছ ,
অনামিকা তুলে পুনর্জন্ম দিয়েছ
পৃথিবীচ্যুত খেয়ালিকাকে ।
দেবী আমার ,
এক সন্ধ্যায় জরাজীর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটিকে
সাজিয়েছ আকাশগ্রন্থিতে ,
নির্বিকার হয়ে সোডিয়াম বাতিকে করেছ সন্ধ্যাপ্রদীপ ।
আমার পূর্ণ পূর্ণ অপূর্ণতা পরিপূর্ণ হচ্ছে ,
তুমি বেজে উঠছ পিয়ানোর রীডে ,
পৃথিবীর ব্যাকগ্রাউন্ডে রবিশংকরের সেতারে ,
চৌরাসিয়া ,লুদভিকো একে একে পেরিয়ে
স্যট্রিয়ানি অথবা গিলমারের গিটারে ...
দেবী তুমি অনিয়ন্ত্রিত অনবদ্য এক ইন্সট্রুমেন্টাল ।
সান্ধ্যকালীন সূর্যকে গোলাপী আভা করে
নখের উপরে আশ্রয় দিয়েছ ,
অপ্রকাশিত চুমু জলজ অনুভূতির মত ; যেন
উল্লসিত খোলা চুলকে চিন্তা করে -
মাটিতে ইনকাম ট্যাক্সের দাবি হয়ে
মিশে গেছে ।
প্রতিটি শতাব্দী জুড়ে ,
উড়ে বেরিয়েছ পৃথিবীর কল্পনায় ,
ধরা দিয়েছ রাজপথে হেঁটে আসা
আমার মত কারো চুপচাপ দীর্ঘশ্বাসে ।
এরপর মমতার বিরাম চিহ্ন বসিয়েছ ।
তোমার একেকটি আঙুল একেকটি শতাব্দী ,
গভীর প্রতীজ্ঞার কসম -
আমার বুকে থেমে আছে জমজমাট আলোকবর্ষ ।
আমার দিকে তাকাও -
আমি খসে যাওয়া ইলেকট্রনের আকুতি ,
গৃহস্থালী দুর্দশায় আক্রান্ত গবাদি পশুর অবাধ্যতা ,
পরাবৈদ্যুতিক বিভ্রমে খুঁজে বেড়াচ্ছি বিশ্রাম ,
পর্ন ম্যাগাজিনের জোড়া লেগে যাওয়া দুটি পৃষ্টার মধ্যবর্তী
আটকে পড়া প্রাচীন বীর্যের -
জাগতিক নিষ্ফলতার অত্যুক্তি ছাপিয়ে
কেঁপে উঠছি
আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি , দেবী ।
আংটির নাম করে যে অলংকার তোমার আঙুলে জড়িয়ে থাকবে আজীবন;
আমিও যৌথ হব তার সাথে ,
আঙুলে তোমার রক্তপ্রবাহে মিশিয়ে দেব
ব্রক্ষ্মাণ্ডের দুঃখগাঁথা ।
আমার দেবী , আমার কল্পনা , আমার হাইপারস্পেস।
তোমার চারিপাশ মুখরিত অজস্র খরগোশের নিনিটিক হাসিতে ,
ভাল্লুক হয়ে আমি এসেছি
এসেছি কিছু অভিজ্ঞ অন্ধকার নিয়ে ,
নিখুঁতভাবে সমর্পণ করেছি নিজেকে
দুঃখী দুঃখী চিরসুখী ফরম্যাটে ।
আমার সমস্ত আকাশ ফটোকপি করে রেখেছ ;
আমি যেন আটকে গেছি দেবী ।
আমি আটকে গেছি নিশ্চিত
অনিশ্চয়তায় ।
ফিটফাট , মার্জিত সন্ধ্যার শরীরে
মুহূর্তের খেয়ালে ছিটিয়ে দিলে উন্মাদ ঘূর্ণিঝড় ,
ঝড় শেষে আমি তবুও ক্ষতিই চাই ,
ক্ষতিপূরণ চাই না দেবী ।
খিলখিল খিচুরীর সকালে উপস্থিত -
আমার প্রতি কাপ চায়ে তোমার চুমুক মিশে থাকে ;
যতটুক ছিল থতমত অভিমান তোমার, হয়ে যায় অভিভূত ,
রাতঘুম শেষে আমার ভালবাসা পিপাসার্ত ট্রেনের মত ।
সফেদ সুফিদের চুল দাড়ি থেকে নিয়ে আসো অলৌলিক স্যূরিলিয়াজম ,
অচল নোটকে সচল করে পাঠিয়ে দাও স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ,
নীলক্ষেত , ফুলার রোড , চানখাঁরপুলের শীতরাতগুলো
তুমি ভরিয়ে দাও কিছু হাস্নাহেনার গন্ধে ।
খামখেয়ালী এ শহরের কাছে পাঠানো খামে চিঠির বদলে-
তুমি পুরে দিয়েছ তোমার খেয়াল ।
প্রিয় খাবার ভেবে ঘড়ি খেয়ে নিচ্ছে সময় ,
বিকেল খাচ্ছে দুপুর , বাক্যে খাচ্ছে অক্ষর ,
উচ্চতার পিঠে প্রস্থ , বৃত্তের কাছে ব্যাস ,
কল্পনা কিছু গ্যাস
হয়ে ছিল আমার শরীরে ।
ঐযে তুমি দাড়িয়ে আছ আমার অস্থির হার্টবিট নিয়ে ,
বর্তমানকেই বিরতিহীন ইতিহাসে গেঁথে
অনির্বাণ করেছ সময়কে ।
লুডুর গুটির মত সহজভাবে বঙ্গোপসাগর
নেমে এসেছে তোমার শরীর ছুঁয়ে ,
স্রোতের গায়ে সূর্যের বদলে তোমার গন্ধ ছিল ।
হলুদ রঙের ট্রাক দেখলেই নেশা লাগে চোখে ,
জংধরা অসভ্যতায় ঝাঁপ দিতে মন চায় ,
আমার মনে পড়ে যায় -
রাস্তা জিনিসটা আমি কোনকালেই ভালভাবে বুঝতে পারিনি ।
আমি মঙ্গাপীড়িত ,শীতার্ত বা বন্যার্ত কেউই না ,
ওসব হতেও চাই না নতুন করে ।
আমি গভীর চুমুগ্রস্ত কেউ হতে চাই ,
দেবী শুনতে পাচ্ছ ?
সহযোগিতার হাত চাই না, সহযোগিতার ঠোঁট চাই।
ফিরে তাকাও দেবী !
নির্বোধ আমিও এখন উন্মাদ চরমপন্থী ,
আর কতবার দেখব অসহ্য নৈঃশব্দ্যের দিগ্বিদিক জলাঞ্জলী ?
অন্ধ উষ্ণতায় ছারখার হবে স্বর্ণগর্ভ ফসলের ক্ষেত ,
বেপরোয়া প্রেমিকের মত আগুন চাই ।
তাবৎ অসুস্থতা দিয়ে -
আমাকে সুস্থ কর
আমাকে সুস্থ কর !
অথবা
নিরুত্তাপ কণ্ঠে মৃত্যুর আদেশ দাও ;
এক্ষুণি এনে দাও বীভৎস দুঃসময় ,
আমাকে ধ্বংস কর ,
আমার শেষ হোক তবে ,
আমাকে ছুঁড়ে ফেল আস্তাকুঁড়ে .
দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না ,
দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না ,
দেবী তোমাকে ছোঁয়া যায় না ,
তবুও নিজের ভেতর লালন করি স্পর্শের শাশ্বত সৎসাহস ।