প্রেম
মনে থাকবে না !
এই আলো, এ বিকেল, এই বেচা-কেনা,
এই কাজ-প্রেম, রাঙা জীবনের দেনা
এ নিবিড় পৃথিবীর, নিজেদের হঠাৎ এ চেনা
মনে থাকবে না।
তবু কিছু থাকবে কোথাও,
এই আলো এই ছায়া যখন উধাও
বিকেলের উপকূলে বিকেলের শ্বাস ফেলে চুপচাপ ঝাঊ
আলো-লাগা, ভালো-লাগা মন-নেই তা-ও
তখনো হয়তো কিছু থাকবে কোথাও।
তখনো থাকবে ছবি তোমার আমার।
দেখবে পারো না একা হৃদয়ে তাকাতে তুমি আর,
যতোবার
তাকাবে দেখবে যেন আরো কেউ আছে তাকাবার,
অপলক চোখ যেন কার
তোমার চোখের পাশে – হয়ত আমার।
নীলিমাকে
রাত্রিতে জেগে ওঠে যে সাগর
অন্ধকারের সাগর-
তুমি তাতে স্নান করে এসো, নীলিমা,
তোমার চোখ হোক আরো নীল,
চুল হোক ধূসর ফুলের মঞ্জরির মতো।
আর যদি রাত্রিকে বিদীর্ণ করে ওঠে চাঁদ
তোমার আঁচলে লেপে থাকে যেন সিক্ত জ্যোৎস্না
তোমার বুকে পাই যেন জ্যোৎস্নার গন্ধ;
বলতে পারো, সে জ্যোৎস্না কি নীল হবে নীলিমা,
নীল পাখির পালকের মতো?
জানি, তুমি আমায় ডাকবে-
(নীল বন কি কথা কয়ে উঠলো-
আর মেঘের গায়ে গায়ে নেমে এলো স্বপ্নরা?)
আমার চোখ নরম হয়ে আসবে ঘুমে, নীলিমা,
তোমাকে নয়, তোমার স্বপ্নকে পেয়ে।
কবি পরিচিতি
সঞ্জয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশে ততটা জনপ্রিয় কবি নন। অন্তত আমি তাকে চিনেছি অতি সম্প্রতি। হুমায়ুন আজাদ সম্পাদিত "আধুনিক বাংলা কবিতা" গ্রন্থের মাধ্যমে।
সঞ্জয় ভট্টাচার্যের জন্ম কুমিল্লা জেলার শ্যামগ্রামে, ১৯০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন ১৯৩০ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন ১৯৪৪ সালে। তিনি কুমিল্লা শহর থেকে প্রকাশিত "পুর্বাশা" পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হল: ‘সাগর ও অন্যান্য কবিতা’ (১৯৩৭), ‘পৃথিবী’ (১৩৪৬), ‘সংকলিতা’ (১৯৪২), ‘নতুন দিন’ (১৯৪৭), ‘প্রাচীন প্রাচী’ (১৯৪৮), ‘যৌবনোত্তর’ (১৯৪৮), ‘অপ্রেম ও প্রেম’ (১৩৫৯), ‘পদাবলী’ (১৩৬০) ইত্যাদি। তার কবিতায় কখনো কখনো জিবনানন্দের ছাপ খুঁজে পাওয়া যায়।
কবি লোকান্তরিত হন ১৯৬৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ তার জন্ম তারিখ ও মৃত্যু তারিখ একই !
তার সমসাময়িক কবিদের মতো তাকেও কম সমালচনা সহ্য করতে হয়নি। এই সম্পর্কে তিনি বলেন- ‘আমার একটা দুর্নাম আছে প্রথম থেকেই আমি দুর্বোধ্য, আমি মোটেও প্রাঞ্জল নই, আমায় বোঝা যায় না। এটা হচ্ছে যারা আমার প্রতি, যাকে বলে আক্রমণাত্মক, তাদের কথা। আর যারা বন্ধু হয়ে আমাকে বিপন্ন করেছে, তারা বলেছে যে, ওসব ইনটেলেকচুয়াল লেখা। ফলে আমার একেবারে পাঠক নেই। এবং আমার সাহিত্য সম্বন্ধে আমার শেষ কথাটা আমি বলে নিই। আমার শেষ কথা এই : হয় আমি সাহিত্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, না-হয় বাঙলা দেশের পাঠক এবং সমালোচকেরা সাহিত্য বিষয়ে নেহাত নির্বোধ। এই সিদ্ধান্তে আমি উপনীত হয়েছি, আমার ষাট বছর বয়সে। আর এক ছত্রও লিখতে ইচ্ছে করে না আমার।’
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৫